সোমবার, মার্চ ১৭, ২০২৫
Logo
Waliur Rahman Babu

পথ যেন হয় শান্তির মৃত্যুর নয়

Bijoy Bangla

ওয়ালিউর রহমান বাবু, রাজশাহী

প্রকাশের সময়: ৩০ নভেম্বর, ২০২৪, ০৭:১২পিএম


১ ডিসেম্বর নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) এর ৩১ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী একত্রিশ বছর ধরে এই সংগঠন সড়ক দূর্ঘটনা রোধ, দূর্ঘটনার হার কমিয়ে আনতে সচেতনতা সৃষ্টিতে নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছে।

সড়কের বিশৃঙ্খলার জন্য প্রতিদিন ঘটছে ছোট বড় নানা দূর্ঘটনা। এর কারণ অসেচতনতা, নিয়ম না মানার প্রবণতা, অনিহা । এর জন্য এককভাবে কেউ দায়ী নয় দায়ী আমরা সকলে।বেশ কয়েক বছর আগে দেশের উত্তরাঞ্চলে একটি সিনেমার সুটিং শেষে ঢাকায় ফিরে যাওয়ার সময় চিত্র পরিচালক আলমগীর কবির,নায়িকা টিনা পাবনার নগর বাড়ি ঘাটে সড়ক দূর্ঘটনায় নিহত হন। নিরাপদ সড়কের দাবি উঠরে আমরা ফিল্ম ভয়েজ (চলচিত্র আন্দোলন) এর পক্ষ্য থেকে ‘দূরন্ত’ চলচ্চিত্রের পরিচালক খান আক্তার হোসেনের নেতৃত্বে এই দাবির সাথে একাত্ততা প্রকাশ করি। কিন্তু দাবিটি জোরদার হয়নি। এর পরেও সাড়া দেশে বহুজন সড়ক দূর্ঘটনায় নিহত হন। আমরা বেশ কয়েক জন প্রখ্যাত ব্যাক্তিদ্বয়কে সড়ক দূর্ঘটনায় হারায়। সরকার ও সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ সারা দেশের সড়ক দূর্ঘটনা নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণে চিন্তা ভাবনা করলেও কোন ব্যবস্থা গ্রহন করতে পারে নি।

১৯৯৩ সালে ২২ অক্টোবর চট্টোগ্রামে একটি সড়ক দূর্ঘটনায় জননন্দিত চিত্র নায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনের স্ত্রী জাহানারা কাঞ্চন নিহত হলে বিষয় টি আলোচিত হয়ে উঠে । সুভাকাংঙ্খীরা সড়ক দূর্ঘটনা রোধে ইলিয়াস কাঞ্চন কে ভূমিকা রাখার প্রস্তাব দিলে তিনি তাদের কাছ থেকে সময় নিয়ে গুরুত্বের সাথে চিন্তা ভাবনা করে এই সামাজিক আন্দোলন কে প্রাধান্য দিয়ে তাদের প্রস্তাবটি গ্রহণ করে তার কষ্টকে শক্তিকে রুপ দিয়ে সচেতনতা মূলক এই সামজিক আন্দোলনকে বেগবান করতে ১ ডিসেম্বর ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ সংগঠন গঠন করে চট্টোগ্রাম থেকে শুরু করেন প্রচার, জন সংযোগ, মত বিনিময়। সারা দেশে এই আন্দোলন সার্বজনীন আন্দোলনে রূপ নিতে থাকে। মনে পড়ে ঢাকা থেকে ড্যানি রাজ রাজশাহী তে এসে সাংবাদিক সাইদুর রহমানের সাথে এই ব্যাপারে কথা বলেন। তিনি, সিনিয়র সাংবাদিক আহমেদ সফিউদ্দিন,সাইদূর রহমান রফিক আলম এরকম অনেকে সকলকে ঐক্য বদ্ধ করতে ভূমিকা রাখেন। ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ (নিসচা) এর প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন রাজশাহী জেলা সদরে এসে মাদ্রাসা মাঠে বক্তব্য দেন। সেদিন ছিল শুক্রবার। র‌্যালি শেষে তিনি প্রেসক্লাবে উপস্থিত সকলের সাথে মতবিনিময় করেন। এতই জনসমাগম হয় মনে হচ্ছিল ভবন টি ভেঙ্গে পড়বে। সেদিনের কর্মসূচি টি সফল ভাবে সকলের দৃষ্টি কেড়ে নেয়। রাজশাহী তে শুরু হয়ে যায় নিরাপদ সড়কের দাবিতে সচেতনতা মুলক সামাজিক আন্দোলন। সেই সময় এই আন্দোলনে যারা নেতৃত্ব দেন পরবর্তিতে তারা নানা কারনে ভূমিকা রাখতে না পারলে ও নতুন নেতৃত্বের সাথে সমপৃক্ততা রেখে সহযোগিতা করেন। ব্যক্তি পর্যায়ে এবং বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সহযোগিতায় এই আন্দোলন বিস্তার হওয়ার সময় ২০১৮ সালে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট স্কুলের দুই শিক্ষার্থী সড়ক দূঘটনায় নিহত হলে নিরাপদ সড়ক আন্দোলন তীব্র হয় রাজশাহীতে ও চলতে থাকে এ আন্দোলন। সরকার সড়ক আইন বাস্তবায়নে সকল সেক্টরের প্রতিনিধিদের সাথে আলাপ আলেচনার পর সকলের সিদ্ধানেÍ একটি আইন করেন। কিন্তু সেটি অনুমোদন দেবার মহুর্তে সরকার একটি মহলের কাছে জিম্মি হয়ে যায়। আইনটির অনুমোদনে জটিলতার সৃষ্টি হয়। সড়ক নিরাপত্তা আইন তাদের কারনে হয়ে যায় সড়ক পরিবহন আইন । কিন্তু সর্ব মহল থেকে দাবি উঠে সড়ক নিরাপত্তা আইনের বাস্তবায়ন । সড়ক দূর্ঘটনার হার ক্রমে বেড়ে যাচ্ছে বিভিন্ন সংস্থার জরিপে দূর্ঘটনার হার একেক রকম হলেও দূর্ঘটনার হার বেশ বেশি । সচেতনতা সৃষ্টির সরকারি আয়োজন গুলিতে সচেতনতা কথাটি র‌্যালি সেমিনারের মধ্যে সিমাবদ্ধ থাকে, সাধারন মানুষের সাথে এর কোন সম্পৃক্ততা থাকে না। ফলে এনিয়ে সাধারন মানুষের চিন্তা ভাবনা বা দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হয়না। সাধারন মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য নিরাপদ সড়ক চাই ৩১ বছর ধরে কাজ করে যাচ্ছে। 

দূর্ঘটনা বলে কয়ে আসে না তবে এ হার কমিয়ে আনতে সচেতনতার বিকল্প নেই। সচেতনতা সৃষ্টি তে যারা ভূমিকা রাখছেন তারা নিস্বার্থ ভাবে তা করে যাচ্ছেন।কিন্তু অনেক সময় তারা অপদস্ত হন সহযোগিতার বদলে পান তাচ্ছিল্যতা। শিক্ষার্থ ীদের আগষ্ট আন্দোলনের পর যখন ট্রাফিক ব্যবস্থা অচল হয়ে পড়ে তখন নিরাপদ সড়ক চাই এর নের্তীবৃন্দ কর্মীবৃন্দ শিক্ষার্থী, তরুণ, যুবক, যুবা এবং অন্যদের সাথে নিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন যা সকলের কাছে গ্রহণ যোগ্যতা পেয়েছে।

এবারের জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবসের প্রতিপাদ্য ছিল ‘ছাত্র জনতার অঙ্গিকার নিরাপদ সড়ক হোক সবার’। নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের পেক্ষাপট ও ইতিহাস কে গুরুত্ব দিয়ে এ ধারণাকে ধারণ করে দৃষ্টি ভঙ্গির পরিবর্তন আনতে হবে। একটি দূর্ঘটনা শুধু আক্রান্ত কারো জন্য দূঃখ কষ্টের নয় তা তার পরিবারের জন্য ও দূঃখ কষ্টের। তাই নিজ নিজ অবস্থান সীমা বদ্ধতার মধ্য থেকে যতটা সম্ভব সামাজিক দায়বদ্ধতা নিয়ে ভূমিকা রাখতে পরিবার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন, সংস্থার দায়িত্ব রয়েছে। সারাদেশে ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ এর ১২০ টি শাখা রয়েছে। সড়ক দূর্ঘটনা মুক্ত আগামীর বাংলাদেশ বি-র্নিমানে শুধু জেলা সদর,উপজেলা, থানা, মহকুমা নয় প্রত্যন্ত অঞ্চলে এই সামাজিক আন্দোলন টি সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে। শিক্ষার্থীদের আগষ্ট আন্দোলনের পর অচল ট্রাফিক ব্যবস্থা সচল রাখতে যে শিক্ষার্থী তরুণ, যুবক, যুবা, বিভিন্নসংস্থার কর্মি বৃন্দ ভূমিকা রেখেছে তাদের যোগ্যতা অনুযায়ী সরকারী ভাবে তাদের ট্রাফিক ব্যবস্থা পূর্ণ গঠনে ট্রাফিক বিভাগকে সহোযগিতা করতে নিয়োগের উদ্দোগটি প্রসংশনীয় তবে তাদের জন্য প্রয়োজন উপযুক্ত প্রশিক্ষণ, আশা করা যায় সংশ্লিষ্ঠ কর্তৃপক্ষ এটি করবেন।সড়ক দূর্ঘটনায় যারা নিহত হয়েছেন তাদের আত্মার শান্তি কামনা পরিবার গুলির প্রতি সহানুভূতি যারা পঙ্গু হয়েছেন চিকিৎসাধীন রয়েছেন তাদের প্রতি সহানুভূতি ও সুস্থতা কামনা করে ‘পথ যেন হয় শান্তির মৃত্যুর নয়’ এই অপেক্ষায়।

লেক্ষক উপদেষ্টা, নিরাপদ সড়ক চাই, রাজশাহী জেলা শাখা. সমাজ ও সাস্কৃতিক কর্মি