মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে অনেকে সীমান্ত পার হন। অনেকে এপাড়ে থেকে ঝুঁকি উপেক্ষা করে ভুমিকা রাখেন। তাদেরই একজন পাবনা জেলার ঈশ্বরদী থানার পাকশী ইউনিয়নের রূপপুর গ্রামের চা বিক্রেতা কাশেম মোল্লা। কাশেম মোল্লা শুনতে পান বিবিসি তে মুক্তিযুদ্ধ- মুক্তিযোদ্ধাদের খবর প্রচার হচ্ছে। তিনি তার ট্রানজিস্টারের নব ঘুরিয়ে পেয়ে যান বিবিসি। হয়ে গেলেন অন্য রকম মুক্তিযোদ্ধা।
চা পান করতে আসা স্বাধীনতাকামীরা এখানে এসে শুনতে থাকেন বিবিসি। তার কথা তার দোকানের কথা ছড়িয়ে পড়ে। প্রতিদিন সন্ধার পর চা পনের কৌশলে দুর দুরান্ত থেকে আসা লোকজন বিবিসির সংবাদ শুনে গ্রামে ফিরে সকলকে তা জানাতে থাকে। জায়গাটির নাম হয়ে গেল বিবিসি বাজার। পাকিস্তানি সৈন্যরা অকাঠ্য নির্যাতন করে তাকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ থেকে সরাতে পারেনি। (বিজয়ের পর তাকে ও তার দোকানটি দেখার জন্য দেশের বিভিন অঞ্চল ও বিদেশ থেকে আসা লোকজন সেখানে আসতে থাকে)। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময় ৭ নং সেক্টরের অধিনে ছিল দিনাজপুর।
বিজয় অর্জনের পর বীর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কর্ণেল শাহরিয়ার দিনাজপুর সদরের মহারাজা গীরিজানাথ হাইস্কুলে ক্যাম্প করে এখানে অবস্থান নেয়া দুইহাজার মুক্তিযোদ্ধাকে বিভিন্ন স্থান থেকে অস্ত্র উদ্ধারের দ্বায়িত্ব দেন। ১৯৭২ সালের ৬ জানুয়ারী সন্ধার পর এক বীর মুক্তিযোদ্ধার হাত থেকে মাইন পড়ে বিষ্ফোরন হলে স্কুলটির দোতালা ভবন বাংকার অস্ত্র ভান্ডার বিদ্ধস্ত হয়ে চারশো থেকে পাঁচশো বীর মুক্তিযোদ্ধা নিহত এবং অন্যান্যরা মারাত্বক আহত হয়। আতঙ্ক ও শোকাবহ পরিস্থিতির মধ্যে বিদ্যুৎ না থাকায় উদ্ধার কাজে বিগ্ন ঘটে। মাটির নিচ থেকে ওপরে পানি উঠে আসে। স্বাধীনতাকামী মানুষেরা সহোযোগীতা করতে এগিয়ে আসেন। গাড়ির হেড লাইট জালিয়ে উদ্ধার কাজ চলতে থাকে। আহদের সদর হাসপাতাল ও মিশন হাসপাতালে পাঠানো হয়। নিহত মুক্তিযোদ্ধাদের দাফনের জন্য গঙ্গাপুর থেকে কাফনের কাপর আনা হয়। পুরো দিনাজপুর অঞ্চল শোকাবহ হয়ে পরে। পরের দিন শ্রদ্ধা নিবেদনের পর নিহত ৮৬ বীর মুক্তিযোদ্ধাকে চেহালগাজী মাজারে দাফন করা হয়। (মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখায় বিবিসি কতৃপক্ষ পাবনা জেলার ঈশ্বরর্দী থানার পাকশী ইউনিয়নের সেই কাশেম মোল্লাকে তাদের সুবর্ন জয়ন্তিতে সম্মানিত করেন। কিন্তু তার জন্য কিছু করার দায়িত্ব যাদের ছিল তারা তার বদশ্বায় কি করেছেন?)
তথ্য সুত্র: বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমান ফান্টু ঈশ্বরর্দী, বীর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সাইফুদ্দিন আকতার ও সাংবাদিক আজাহারুল আজাদ দিনাজপুর।
লেখকঃ তথ্য সংগ্রাহক সমাজ ও সাংস্কৃতিক কর্মী রাজশাহী