খুলনার দাকোপে সরকার নির্ধারিত মূল্যের অতিরিক্ত দামে ইউরিয়াসহ বিভিন্ন সার বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। পাইকারি ডিলার ও খুচরা বিক্রেতারা বিভিন্ন হাট-বাজারে এ অতিরিক্ত দামে সার বিক্রি করছেন। এতে কৃষি কাজ চরম ভাবে ব্যাহত হচ্ছে। ফলে এলাকার হাজারো তরমুজ চাষি পড়েছেন চরম বিপাকে।
উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর ও এলাকাবাসি সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় বিসিআইসির মোট ১০ জন ও বিএডিসির ৪ জন মূল সারের ডিলার রয়েছে। এছাড়া ৮৫ জন খুচরা সার বিক্রেতা রয়েছে। সরকার প্রতি কেজি ইউরিয়া সারের মূল্য ২৭ টাকা, টিএসপি ২৭টাকা, এমওপি ২০ টাকা, ডিএপি ২১ টাকা নির্ধারণ করেছে। এ উপজেলায় মোট চাষ যোগ্য জমি রয়েছে ২০ হাজার ৮৮৩ হেক্টর।
এপর্যন্ত তরমুজ চাষ হয়েছে ৫ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে। এছাড়া বোরো ধান ২৯৩ হেক্টর, সূর্য্যমুখি ৩৫ ভূট্টা ২২ হেক্টর, বাঙি ৪৫ হেক্টর, গম ২ হেক্টর। ফলে এলাকার হাজারো কৃষকের সারের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। কৃষকদের এই চাহিদাকে পুজিঁ করে সরকারি ওই নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে রীতিমত সার বানিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন ডিলাররা।
জানা গেছে, উপজেলার চালনা, বাজুয়া, পোদ্দারগঞ্জ বাজার, কালিনগর, নলিয়ান বাজারসহ প্রত্যান্ত অঞ্চলের ছোট বাজারগুলোতেও সরকার নির্ধারিত ওই মূল্যের চেয়ে অতিরিক্ত দামে বিক্রি করছেন ডিলার ও খুচরা বিক্রেতারা। সরকারী মূল্য তালিকা ঝুঁলানোর কথা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। আর কৃষকরাও বাধ্য হচ্ছেন অতিরিক্ত দামে সার কিনতে।
চুনকুড়ি এলাকার সাবেক ইউপি সদস্য কৃষক জীবনানন্দ মন্ডলসহ আরও অনেকে জানান, এবছর উপজেলা কৃষি অধিদপ্তরের তত্পরতার কারণে কৃষক ঠকানো অবৈধ ভেজাল বীজ ব্যবসায়ীরা সুবিধা নিতে পারেনি। কিন্তু সরকার নির্ধারিত মূল্যের অনেক বেশি দামে বিভিন্ন সার বিক্রি হওয়ায় কৃষকরা চরম বিপাকে পড়েছেন। সারের দোকানে গেলে প্রথমে বলে সার নেই। সারের সংকট চলছে। পরে প্রতি কেজিতে সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে ৩ থেকে ৪ টাকা বেশি দাম নিয়ে সার দেয়। সত্য কথা বলতে বর্তমানে কৃষিতে ফসল উত্পাদন বেশ চ্যালেঞ্জ হয়ে পড়েছে।
তারা জানান, কৃষককে বিভিন্ন ভাবে ঠকানো হচ্ছে। যেমন ভেজাল বীজ, ভেজাল কীটনাষক, ভেজাল সারে বাজার সয়লাব। আর বিশেষ প্রয়োজনে অনেক বেশি দাম দিয়ে সার কিনতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। কৃষকদের সাথে সার ব্যবসায়িরা লুকোচুরি খেলা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে তারা অনেকেই মন্তব্য করেন। এতে কৃষি কাজ চরম ভাবে ব্যাহত হচ্ছে। কৃষি ও কৃষকের স্বার্থে কৃষির উত্পাদন বাড়াতে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।
সাহেবের আবাদ এলাকার ইউপি সদস্য কৃষক বিশ্বজিত রায় বলেন, পোদ্দারগঞ্জ বাজারের এক সার ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ভেজাল জৈব সার কিনে ব্যবহার করায় ৮/১০ জন কৃষকের তরমুজ গাছ মারা গেছে। পরে তারা ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের আবার নতুন করে সার বীজ দিয়েছে।
জয়নগর এলাকার হাফিজুর রহমান হাফিজ জানান, ফসল উত্পাদন মৌসুমে ডিলার ও খুচরা বিক্রেতারা প্রথমে কৌশলে সার মজুদ রেখে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে। পরে এলাকার অধিকাংশ কৃষি নির্ভরশীল কৃষক ফসল উত্পাদন প্রয়োজনে উক্ত প্রতিষ্ঠান থেকে বাধ্য হয় চড়া দামে সার বীজ কিনতে। এতে এলাকার হাজারো কৃষক আর্থিক ভাবে অনেক ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। কৃষক বাচানোর স্বার্থে এবং কৃষকরা যাতে নায্য মূল্যে সার বীজ পায় সে জন্য তিনি সম্প্রতি প্রতিকার চেয়ে একটি লিখিত অভিযোগও করেছেন বলে জানান।
এবিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম বলেন, তরমুজ চাষের শুরুতেই ভেজাল বীজ কিনে প্রতারিত ও অতিরিক্ত দামে সার না কিনতে এবং কোন ডিলার বা খুচরা বিক্রেতা সারের সরকার নির্ধারিত মূল্যের বেশি দাম নিলে আমাদের জানাতে বলা হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন সারের দোকানে নিয়মিত মনিটরিং চলছে। সঠিক তথ্য প্রমান পেলে ওই সার ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।