সোমবার, মার্চ ১৭, ২০২৫
Logo
Bumper yield of wheat

রাজশাহীতে লক্ষমাত্রা ছাড়িয়ে এবার গমের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা

Bijoy Bangla

রাজশাহী প্রতিনিধি

প্রকাশের সময়: ০৫ মার্চ, ২০২৫, ০৮:৪৩পিএম

রাজশাহীতে লক্ষমাত্রা ছাড়িয়ে এবার গমের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা
পবার মাঠ জুড়ে গমের সবুজ পাতার সমারোহ, বাম্পার ফলনের আশা

ইউসুফ চৌধুুরী-রাজশাহী: রবি শস্যের মধ্যে অন্যতম একটি লাভজনক আবাদ হচ্ছে গম। জেলা ও উপজেলার মাঠ জুড়ে গমের সবুজ রঙের পাতার সমারোহে চিকচিক করছে ফসলের মাঠ। মাঠ জুড়ে বাতাসে দুলছে কৃষকের রঙিন স্বপ্ন। আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির ব্যবহার ও অনুকূল আবহাওয়ায় এই অঞ্চলে স্বল্প খরচে যথাসময়ে উচ্চ ফলনশীল গমের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। 

সরোজমিনে বিভিন্ন মাঠ ঘুরে দেখা যায়, মাঠ জুড়ে শোভা পাচ্ছে গমের সমারোহ। অল্প কিছুদিনের মধ্যে গমে পাক ধরতে শুরু করবে। জলবায়ুর পরিবর্তনের সাথে গমেরও নতুন জাত উদ্ভাবন হয়েছে। গম চাষে পানি কম লাগে এবং শ্রমিক খরচ কম এবং লাভ বেশি হয়। কৃষকরা আশা করছেন বাজারে দাম ভাল থাকলে আগামীতে গমের চাষ আরো বৃদ্ধি পাবে। 

আঞ্চলিক কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় কৃষকেরা গমের ভালো ফলন পাচ্ছেন। এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি গম উৎপাদন হবে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ। খরচ কম হওয়ায় গম চাষাবাদেও আগ্রহী হচ্ছেন তাঁরা। গত বছরের তুলনায় এবার ১ হাজার ২৫ হেক্টর জমিতে গম চাষাবাদ বেশি হয়েছে। গত বছর রাজশাহী অঞ্চলে গমের আবাদ হয়েছিল ৯২ হাজার ৮৪২ হেক্টর জমিতে এবং উৎপাদন হয়েছিল ৩ লাখ ৮৮ হাজার ২৬৮ মেট্রিকটন। এ বছর আবাদ হয়েছে ৯৩ হাজার ৮৬৭ হেক্টর জমিতে এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৯৫ হাজার ৩৪৮ মেট্রিকটন। সেই দিক বিবেচনায় এবার গমের আবাদ বৃদ্ধি পেয়েছে ১ হাজার ২৫ হেক্টর জমিতে। জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে সাথে গমের নতুন নতুন জাত উদ্ভাবন হয়েছে। গম চাষে খরচ কম। অল্প খরচে অধিক লাভবান হওয়ার আশায় কৃষকদের গম চাষে আগ্রহ বাড়ছে।

পবা উপজেলার পুকুরিয়ার গম চাষি রফিকুল ইসলাম জানান, তিনি উপজেলা কৃষি অফিসের দেওয়া উন্নত জাতের গম বীজ ও সার বিনামূল্যে পেয়েছিলেন। এখন পর্যন্ত তাদের গম অনেক সুন্দর রয়েছে। আবহাওয়া ভাল থাকলে প্রতি বিঘা জমিতে ১৫ থেকে ২০ মণ পর্যন্ত গমের ফলন আশা করছেন তিনি।


পবা উপজেলার বড়গাছী ইউনিয়নের কৃষক শরিফুল আলম বলেন, ‘এ বছর ১৫ বিঘা জমিতে গম চাষাবাদ করেছেন। উপজেলা কৃষি বিভাগের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা বিভিন্ন সময়ে আমাকে পরামর্শ দিয়েছেন। বিঘা প্রতি ১৫ মণ গম উৎপাদনের আশাবাদ ব্যক্ত করেন।’

পবা উপজেলার পাকুড়িয়ার এলাকার গম চাষি ছানাউল্লাহ, লাল মোহাম্মদ, মারুফ, শুকুর মোহাম্মদ, চান মিয়া, রফিকুুল ইসলাম ও জসিম উদ্দিন বলেন, ‘উন্নত জাতের গম বারী-৩৩ চাষ করেছেন। পাঁচ বিঘা জমিতে গম চাষ করেছেন। প্রতি বিঘা জমিতে সাড়ে ৮ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। ধারণা করছি, গমের ফলন ভালো হবে এবং বাজারে গম বিক্রি করে বেশি দাম পাওয়া যাবে। গম আবাদের জমিতে ইঁদুর দমনসহ, জাব পোকা, ব্লাস্ট রোগ দমনে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা নানা পরামর্শ প্রদান করছেন।’ 

এবিষয়ে রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক উম্মে ছালমা জানান, ‘রবি ফসলের মধ্যে গম একটি লাভজনক আবাদ। কৃষকদের গম চাষে আগ্রহী করতে তালিকাভুক্ত চাষিদের ব্লাস্ট রোগ প্রতিরোধী ও উচ্চফলনশীল উন্নত জাতের গম বীজ ও সার বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে। গম চাষ করতে কৃষকদের নানাভাবে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় গমের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’

পবা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ ফারজানা তাসনিম জানান, ‘এবছর উপজেলায় ২ হাজার ১৫ হেক্টর জমিতে গমের চাষ হয়েছে। শেষ পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে গমের ভালো উৎপাদন হবে। কৃষকদের গম চাষের আগ্রহী করে তোলার লক্ষ্যে কৃষি প্রণোদনার আওতায় পবা উপজেলার ১ হাজার ৮০০ কৃষককে গমের বীজ ও সার বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে। এতে উপজেলায় গম চাষের লক্ষ্যমাত্রা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। মাঠপর্যায়ে উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকদের সার্বক্ষণিক পরামর্শ, পরিচর্যার বিষয়ে প্রত্যক্ষ কারিগরি সহযোগিতা ও দিকনির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় আশা করছি গমের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে।’