ঢাকামঙ্গলবার , ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১
  • অন্যান্য

বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য বার্ষিক দু’লাখ ডলারের স্কলারশিপ

  • ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০২১, ৯:০৪ অপরাহ্ণ

ভাষার মাসে বহুজাতিক মার্কিন সমাজে বাঙালির এগিয়ে চলার অভিযাত্রায় যুক্ত হলো আরেকটি অধ্যায়। এজন্য কঠোর পরিশ্রমী এবং মেধাবী একজন অভিবাসী ইতিহাসের অংশ হলেন। যেমনটি হয়েছেন একুশে ফেব্রুয়ারিকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’-এ পরিণত করার ক্ষেত্রে অবিস্মরণীয় ভূমিকা পালনকারী কানাডার ভ্যাঙ্কুবারের রফিকুল ইসলাম এবং আব্দুস সালাম। তিনি হলেন যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসি সংলগ্ন ভার্জিনিয়ায় বসবাসরত ‘ম্যাজিকম্যান’ খ্যাত ইঞ্জিনিয়ার আবুবকর হানিপ। এই প্রথম যুক্তরাষ্ট্রে একটি ইউনিভার্সিটির মালিকানা অর্জনের মধ্য দিয়ে এ অধ্যায়ের যাত্রা।  আর তা ঘটলো ১১ ফেব্রুয়ারি ভার্জিনিয়ার ভিয়েনায় অবস্থিত ‘আই গ্লোবাল ইউনিভার্সিটি’ (ইনোভেটিভ গ্লোবাল ইউনিভার্সিটি তথা আইজিইউ)’র পুরো দায়িত্ব গ্রহণের মাধ্যমে। ২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠিত এই বিশ্ববিদ্যালয়টি বিজ্ঞান, ব্যবসা ও প্রযুক্তি শিক্ষার জন্য দক্ষিণ, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপীয় শিক্ষার্থীদের কাছে সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত একটি শিক্ষাঙ্গন হিসেবে বিবেচিত।

উল্লেখ্য, ইঞ্জিনিয়ার আবুবকর হানিপ যুক্তরাষ্ট্রে ‘পিপল এন টেক’র প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী। এই ইন্সটিটিউটের মাধ্যমে মার্কিন আইটি সেক্টরে গত দেড় দশকে ৭ হাজারের অধিক প্রবাসীকে উচ্চ বেতনে চাকরির ব্যবস্থা করেছেন ইঞ্জিনিয়ার হানিপ।

গত ১১ ফেব্রুয়ারি কাগজপত্রের স্বাক্ষর-অনুস্বাক্ষর এবং রাষ্ট্রীয় প্রটোকল মেনে বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকানা হস্তান্তর প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে যা যুক্তরাষ্ট্রেই শুধু নয় সমগ্র প্রবাসে সুধীমহলে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। কারণ এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বাংলাদেশের মেধাবী ছাত্রছাত্রীরাও বৃত্তি নিয়ে উচ্চ শিক্ষার্থে যুক্তরাষ্ট্রে অধিক হারে আসতে সক্ষম হবেন। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিমধ্যেই বিশেষ কৃতিত্বের সাথে ডিগ্রি গ্রহণকারীদের বড় একটি অংশ এসেছিলেন এশিয়া, ইউরোপ এবং মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে।

জানা গেছে, গত ১২ বছরে ৪ হাজারের বেশি ছাত্রছাত্রী উচ্চতর ডিগ্রি নিয়েছেন। চলতি শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৫ শতাধিক। এরমধ্যে বিদেশি শিক্ষার্থীর (ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট) সংখ্যাই বেশি। প্রকৌশলী আবুবকর হানিপ এই ভার্সিটির পরিচালনা-পর্ষদের প্রধান এবং মালিকানায় আসার পর শিক্ষা কার্যক্রমে ব্যাপক পরিবর্তন এনে সকল ডিগ্রিধারীকে উপযুক্ত চাকরি পাবার আগ পর্যন্ত সহায়তা আর প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেয়ার অঙ্গীকার করেছেন।

এ প্রসঙ্গে ইঞ্জিনিয়ার হানিপ বলেন, ‘দেখুন উচ্চ বেতনে চাকরি পাওয়ার জন্য আপনার বিশ্ববিদ্যালয় ডিগ্রি অবশ্যই প্রয়োজন। কিন্তু কেবল ডিগ্রিই আপনাকে চাকরির নিশ্চয়তা দেয় না। যেমনটা আমাকে দেয়নি ২০ বছর আগে। বাংলাদেশের ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি থাকার পরও আমি এখানে স্বল্প পারিশ্রমিকের কাজ, অর্থাৎ ‘অড জব’ করতাম। সে সময় আমি অনুভব করেছি আমার এখানকার বিশ্ববিদ্যালয় ডিগ্রি থাকলে হয়তো আমি উঁচুমানের এবং অনেক বেশি বেতনের চাকরি পাব।’

আইজিইউ-এর চেয়ারম্যান এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আবুবকর হানিপ জানালেন, “প্রায় ৫০ হাজার ডলার ঋণ নিয়ে আমি কম্পিউটার সায়েন্সে মাস্টার্স করলাম। সর্বোচ্চ গ্রেড নিয়ে আমি পাশ করার পরও সাথে সাথে চাকরি পাইনি। ফের ফিরে গেলাম অড জবে, জীবন চালিয়ে নেবার সংগ্রামে। কিন্তু আমি থেমে যাইনি, হতাশও হইনি। বেশ কিছুদিন পরে আমি ঠিকই আইটি জবে ঢুকতে পেরেছি স্কীল ডেভেলপমেন্ট ট্রেনিং সম্পন্ন করে। তখন আমি বুঝলাম, ডিগ্রি দরকার, কিন্তু শুধু ডিগ্রি দিয়েও একজন তার ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারবে না এই দেশে, যতক্ষণ না তার স্কীল ডেভেলপমেন্ট হচ্ছে। সেই মানসেই আমি ১৫ বছর আগে ‘পিপল এন টেক’ নামক প্রতিষ্ঠানের যাত্রা শুরু করি, যার মাধ্যমে এ পর্যন্ত প্রায় ৭ হাজার অভিবাসী এখন উচ্চ বেতনে চাকরি করছেন। সেই ‘পিপল এন টেক’র অভিজ্ঞতাই আমাকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য এতদিন স্বপ্ন দেখিয়েছিল। আজ সে স্বপ্ন পূরণ হলো।”

তিনি বলেন, ‘এখন আমি এবং ভার্সিটি-টিম বেশ গর্ব করেই বলতে পারছি যে, এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা চাকরিতে প্রবেশ না করা পর্যন্ত আমরা ক্যারিয়ার সহায়তা দেব। কেননা সেই ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ বা সুবিধাদি আমরা এরই মধ্যে অর্জন করেছি পিপল এন টেকের মাধ্যমে। আর এজন্যেই আমাদের শিক্ষকরা শুধু স্কলার নন, তারা ইন্ডাস্ট্রি প্র্যাকটিশনারও, যাদের রয়েছে চার থেকে ৩০ বছরের কাজের অভিজ্ঞতা।’

এই ভার্সিটিতে মাস্টার অব সায়েন্স অ্যান্ড ইনফরমেশন টেকনোলজি (এমএসআইটি), মাস্টার অব সায়েন্স ইন সাইবার সিকিউরিটি ও মাস্টার অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এমবিএ) এ উচ্চতর ডিগ্রি নেয়া যায়। আন্ডার গ্র্যাজুয়েট ডিগ্রিগুলোর মধ্যে অন্যতম ব্যাচেলর অব সায়েন্স অ্যান্ড ইনফরমেশন টেকনোলজি (বিএসআইটি) ও ব্যাচেলর অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (বিবিএ)। এছাড়া কম্পিউটার ও আইটি বিষয়ে বেশ কিছু সার্টিফিকেট কোর্সও রয়েছে। ভার্সিটি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে যে, শিগগিরই হেলথ কেয়ার, নার্সিং, ড্যাটা সায়েন্স ও আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বিষয়েও বেশ কয়েকটি কোর্স চালুর পরিকল্পনা রয়েছে।

আরও জানা গেছে, বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্যে রয়েছে বার্ষিক দু’লাখ ডলারের স্কলারশিপ। এ নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সাথে ইতিমধ্যেই আলোচনা শুরু করেছে ভার্সিটি কর্তৃপক্ষ। এই স্কলারশিপের জন্যে আবেদন করা যাবে www.igu.edu ওয়েবসাইটে।