ভরা ফাগুন। বাগানে বাগানে গাছ ভরে উঠেছে আমের মুকুলে। মুকুলের মাতাল করা মৌ মৌ গন্ধে মুখরিত চারপাশ। কিছু মুকুল নাকফুলের মতো আকার ধারণ করেছে। আবার দু’একটি আকার পেয়েছে মটরদানার মতো। এমন অবস্থায় হঠাৎ বৃষ্টিতে রাজশাহীর আম চাষিদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। তারা গাছভরা আমের মুকুলের ক্ষতির আশঙ্কা করছেন।
গত শনিবার রাজশাহী মহানগরের কিছু এলাকা, পুঠিয়া, চারঘাট ও বাঘা উপজেলায় বৃষ্টি হয়েছে। ছিল ধুলিঝড়। বাঘায় তো বৃষ্টির সঙ্গে শিলাও পড়েছে। আর রোববার ভোররাতে বৃষ্টি হয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জে। রোববার সকালে বৃষ্টি হয়েছে নওগাঁর বিভিন্ন এলাকায়। এই তিন জেলাতেই সবচেয়ে বেশি আম উৎপাদন হয়। হঠাৎ বৃষ্টিতে উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছেন আম চাষিরা।
রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আড়পাড়া গ্রামের আমচাষি আনোয়ার হোসেন পলাশ রোববার সকাল থেকেই লোকজন নিয়ে তার বাগানে ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে শুরু করেছেন। আনোয়ার হোসেন বলেন, গাছে প্রচুর মুকুল এসেছে। এতদিন ভালই ছিল। হঠাৎ গতকাল দুপুরে প্রায় এক ঘণ্টা ধরে শিলাবৃষ্টি হলো। সেইসঙ্গে ছিল বাতাস। এখন তো চিন্তায় পড়ে গেলাম।
তিনি বলেন, এখনও মুকুল ফুটন্ত অবস্থায়। অল্প কিছু গুটি ধরেছে। যেগুলোর গুটি হয়েছে, সেগুলোর ক্ষতি হবে না। কিন্তু বৃষ্টির কারণে ফুটন্ত মুকুলের ক্ষতি হবে। অনেক মুকুল ঝরে যাবে। একদিনেই মাটিতে প্রচুর পড়ে থাকা মুকুল দেখা যাচ্ছে। এখন গাছে থাকা মুকুলে ছত্রাকের আক্রমণ হবে, কীটপতঙ্গ বাড়বে। রেহাই পেতে ছত্রাকনাশক স্প্রে শুরু করেছি।
রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শফিকুল ইসলাম বলেন, বৃষ্টির সাথে সাথে চাষিরা ছত্রাকনাশক স্প্রে করা শুরু করেছেন। কিন্তু মুকুল ফুটন্ত অবস্থায় থাকলে এখন স্প্রে করে লাভ হবে না। যা ক্ষতি হওয়ার হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে ফলন একটু কমতে পারে। তবে যে গাছে এখনও মুকুল পুরোপুরি ফোটেনি, সেগুলোর কোনো ক্ষতি হবে না।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জের আমচাষি ইসমাইল খান জানান, রোববার ভোররাতে তাদের এলাকায় কিছুক্ষণ বৃষ্টি হয়েছে। বেশিরভাগ মুকুল ফুটন্ত অবস্থায় থাকায় তারা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। তবে যেসব মুকুল গুটি হয়ে গেছে সেগুলোর কোনো ক্ষতি হবে না, বরং লাভ হবে।
নওগাঁর পত্নীতলার আমচাষি দেলোয়ার হোসেন জানান, রোববার বেলা ১১টার দিকে তাদের এলাকায় টিপটিপে বৃষ্টি হয়েছে। এখন অতিরিক্ত রোদ হলে মুকুল নষ্ট হয়ে যাবে। তবে এখনকার মতো ঠাণ্ডা আবহাওয়া থাকলে ক্ষতি তেমন হবে না বলে তিনি মনে করছেন।
রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের পর্যবেক্ষক লতিফা হেলেন জানান, শনিবার দুপুরে তারা নগরের চৌদ্দপাই এলাকায় ৪ দশমিক ৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছেন। দুপুর ২টা ৪০ মিনিট থেকে ৩টা পর্যন্ত এই বৃষ্টি হয়েছে। তখন বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১২ নটিক্যাল মাইল। রোববার মহানগরে বৃষ্টি হয়নি। আগের দিন শিলাবৃষ্টির কথাও তারা জানেন না।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের রাজশাহী বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক ড. আজিজুর রহমান জানান, রাজশাহী, নওগাঁ, নাটোর ও নওগাঁয় গড়ে ৭০ শতাংশ গাছে মুকুল ফুটে গেছে। তবে ক্ষতির তেমন আশঙ্কা করছেন না তিনি। ড. আজিজুর রহমান বলেন, খুব জোরে বৃষ্টি হয়নি। ফোটা ফোটা বৃষ্টি হয়েছে। এমন নমিন্যাল বৃষ্টিতে ক্ষতির আশঙ্কা নেই। এবার আমের অন ইয়ার। তাই ফলন ভাল হবে। এ রকম অল্প বৃষ্টিতে ফলনও খুব একটা কমবে না।
গত মৌসুমে রাজশাহীর চার জেলায় ৯৩ হাজার ২২৪ হেক্টর জমিতে আমবাগান ছিল। আমের উৎপাদন হয়েছিল ১০ লাখ ২৮ হাজার ৮৪৫ মেট্রিক টন। অফ ইয়ার ছিল বলে গত মৌসুমে আমের ফলন ছিল কম। এবার কোনো লক্ষ্যমাত্রা না থাকলেও আমের অন-ইয়ার বলে উৎপাদন গত মৌসুমের চেয়েও বেশি হবে বলে আশা করছেন কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা।