সোমবার, মার্চ ১৭, ২০২৫
Logo
EFT

ইএফটি জটিলতায় বেতন পেতে শিক্ষকদের ভোগান্তি

Bijoy Bangla

অনলাইন ডেস্ক :

প্রকাশের সময়: ০৬ মার্চ, ২০২৫, ১২:২৯পিএম

ইএফটি জটিলতায় বেতন পেতে শিক্ষকদের ভোগান্তি
.....সংগৃহীত ছবি

আইবাস ডাবল প্লাস সফটওয়্যারে ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফারে (ইএফটি) জটিলতার কারণে মার্চ মাসে এসে জানুয়ারির বেতন পেয়েছেন দেশের ২০ হাজারের বেশি স্কুল-কলেজের ৩ লাখ ৮০ হাজার এমপিওভুক্ত শিক্ষক ও কর্মচারী। গতকাল বুধবার থেকে শিক্ষকরা মেসেজ পাওয়া শুরু করেছেন। গত এক মাসের বেশি সময় ধরে বেতনের অপেক্ষায় থাকা শিক্ষকরা আর্থিক সংকটে পড়েন। বাংলাদেশ বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী ফোরামের নেতারা বলেন, রোজার মাস চলছে। এ অবস্থায় সামান্য বেতন পাওয়া শিক্ষকরা কষ্টে দিন পার করেছেন। শিক্ষক-কর্মচারীদের দুর্বিষহ অবস্থা ছিল। অথচ কথা দেওয়া হয়েছিল, আইবাস ডাবল প্লাস সফটওয়্যারে ইলেকট্রনিকস ফান্ড ট্রান্সফারের (ইএফটি) মাধ্যমে শিক্ষক-কর্মচারীরা প্রত্যেক মাসের শুরুতেই বেতন-ভাতা পাবেন।

এদিকে শিক্ষকদের বেতন না পাওয়ার কষ্টের মাঝে নতুন আতঙ্ক হিসেবে হাজির হয়েছে ইএফটি তথ্য সংশোধন। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)-এর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভুলে সার্ভারে উঠেছে ভুল তথ্য, আবার তা সংশোধনে বিলম্বের কারণও মাউশির গাফিলতি। অনেক ক্ষেত্রে শিক্ষকরা সঠিক তথ্য দিলেও মাউশির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তা সার্ভারে তুলতে গিয়ে ভুল করেছেন। এ কারণে ইএফটির তথ্যের সঙ্গে এমপিওর তথ্য, এনআইডির তথ্য এবং ব্যাংকের তথ্যে গরমিল দেখা দিয়েছে।

এদিকে গত ১২ ফেব্রুয়ারি মাউশি থেকে পাঠানো এক চিঠিতে বলা হয়েছিল, ইএফটির তথ্য সংশোধনের আবেদন করা যাবে ৬ মার্চের মধ্যে। সে হিসাবে আবেদনের সময়সীমা আজ শেষ হচ্ছে। অথচ গতকাল পর্যন্ত শিক্ষকরা জানতেই পারেননি কোথায় ভুল হয়েছে। কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ড্যাশবোর্ডে কোনো তথ্য পাঠায়নি মাউশি। অথচ বলা হয়েছিল ৬ মার্চের মধ্যে ইএফটি তথ্য সংশোধন না করলে, শিক্ষকদের ইএফটি বাতিল হবে।

চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদায় আব্দুল ওদুদ শাহ ডিগ্রি কলেজের ইসলামের ইতিহাস বিভাগের একজন শিক্ষক বলেন, আমি ডিগ্রির তৃতীয় এমপিওভুক্ত শিক্ষক। ইএফটিতে আমার কোথায় ভুল হয়েছে এখনো জানতে পারিনি। তাহলে কীভাবে সংশোধনের আবেদন করব?

সারা দেশে শিক্ষকদের এমন অবস্থার মধ্যে গতকাল ইএফটিতে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের মৌলিক তথ্য সংশোধনের সময় বাড়ানো হয়েছে দুই সপ্তাহ। স্কুলের ক্ষেত্রে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানরা ২০ মার্চের মধ্যে তথ্য অনলাইনে আপলোড ও হার্ডকপি জমা দিতে পারবেন। আর এই তথ্য ৩০ মার্চের মধ্যে উপজেলা বা থানা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও জেলা থেকে ১০ এপ্রিলের মধ্যে করতে হবে। আঞ্চলিক পরিচালক অফিস থেকে ২০ এপ্রিলের মধ্যে আর মাউশি অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট শাখা থেকে ২৭ এপ্রিলের মধ্যে অনুমোদন করতে হবে। অন্যদিকে কলেজের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠান প্রধান আবেদন করতে পারবেন ২০ মার্চের মধ্যে। আঞ্চলিক পরিচালক থেকে এই তথ্য ২০ এপ্রিলের মধ্যে আর মাউশি অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট শাখা অনুমোদন দেবে ২৭ এপ্রিলের মধ্যে। গতকাল  মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের এক চিঠিতে এ তথ্য জানা গেছে।

মাউশি সূত্রে জানা গেছে, এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের মধ্যে অনেকের এমপিওর তথ্য, এনআইডির তথ্য এবং ব্যাংকের তথ্যের মিল নেই। এছাড়া এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীর মধ্যে অনেকের এমপিও শিটের নামের সঙ্গে এনআইডির নামের ডট (.), হাইফেন (-), কমা (,) বা আক্ষরিক অমিল আছে অথবা ব্যাংক হিসাবের নাম আংশিক ভুল আছে, কিংবা জন্মতারিখ অভিন্ন।   

সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার বা ইএফটির মাধ্যমে বেতন-ভাতা পান। তবে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা সরকারি কোষাগার থেকে ছাড় হলেও তা রাষ্ট্রায়ত্ত আটটি ব্যাংকের মাধ্যমে ‘অ্যানালগ’ পদ্ধতিতে দেওয়া হতো। তবে এই টাকা পেতে শিক্ষকদের নানা ভোগান্তিতে পড়তে হতো। অনেক সময় পরের মাসের ১০ তারিখের পরও আগের মাসের বেতন-ভাতা পেতেন শিক্ষকরা। শিক্ষকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে গত ৫ অক্টোবর বিশ্ব শিক্ষক দিবসে ইএফটিতে বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা দেওয়ার ঘোষণা দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

প্রাথমিকভাবে বেসরকারি এমপিওভুক্ত স্কুল-কলেজের ২০৯ জন শিক্ষক-কর্মচারীর অক্টোবর মাসের এমপিও ইএফটিতে ছাড় হয়। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে বেসরকারি স্কুল ও কলেজে কর্মরত ২ লাখ ৮৯ হাজার এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীর বেতন-ভাতার সরকারি অংশ বা এমপিও ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার সিস্টেমে (ইএফটি) ছাড় শুরু করে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর। দ্বিতীয় ধাপে ৬৭ হাজার, তৃতীয় ধাপে ৮৪ হাজার এবং চতুর্থ ধাপে ৮ হাজার ২০০-এর বেশি শিক্ষক-কর্মচারী ইএফটিতে ডিসেম্বর মাসের বেতন পেয়েছেন।

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের এডুকেশন ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম বা ইএমআইএস সেলের একটি সূত্র জানিয়েছে, পঞ্চম ধাপে ৮ হাজার ৮৮৭ জন ইএফটির মাধ্যমে বেতন পাবেন। তাদের তালিকা ইতিমধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আইবাস সফটওয়্যারে আপলোড হয়েছে। এখান থেকে তথ্য যাচাই শেষে তালিকা মাউশিতে জমা হবে। মাউশিতে তথ্য আসার পর এই শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন ছাড়ের অনুমতি চেয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হবে। প্রস্তাব অনুমোদনের পর তা চিফ অ্যাকাউন্টস অফিসারের কার্যালয়ে যাবে। এরপর শিক্ষক-কর্মচারীরা বেতন-ভাতা ব্যাংক থেকে তুলতে পারবেন।

দ্রুত বেতন না ছাড়লে শিক্ষাভবন ঘেরাওয়ের হুঁশিয়ারি :ফেব্রুয়ারির বকেয়া বেতন দ্রুত ছাড় দেওয়ার দাবিতে এক সপ্তাহের আলটিমেটাম দিয়েছে এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা। অন্যথায় শিক্ষা ভবন ঘেরাওয়ের হুঁশিয়ারি দেন তারা। বুধবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনের সড়কে বাংলাদেশ বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী ফোরামের ব্যানারে এক মানববন্ধনে এ হুঁশিয়ারি দেন তারা। এ সময় বক্তারা বলেন, বেতন না পেয়ে মাউশি অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণাধীন এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা মানবেতর জীবন যাপন করছে। তাই দ্রুত বেতন ছাড় দিতে হবে, একই সঙ্গে শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অপসারণ করতে হবে।

বাংলাদেশ বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী ফোরাম (বাবেশিকফো) কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ মো. মাইন উদ্দিন বলেন, আজ বৃহস্পতিবারের মধ্যে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত বেতন ছাড়করণ সম্পন্ন করতে হবে। নতুবা শিক্ষক-কর্মচারীরা পরিবার পরিজন নিয়ে রাজপথে অবস্থান করবে।

বিবিএন / ৬ মার্চ / অচ