সাঁওতাল আদিবাসী জনগোষ্ঠীর ১৭০ তম সশ্রস্ত্র বিপ্লব দিবস ৩০ জুন সোমবার। নানা আয়োজনে এই দিন টি ভারতের সাঁওতাল আদিবাসী অঞ্চল ও বাংলাদেশে পালিত হবে। তখন ভারত বর্ষের ক্ষমতায় ব্রিটিশ সরকার। একদিকে তাদের অমানুষিক স্বার্থবাদিতার শাসন আরেকদিকে জমিদার সুদখোর মানুষরুপিদের নানা নির্যাতনে এ জনগোষ্ঠির অবস্থা সংকটজনক হয়ে উঠে এর প্রতিবাদে সাঁওতাল আদিবাসীদের আন্দোলন তীব্র হতে থাকে। ব্রিটিশ সরকার তাদের দমনে পাড়া মহল্লাই বাড়িঘড়ে আগুন দিয়ে হত্যাযঞ্জ চালাতে থাকে।
১৮৮৮ সালে ৩০ জুন সাঁওতাল আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বিপ্লবী নেতা সিধু মরমু, তার ভাই কানু মরমু ভারতবর্ষের ঝাড়খণ্ড রাজ্যের দুমকা জেলার ভোগনাদিঘী গ্রামের সমাবেশে সশ্রস্ত্র বিপ্লবের ডাক দেন। শুরুহয়ে যায় বিপ্লবী সংগ্রাম তাদের সাথে যুক্ত হন তাদের ভাই চাঁদ মরমু, ভৈরব মরমু, বোন ফুলোমণি মরমু,জারকা মরমু। ব্রিটিশ সরকার পরাজিত হয়ে নির্যাতনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। সিধু মরমু ও কানু মরমুকে ফাঁসি দিয়ে তার ভাই বোনদের নির্যাতন করে হত্যা করে কিন্তু আন্দোলন থেমে যায়নি। এপার বাংলাতে চলতে থাকে আন্দোলন। ১৯৫০ সালে তৎকালিন পূর্ব পাকিস্তানের রাজশাহী জেলার চাঁপাইনবাবগঞ্জ মহকুমার রাণীহাটি গ্রামের জমিদার পরিবারে বৌমা ইলামিত্র ও তার স্বামী রমেন্দ্র মিত্র পারিবারিক পরিচয়ত্যাগ করে সাঁওতাল আদিবাসীদের আন্দোলনকে এগিয়ে নিতে ভূমিকা রাখেন। আন্দোলন দমন করতে পাকিস্তান সরকারের প্রশাসন ব্রিটিশ সরকারের মতন কার্যকলাপ চালিয়ে সাঁওতাল আদিবাসি পল্লিতে আগুন দিয়ে নির্যাতন চালাতে থাকে তারা ইলামিত্র রবিন্দ্র মিত্রকে ধরার জন্য অভিযান চালালে তারা আত্মগোপন করেন অনেকে সীমান্ত পার হয়ে যান।
এক পর্যায়ে সাঁওতাল আদিবাসী জনগোষ্ঠীর রাণীমা ইলামিত্র চাঁপাইনবাবগঞ্জ মহকুমার নাচোল রেলওয়ে স্টেশনে ধরা পড়ে পাশবিক নির্যাতনের শিকার হন যা শুনলে মন শরীর শিহরিত হয়ে উঠে। ইলামিত্রকে গ্রেফতার করে রাজশাহী জেলা সদরে কারাগারে বন্দি রাখা হয়। তার পর পক্ষে আইনি লড়ায়ে ভুমিকা নেন প্রখ্যাত আইনজীবী নরেন মুন্সি, বিরেন্দ্রনাথ সরকার (১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের প্রাককালে শহিদ) প্রমুখ।
ইলামিত্রকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও অন্যদের বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি দেয়া হয়। পরে উচ্চ আদালত ইলামিত্রের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের মেয়াদ কমিয়ে ১০ বছর করে।১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট সরকারের প্রধান মন্ত্রী শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক ঘটনাটি অবগত হয়ে মেডিকেল রির্পোটের বর্ণনায় তখন-ই ইলামিত্র কে বিদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন।প্যারোলে মুক্তি পেলে ইলামিত্রকে সীমান্তের ওপারে কলকাতায় পাঠিয়ে দেয়া হয়। সুস্থ হয়ে তিনি শিক্ষকতা, লেখালিখি, রাজনীতির সাথে যুক্ত হন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। অভিযোগ নানা আন্দোলন সহ মহান মুক্তিযুদ্ধে সাঁওতাল আদিবাসী জনগোষ্ঠী অংশ নিলেও তাদের সেভাবে মূল্যায়ন করা হয় না। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে এ জনগোষ্ঠীর অনেকের পরিবর্তন এসেছে। অনেকে নানা ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। কিন্তু তারা ভূলে যাননি তাদের বিপ্লবী নেতা সিধু-কানু তার দুই ভাই, দুই বোন, তাদের রাণী মা, ইলামিত্র, রমেন্দ্র মিত্র সহ অন্যান্যদের অবদান।
ভারত বাংলাদেশের সাঁওতাল আদিবাসী জনগোষ্ঠী ৩০ জুন তাদের অধিকার আদায়ের সশত্র বিপ্লব দিবস পালন করে থাকে। অনেকের কাছে এই দিনটি সিধু-কানু দিবস।
বাংলাদেশের জাতীয় আদিবাসি পরিষদ ও বিভিন্ন সংগঠন এই দিনে সাঁওতাল আদিবাসী জনগোষ্ঠীর ১৭০ তম সশ্রস্ত্র বিপ্লব দিবস পালন করবে।
সূত্র : ভাষা সৈনিক, সিনিয়র সাংবাদিক সাইদ উদ্দীন আহমেদ, জাতীয় আদিবাসি পরিষদের সভাপতি গণেষ মার্ণ্ডি, সাধারণ সম্পাদক বিমল চন্দ্র রাজওয়ার।
লেখক : তথ্য সংগ্রাহক, সমাজ ও সাংস্কৃতিক কর্মী, রাজশাহী