উত্তরবঙ্গের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) কৌলিতত্ব ও উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. মো. আরিফুজ্জামান ও তার দল উচ্চ ফলনশীল ও অধিক পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ চেরী টমেটোর নতুন দুটি জাতের উদ্ভাবন করেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা মাঠে উদ্ভাবিত এই চেরী টমেটোর জাতের প্রতিটি গাছে পাঁচশটিরও অধিক ফল পাওয়া যাচ্ছে এবং হেক্টর প্রতি ১৮০ টন পর্যন্ত ফলন পাওয়ার আশা করছেন গবেষকরা। টমেটো গাছ যেখানে ৩ থেকে ৪ মাস বেঁচে থাকে সেখানে উদ্ভাবিত এই চেরী টমেটোর জাতের গাছগুলো সঠিক পরিচর্যায় ৫ থেকে ৬ মাস বেঁচে থাকে এবং ফল দেয়।
অধ্যাপক ড. আরিফুজ্জামান চেরী টমেটোর উদ্ভাবিত এই জাত সম্পর্কে বলেন, উচ্চ খাদ্যমান সম্পন্ন এবং উচ্চ ফলনশীল চেরী টমেটোর একটি গবেষণা ২০১৮ সাল থেকে চলমান আছে। এই গবেষণায় আমরা বিদেশ থেকে কয়েকটি লাইন নিয়ে এসেছিলাম, পরবর্তীতে সেই লাইনগুলোর মধ্য থেকে অভিযোজন ও নির্বাচন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আমরা কিছু ভালো লাইনকে আলাদা করতে পেরেছি।
যেটি চেক ভ্যারাইটি বিইউ চেরী টমেটো-২, বিইউ চেরী টমেটো-৫ এর সাথে তুলনা করে আমরা দেখতে পাই যে, উচ্চ এন্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ এবং উচ্চ ফলনশীল এইচএসটিইউ চেরী-১ এবং এইচএসটিইউ চেরী-২ নামক নতুন এই জাত দুটি ভালো ফলন দিচ্ছে।
একই বিভাগের আরেকজন সহকারী অধ্যাপক সোহানা জুঁই বলেন, এন্টি অক্সিডেন্ট ও উচ্চ ফলনশীল চেরী টমেটোর জাত উন্নয়নে দেখা গেছে যে, ১২টি লাইনের মধ্যে ২টি ক্রোমোজম লাইন পাওয়া গেছ। যে লাইন দুটির এন্টি অক্সিডেন্ট চেক ভ্যারাইটির থেকে অনেক বেশি উচ্চমানের যেটি লাইন-১৩ এবং লাইন ১৪।
আমরা যদি এটিকে ভ্যারাইটি হিসেবে বাজারে ছেড়ে দিতে পারি তাহলে অদূর ভবিষ্যতে যদি কৃষকরা এটিকে মাঠ পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারে তাহলে এগুলোর গুণগতমান ও পরিমাণ বৃদ্ধির কারণে কৃষকরাও উপকৃত হবে।
গবেষণাদলের এক শিক্ষার্থী উদ্ভাবিত চেরী টমেটোর এই জাত দুটি নিয়ে বলেন, ৫০টি লাইন থেকে নির্বাচন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আমরা ১২টি লাইনকে নির্বাচন করতে পেরেছি। আমরা দেখেছি উত্তরাঞ্চলের যে আবহাওয়া সেই আবহাওয়ায় বাংলাদেশের যে চেরী টমেটোগুলো পাওয়া যায় এবং আমাদের স্যার যে চেরী টমেটো উদ্ভাবন করেছেন তার থেকে অনেক ভালো ফলাফল দিচ্ছে। আর উদ্ভাবিত এই চেরী টমেটোগুলোর মধ্যে ১ গ্রাম টমেটোতে ৭২ মাইক্রোগ্রাম লাইকোপেন পাওয়া গেছে।
তিনি আরও বলেন, বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের মানুষের যেসব স্বাস্হ্য ঝুঁকি দেখা যাচ্ছে তার মধ্য হার্টের সমস্যা এবং স্থুলতা অন্যতম। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে আমরা যেসব সবজি খেয়ে থাকি তার মধ্যে টমেটো অন্যতম। আর এই টমেটোর মাঝে আমরা যে লাইকোপেন পেয়ে থাকি এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি এন্টি অক্সিডেন্ট। আর এই এন্টি অক্সিডেন্ট হার্টের সমস্যাগুলো এবং স্থুলতা কমাতে সাহায্য করে। সুতরাং স্যারের উদ্ভাবিত এই চেরী টমেটোর জাতে লাইকোপেন বেশি থাকায় এটি হার্টের সমস্যা এবং স্থুলতা সমস্যায় আগের থেকে আরও বেশি সহায়তা করবে।
উদ্ভাবিত এই চেরী টমেটোর গবেষণা মাঠ পরিদর্শন করে নতুন উচ্চ ফলনশীল জাতের জন্য আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন জেলা বীজ প্রত্যয়ন অফিসার ও বিশ্ববিদ্যালয় ইনস্টিটিউট অফ রিসার্চ এন্ড ট্রেনিং।
আশাবাদ ব্যক্ত করে জেলা বীজ প্রত্যয়ন অফিসার মো. মন্জু আলম সরকার বলেন, এন্টি অক্সিডেন্ট রিচ এবং হাই ইয়েলডিং চেরী টমেটোর যে গবেষণা প্লট এটি দেখে আমি অভিভূত কারণ বাংলাদেশের কৃষকের যে চাহিদা সেটি এই টমেটো অনেকটাই পূরণ করবে। যার ফলে বিদেশ থেকে চেরী টমেটোর যে আমদানি আমরা করতাম তা আর করতে হবে না। তাছাড়া এই চেরী টমেটো ৫ মাসব্যাপী ফলন দেবে। যার ফলে শীতকাল ছাড়াও গ্রীষ্মকালেও এই টমেটো বাজারে পাওয়া যাবে এবং ভোক্তাদের চাহিদা পূরণ করবে।
একই সাথে আশাবাদ ব্যক্ত করে ইনস্টিটিউট অফ রিসার্চ এন্ড ট্রেনিংয়ের (আইআরটি) সহকারী পরিচালক অধ্যাপক ড. সুলতান মাহমুদ বলেন, এই জাতটি উচ্চ ফলনশীল ও উচ্চ এন্টি অক্সিডেন্ট সম্পন্ন হওয়ায় মাঠ পর্যায়ে এটিকে ছড়িয়ে দিতে পারলে কৃষকরা উপকৃত হবে। সেই সাথে দেশের জনগণ উচ্চ এন্টি অক্সিডেন্ট সম্পন্ন চেরী টমেটো পাবে, যা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় এবং দেশের জন্য খুব ভালো একটি গবেষণা।
উল্লেখ্য, দেশের ক্রমবর্ধমান পুষ্টি চাহিদা মেটাতে আগামী বছরেই বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে চেরী টমেটোর নতুন দুটি জাত কৃষকদের উপহার দিতে চায় গবেষকরা।
বিবিএন/২২ মার্চ/এসডি