নিজস্ব সংবাদদাতা, সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোনা, ৯ মার্চ ॥ সুনামগঞ্জের শাল্লা, জামালগঞ্জ, ধর্মপাশা, দিরাই, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলায় শিলাবৃষ্টিতে বোরো ফসলের ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। সোমবার রাতের কালবৈশাখী ঝড় ও প্রচণ্ড শিলাবৃষ্টির ফলে ফসলের মুখ দেখার আগেই মাথায় হাত পড়েছে কৃষকের। ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে বোরো ফসলের। এদিকে নেত্রকোনায় মঙ্গলবার ভোরে ঝড়ো বাতাসসহ শিলাবৃষ্টি হয়েছে। চলতি ইংরেজী বছরে এটাই প্রথম বৃষ্টি। শিলাবৃষ্টিতে আমের মুকুলসহ বোরো ও রবি ফসলের ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।
জানা গেছে, সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার হবিবপুর ইউনিয়নের ও বাহাড়া ইউনিয়নের প্রায় সবকটি হাওড়েই শিলাবৃষ্টির আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। উপজেলার ছায়ার হাওড়, ভাণ্ডাবিল, ভেড়াডহর, উদগলবিল হাওড়ে দেখা যায় গর্ভায়িত বোরো ফসলের প্রায় ৫০ শতাংশ নষ্ট হয়েছে বলে কৃষকরা জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে বাহাড়া ইউনিয়নের প্রতাপপুর গ্রামের কৃষক পীযুষ কান্তি দাস জানান, ফাল্গুন মাসে এ ধরনের ভয়াবহ শিলাবৃষ্টি আমি দেখিনি। সোমবার রাতে শিলাবৃষ্টির ভয়াবহ তাণ্ডবে ফসলের মুখ দেখার আগেই অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে।
এদিকে জামালগঞ্জ ও ধর্মপাশা উপজেলার ওপর দিয়ে এ কালবৈশাখী ঝড় বয়ে যায়। ভিমখালী ও জামালগঞ্জ সদর ইউনিয়নে শিলাবৃষ্টিতে ফসলের ক্ষতির পাশাপাশি কালবৈশাখী ঝড় ভীমখালী ইউনিয়নের নোয়াগাঁও বাজারের ১০টি আধাপাকা দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভীমখালী ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, শিলাবৃষ্টিতে হাওড়ের অন্তত ২৫ ভাগ ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ধর্মপাশা উপজেলা শুখাইর রাজাপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফুল মিয়া জানিয়েছেন, তার ইউনিয়নের ৪টি হাওড়ের ফসলের ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। ধানখুনিয়া, সোনামড়ল, শাশখা ও জয়ধনার হওড়ের অন্তত ৩০% বোরো ফসলের ক্ষতি হয়েছে।
এছাড়াও জেলার দক্ষিণ সুনামগঞ্জ ও দিরাই উপজেলার কয়েকটি হাওড়ের ওপর দিয়ে বয়ে চলা কালবৈশাখী ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে কমবেশি ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে বলে দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জেবুন নাহার শাম্মি ও দিরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদুর রহমান মামুন জানিয়েছেন। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাগণকে এ বিষয়ে তথ্য দিতে বলা হয়েছে। তারা মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তাদের দেয়া তথ্যানুযায়ী ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ ও ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের তালিকা করবে।
জামালগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোখলেছুর রহমান জানান, ফসলের ক্ষয়ক্ষতি দেখতে হাওড়ে মাঠকর্মীদের পাঠানো হয়েছে। তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিশ্চিত হওয়া যাবে।
শাল্লা সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ জামান চৌধুরী বলেন, গতরাতের শিলাবৃষ্টিতে ফসলের যে ক্ষতি হয়েছে তা অপূরণীয়। তবে গর্ভ ফসলে শিলাবৃষ্টির ক্ষয়-ক্ষতি হওয়ায় চূড়ান্ত ক্ষতির পরিমাণ এখনও বুঝা যাচ্ছেনা। শিলাবৃষ্টির পাশাপাশি প্রচণ্ড ঝড়ো হাওয়ায় ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামে দুটি বসতঘর ভেঙ্গে পড়েছে বলেও তিনি জানিয়েছেন।
বাহাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বিধান চন্দ্র চৌধুরী জানান, বাহাড়া ইউনিয়নে ৬৫ থেকে ৭০ শতাংশ ফসলের ক্ষতি হয়েছে। তাছাড়া ১০ জন আহত হয়েছে বলে এবং আহত দুজন সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন ও একটি বসতঘরও ভেঙ্গেছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলার প্রায় ১৫ শ’ হেক্টর জমির ওপর সোমবার রাতের শিলাবৃষ্টি আঘাত করেছ। এরমধ্যে প্রায় ২০ শতাংশ ফসলের ক্ষতি হয়েছে।
এদিকে নেত্রকোনায় মঙ্গলবার ভোর সাড়ে ৪টার দিকে প্রথমে ভারি বৃষ্টি হয়। ১০-১৫ মিনিট বৃষ্টির পর শুরু হয় শিলাবৃষ্টি। প্রথমে ছোট ছোট শিলা পড়ে। এক পর্যায়ে দুই-আড়াইশ’ গ্রাম ওজনের শিলা পড়তে থাকে। এতে অনেকের ঘরের চাল ফুটো হয়ে যায়। ঝরে যায় সদ্য বের হওয়া আমের মুকুল। একই সঙ্গে বোরোসহ রবি ফসলেরও বেশ ক্ষতি হয়। জেলার সদর, খালিয়াজুরী, কলমাকান্দা, বারহাট্টা, মদন ও পূর্বধলা উপজেলায় শিলাবৃষ্টি বেশি হয়েছে।
কৃষকরা জানিয়েছেন, খালিয়াজুরীর কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের ছায়ার হাওড় ও গাজীপুর ইউনিয়নের বয়রার হাওড়সহ আশপাশের কয়েকটি হাওড়ের অনেক বোরো জমির কচি ধানের শীষ মাটিতে নুয়ে পড়েছে। কোন কোন জমির ধান গাছ একেবারে মাটিতে মিশে গেছে। নষ্ট হয়ে গেছে মিষ্টি কুমড়া, বাদাম ও সূর্যমূখীর খেত। সদর উপজেলার বালি গ্রামের কৃষক আবু তাহের বলেন, ‘এমন বড় বড় শিলা জীবনে কখনও দেখিনি।’ কেন্দুয়া উপজেলার কান্দিউড়া ইউনিয়নের ব্রাহ্মণজাত গ্রামের কৃষক আনোয়ার জাহিদ জানান, তার আমবাগানে সদ্য আমের মুকুল বেরোচ্ছিল। বেশিরভাগ মুকুলই ঝরে গেছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক হাবিবুর রহমান বলেন, বছরের প্রথম এই বৃষ্টি ফসলের জন্য অনেকটা আশীর্বাদ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শিলাবৃষ্টিতে আমের মুকুল ঝরে গেছে। সূর্যমুখী গাছ বেঁকে গেছে। বোরো ধানেরও কিছু ক্ষতি হয়েছে। তবে তা পরিমাণে খুব বেশি নয়।
সূত্র: জনকণ্ঠ