সোমবার, মার্চ ১৭, ২০২৫
Logo
Operation Chittagong Mansurabad Ujala Cinema Hall Fire Brigade

অপারেশন চট্টগ্রাম মনসুরাবাদ উজালা সিনেমা হল ফায়ার ব্রিগেড

Bijoy Bangla

ওয়ালিউর রহমান বাবু

প্রকাশের সময়: ০৫ ডিসেম্বর, ২০২৪, ০৩:৪৩পিএম

অপারেশন চট্টগ্রাম মনসুরাবাদ উজালা  সিনেমা হল ফায়ার ব্রিগেড

কিশোর গেরিলা বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ আবুল কালাম তখন চট্টগ্রাম জেলা সদরের পাহাড়তলী রেলওয়ে স্কুলের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী। থাকতেন দেওয়ান হাট মিস্ত্রী পাড়ায়। বিপ্লবী ছাত্র ইউনিয়ন সমর্থন করতেন। ৩মার্চ বাউলিদের হত্যা করা হলে তার মনে তোলপাড় শুরু হয়।

অসহযোগ আন্দোলন থেকে প্রতিরোধ সংগ্রাম। ২৭ মার্চ শুনলেন কালুর ঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে জিয়াউর রহমানের ডাক। যোগাযোগ করেন পাকিস্তান থেকে চলে আসা পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আলতাফ হোসেনের সাথে। তার সাথে পুলিশ লাইনের ম্যাগজিন রুম থেকে অস্ত্র সংগ্রহ করে প্রতিরোধ সংগ্রামকারীদের সহযোগিতা দিতে থাকেন।

এপ্রিল মাসে আলতাফ হোসেনের মিস্ত্রি পাড়া খামারপারার বাড়িতে ট্রেনিং দিতে থাকেন। পাকিস্তান বিমান বাহিনীর পিটি অফিসার আরিফ মুহিউদ্দিন পাকিস্তান থেকে চলে এসে কমান্ডারের দায়িত্ব নিলে তিনি সহ অনেকে তার কাছে ট্রেনিংনিতে থাকেন।

তিনি আব্বাস, মান্নান শাহাজাহান কে সঙ্গে নিয়ে অন্যান্য গেরিলা গ্রুপের সাথে সমপৃক্ত হন। ১ আগষ্ট চট্টগ্রামে মনসুরাবাদে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সমর্থক মুসলিম লীগ নেতা মাহামুদ সরকারের বাড়ি অ্যামবুশ করলে পাকিস্তানি সৈন্যরা সেখানে এলে অ্যাকশন শুরু হয়ে যায়। শহিদ হন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী গেরিলা ময়মনসিংহের বীর মুক্তিযোদ্ধা শহিদুুল্লাহ। আগ্রাবাদের বিল্লাপাড়ার মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে যোগাযোগের পর গঠন হল আলতাফ বাহিনী। ২৭ আগষ্ট কিশোর গেরিলা বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম উজালা সিনেমা হলের সামনে বাদাম বিক্রি করার সময় তিন পাকিস্তানি সৈন্য সেখানে এসে “ইনসান আওর আদমী” সিনেমা দেখতে থাকে।

একজন বাদাম দেখিয়ে বলে “কেতনা রুপিয়া” তিনি বলেন “একসের দো’রুপিয়া” সৈন্যটির সিনেমার পোষ্টার দেখার সুযোগে বাদামের মধ্যে “টাইম বোমা” লাগিয়ে পাঁচ টাকার ভাংতি নেই বলে সরে পড়লে পনেরো মিনিট পর বোমার বিস্ফোরনে সৈন্যটি নিহত হয়। ১৫ সেপ্টেম্বর শাভলেনে টোকায় সেজে রাস্তায় বোতল কুড়ানোর সময় পাকিস্থানি সৈন্য বহন করা জিপ আসলে কৌশলে টাইম বোমা লাগিয়ে দিলে আধা ঘন্টা পর তা বিস্ফোরিত হয়।

ফয়েজ লেকে জল্লাদ বাহিনী পুরুষ হত্যা করলে ২০ টাকা নারী হত্যা করলে ১০ টাকার ঘোষনা দিলে ঝাউতলা রেলওয়ে ষ্টেশনে রেকি করে দেখেন পাকিস্তানি সৈন্যরা ট্রেন থেকে লোকজন কে নামিয়ে দুই হাজার জনকে হত্যা করে ফয়েজ লেক ও আসে পাশের গর্তে ফেলে দিচ্ছে। রোজার সময় অবাঙালিরা বাঙালিদের হত্যা করতে আসছে খবর পেয়ে অবস্থান নিলে পাকিস্তানি সৈন্যরা সেখানে না এসে মনসুরাবাদ খাদ্র গুদাম লুট করে পালিয়ে যায়। ১৭ নভেম্বর পাকিস্তানি সৈন্যরা দেওয়ান হাট মিস্ত্রী পাড়ার এসে তার কাছে কমান্ডার আলতাফ হোসেন, আরিফ মুহিউদ্দিন ও অন্যদের এবং এ বাহিনীর খোজ খবর নিতে চাইলে তিনি অন্য রকম বলে সরে গেলে তারা তাকেও খুজতে থাকে ।

তিনি দুর থেকে রেকি করতে থাকেন। মিত্র বাহিনীর ৪ ডিসেম্বর এয়ার অ্যাকশন সফল করতে সঙ্গীসহ আগ্রাবাদ ফায়ার বিগ্রেডের সাইরেন বক্সে এক্সপ্লোসিভ লাগিয়ে দিলে পনেরো মিনিট পর তা বিস্ফোরিত হয়। দেশ স্বাধীনের পর লেখাপড়ায় মনোযোগী হন। সার্টিফিকেট নিতে হবে এ ধারনা তার কখনো হয়নি। বয়সে ছোট হওয়ায় কেউ এ ব্যাপারে তাকে কিছু বলেনি। রেলওয়ের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রচার বিমুক এ মানুষটি কাওকে তার অবদান জানাতে চাননি। দেশের স্বাধীনতার জন্য অবদান রেখেছেন, এটাই তার কাছে অনেক বড় কিছু।

লেখক তথ্য সংগ্রহক রাজশাহী।