ঢাকাবৃহস্পতিবার , ২৫ মার্চ ২০২১
  • অন্যান্য

ছিনিমিনি চলবে না ॥ দেশবিরোধী অপতৎপরতা রুখে দাঁড়ান

  • মার্চ ২৫, ২০২১, ৬:২৭ অপরাহ্ণ

জাতির উদ্দেশে ভাষণে প্রধানমন্ত্রীর উদাত্ত আহ্বান

অনলাইন ডেস্ক:  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকলকে অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে দেশবিরোধী সকল অপতৎপরতা রুখে দাঁড়াতে দেশবাসীর প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর শুভক্ষণে সকলকে শপথ নিতে হবে, কেউ যেন বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে না পারে। দেশের গণতান্ত্রিক এবং উন্নয়নের অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করতে না পারে। আসুন, সকল ভেদাভেদ ভুলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে আমরা জাতির পিতার স্বপ্নের উন্নত-সমৃদ্ধ অসাম্প্রদায়িক সোনার বাংলা গড়ে তুলি।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় মহান স্বাধীনতা দিবস ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর প্রাক্কালে জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী আগামীর বাংলাদেশকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার জন্য দেশের সকল নাগরিককে নতুন করে শপথ নেয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, আজ বাংলাদেশ সম্পর্কে সকল নেতিবাচক ও নিরাশাবাচক ভবিষ্যদ্বাণী অসার প্রমাণিত করে বাংলাদেশ আজ বিশ্বের বুকে গর্বিত দেশ হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। এক দশক আগেও বাংলাদেশকে যেখানে দারিদ্র্য আর অনুন্নয়নের উদাহরণ হিসেবে উপস্থাপন করা হতো, আজ উন্নয়ন বিশেষজ্ঞগণ সেই বাংলাদেশকেই দারিদ্র্য-জয় এবং উন্নয়নের আদর্শ মডেল হিসেবে তুলে ধরছেন।

প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে বলেন, আমাদের বিগত ১২ বছরের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে আর্থ-সামাজিক সূচকে বাংলাদেশ অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছে। নানা সূচকে বাংলাদেশ শুধু প্রতিবেশী দেশগুলোর চেয়ে এগিয়ে যায়নি, অনেক ক্ষেত্রে অনেক উন্নত দেশকেও ছাড়িয়ে গেছে। তবে আজকের এই উত্তরণের পথ মোটেই মসৃণ ছিল না। দেশের ভেতরে-বাইরে স্বাধীনতা এবং মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তি বাংলাদেশের অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করতে নানা অপতৎপরতা চালিয়েছে। সে প্রক্রিয়া এখনও অব্যাহত আছে। কাজেই আমাদের সকলকে অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে দেশবিরোধী সকল অপতৎপরতা রুখে দাঁড়াতে হবে।

জাতির উদ্দেশে প্রদত্ত ১৭ মিনিটের ভাষণটি বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতারসহ বিভিন্ন বেসরকারী টিভি চ্যানেল সরাসরি প্রচার করে। প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে স্ব^াধীনতার আন্দোলন, মহান মুক্তিযুদ্ধ, ’৭৫ পরবর্তী অপশাসন, টানা তিন মেয়াদে তার সরকারের বিগত ১২ বছরের অর্জন, উন্নয়ন-সাফল্যেগুলো দেশবাসীর সামনে তুলে ধরেন। একইসঙ্গে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত, উন্নত-সমৃদ্ধ অসাম্প্রদায়িক সোনার বাংলা গড়ে তোলার তার সরকারের দৃঢ় প্রত্যয়ের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন।

দেশবাসীকে উদ্দেশ্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এক সাগর রক্তের বিনিময়ে আমরা অর্জন করেছি আমাদের এই প্রিয় মাতৃভূমির স্বাধীনতা। প্রিয় নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ডাকে ছাত্র-ছাত্রী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছেড়ে, শ্রমিক কারখানা ছেড়ে, কৃষক লাঙল ফেলে, কামার-কুমার-জেলে তাদের কাজ ফেলে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। সশস্ত্রবাহিনী এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাঙালী সদস্যরা পাকিস্তানের পক্ষ ত্যাগ করে প্রতিরোধ সংগ্রামে শামিল হয়েছিলেন। জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সকলেই আমাদের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন।

দেশবাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে সরকারপ্রধান বলেন, একবার ভাবুন, আমরা আজ যে স্বাধীন দেশের মাটিতে আজ মুক্ত নিশ্বাস ফেলছি তা অর্জনে কত শত তরুণ অকাতরে প্রাণ দিয়েছেন? কত মা তাদের সন্তান হারিয়েছেন, কত বাবা তাদের পুত্র হারিয়েছেন, কত ভাইবোন তাদের ভাই হারিয়েছেন, কত স্ত্রী তাদের স্বামী হারিয়েছেন, সন্তানের বাবা হারিয়েছেন? কতশত মুক্তিযোদ্ধা পঙ্গু হয়ে দুঃসহ জীবনযাপন করছেন ? তাদের একটাই প্রত্যাশা ছিল এ দেশ স্বাধীন হবে। এ দেশের মানুষ সুখে-শান্তিতে বসবাস করতে পারবে। সকলে মৌলিক অধিকার ভোগ করবে। আজকে আমরা তাদের সেই প্রত্যাশা কিছুটা হলেও পূরণ করতে পেরেছি।

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২৬-এ মার্চ আমাদের মহান স্বাধীনতা দিবস। এবার স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি হচ্ছে। আমরা উদ্যাপন করছি স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। একইসঙ্গে উদ্যাপিত হচ্ছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি- তিনি আমাদের এই সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপনের তৌফিক দান করেছেন। এই শুভদিন উপলক্ষে স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে আমি দেশের অভ্যন্তরে এবং বাইরে বসবাসকারী বাংলাদেশের সকল নাগরিককে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাচ্ছি। আমি কৃতজ্ঞতাভরে স্মরণ করছি সেসব বন্ধু রাষ্ট্র, প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তিকে যারা আমাদের চরম দুঃসময়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন।

একাত্তরের গণহত্যার কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭১ সালের ২৫-এ মার্চের রাতে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী ‘অপারেশন সার্চ লাইটের’ নামে নিরস্ত্র বাঙালীর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। রাজারবাগ পুলিশ লাইন, পিলখানায় তৎকালীন ইপিআর হেডকোয়ার্টার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ ঢাকার ঘনবসতি এলাকাগুলোতে একযোগে হামলা চালায় পাকিস্তানী সামরিক জান্তা। হাজার হাজার মানুষকে গুলি করে হত্যা করে। আগুন ধরিয়ে দেয় অসংখ্য ঘরবাড়িতে। দেশের অন্যান্য শহরগুলোতে হাজার হাজার বাঙালীকে হত্যা করা হয়।

তিনি বলেন, ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে পুলিশের এবং তৎকালীন ইপিআর-এর বীর বাঙালী সদস্যরা পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করে। আওয়ামী লীগ এবং ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে রাস্তায় এবং পাড়া-মহল্লার অলি-গলিতে বেরিকেড তৈরি করে পাকিস্তানী সৈন্যদের চলাচলে বাধা দেয়। কিন্তু অত্যাধুনিক অস্ত্র, ট্যাংক আর অস্ত্রসজ্জিত যানবাহনের সামনে নিরস্ত্র প্রতিরোধ বেশি ক্ষণস্থায়ী হয় না। নিরস্ত্র বাঙালীর ওপর হামলা চালিয়ে নির্বিচারে গণহত্যা শুরু করে পাকিস্তানী সামরিক জান্তা।

বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা প্রসঙ্গে তার কন্যা শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানী সৈন্যদের হাতে বন্দী হওয়ার পূর্ব মুহূর্তে ২৬-মার্চের প্রথম প্রহরে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। সমগ্র জাতিকে নির্দেশ দেন প্রতিরোধ যুদ্ধের। মাতৃভূমিকে শত্রুমুক্ত করার। তার ঘোষণা তৎকালীন ইপিআর-এর ওয়ারলেসের মাধ্যমে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। পাকিস্তানী জান্তারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে গিয়ে কারাগারে নিক্ষেপ করে। বীর বাঙালী বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে দেশকে শত্রুমুক্ত করে। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর অর্জিত হয় চূড়ান্ত বিজয়।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর দীর্ঘ ২৪ বছরের লড়াই-সংগ্রামের ইতিহাস তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের প্রিয় মাতৃভূমির স্বাধীনতা ২৪ বছরের নিরন্তর রাজনৈতিক সংগ্রামের ফসল। আর এই সংগ্রামের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৪৮ সালে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে সৃষ্ট আন্দোলনে যে স্বাধিকারের বীজ বপন করেছিলেন, তাকেই সযতেœ লালন-পালন করে তিনি স্বাধীন মাতৃভূমি প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের পরিণত মহিরূহে রূপান্তরিত করেন। শেখ মুজিব থেকে পরিণত হন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব। ভাষা আন্দোলনের পথ বেয়েই ৫৪’র যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ৫৮’র আইয়ুব খান বিরোধী আন্দোলন, ৬৬’র ঐতিহাসিক ৬-দফা, ৬৯’র গণঅভ্যুত্থান, ৭০’র নির্বাচন এবং ৭১’র রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমরা পাই স্বাধীনতা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব নামের সেই মহাপুরুষের জন্ম হয়েছিল বলেই আজ আমরা স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের গর্বিত নাগরিক। তাঁর জন্ম হয়েছিল বলেই আজ আমরা নিজস্ব দেশ, ভাষা-সংস্কৃতি নিয়ে গর্ববোধ করি। শেখ মুজিব একটি দেশ, একটি জাতি-রাষ্ট্রের ¯্র্রষ্টা। কাজেই তাঁর জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী আমরা একযোগে উদ্যাপন করছি। আমি বাংলাদেশের জনগণকে ধন্যবাদ জানাই এজন্য যে, জাতীয় জীবনের এই দুই গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক উদ্যাপনকালে স্বাধীনতাযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে তারা রাষ্ট্র ক্ষমতায় বসিয়েছেন।

বঙ্গবন্ধুকে হত্যা পরবর্তী দীর্ঘ ২১ বছর দেশকে আদর্শচ্যুত ও পেছনের দিকে ঠেলে দেয়ার ইতিহাস জাতির সামনে তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শুধু একটি স্বাধীন-সার্বভৈৗম ভূখ-েরই স্বপ্ন দেখেননি, তিনি স্বপ্ন দেখতেন এ জনপদের সাধারণ মানুষ, যারা শত শত বছর ধরে শোষণ-বঞ্চনা, নিপীড়ন-নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, না-খেয়ে না-দেয়ে, রোগে-শোকে মারা গেছে, তাদের দুঃখ-দুর্দশা দূর করতে। তাদের অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থান-চিকিৎসার ব্যবস্থা করে উন্নত জীবন নিশ্চিত করতে। আমাদের দুর্ভাগ্য মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় স্বাধীনতাবিরোধী কুচক্রী মহল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে সপরিবারে হত্যা করে। তাঁকে হত্যার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রযাত্রাকে যেমন স্তব্ধ করে দেয়া হয়েছিল, তেমনি মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধূলিস্যাত করে দেয়া হয়।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শুধু স্বপ্ন দেখতেন না, কী করে স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে হয় তা তিনি জানতেন। স্বাধীনতার পর একেবারে শূন্য হাতে মাত্র সাড়ে তিন বছরে ধ্বংসপ্রাপ্ত রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট, রেললাইন, পোর্ট সচল করে অর্থনীতিতে গতি সঞ্চার করেন। ১২৬টি দেশের স্বীকৃতি ও ২৭টি আন্তর্জাতিক সংস্থার সদস্যপদ লাভ করে বাংলাদেশ। বাংলাদেশকে তিনি স্বল্পোন্নত দেশের কাতারভুক্ত করেন। কিন্তু ১৯৭৫-পরবর্তী অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী অগণতান্ত্রিক শাসকেরা বাংলাদেশকে আদর্শচ্যুত করেছে। দীর্ঘ একুশ বছর এ দেশের মানুষকে ধোঁকা দিয়েছে। জনগণের সম্পদ লুণ্ঠন করে তাদের অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থানের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত রেখেছে। বাংলাদেশকে ভিক্ষুকের দেশ হিসেবে বহির্বিশ্বে পরিচিত করেছে।

বিশ্বে আজ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ ॥ জাতির উদ্দেশে প্রদত্ত ভাষণে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, স্বাধীনতার অর্ধশত বছর অতিক্রম করা জাতীয় জীবনে একটি তাৎপর্যপূর্ণ মাইলফলক। আমাদের জন্য এই সুবর্ণজয়ন্তী উৎসব আরও বর্ণময় হয়েছে এজন্য যে, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে সরকার পরিচালনা শুরু করে। আজ বাংলাদেশ সম্পর্কে সকল নেতিবাচক এবং নিরাশাবাচক ভবিষ্যদ্বাণী অসার প্রমাণিত করে বাংলাদেশ আজ বিশ্বের বুকে গর্বিত দেশ হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে।

তিনি বলেন, আজকের এই অর্জন এ দেশের সাধারণ মানুষের। এ দেশের কৃষক-শ্রমিক-পেশাজীবী, আমাদের প্রবাসী ভাই-বোনেরা, এ দেশের উদ্যোক্তাগণ-তাদের শ্রম, মেধা এবং উদ্বাবনী শক্তি দিয়ে দারিদ্র্য নিরাময়ের অসম্ভব কাজকে সম্ভব করে তুলেছেন। আমার সরকার শুধু নীতি সহায়তা দিয়ে সহায়ক পরিবেশ তৈরি করেছে। আপনারা প্রমাণ করেছেন, বাংলাদেশের মানুষ অনুকূল পরিবেশ পেলে যেকোন অসম্ভবকে সম্ভব করে তুলতে পারে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের বিগত ১২ বছরের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে আর্থ-সামাজিক সূচকে বাংলাদেশ অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছে। গতমাসে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের চূড়ান্ত সুপারিশ লাভ করেছে। গড় আয়ু, লিঙ্গ সমতা, সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা, নারী শিক্ষা, নারীর রাজনৈতিক অধিকার, নারী ও শিশু মৃত্যুহার, স্যানিটেশন, খাদ্য প্রাপ্যতা ইত্যাদি নানা সূচকে বাংলাদেশ শুধু তার প্রতিবেশী দেশগুলোর চেয়ে এগিয়ে যায়নি, অনেক ক্ষেত্রে অনেক উন্নত দেশকেও ছাড়িয়ে গেছে।

দেশবাসীকে উদ্দেশ্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপন করছি। তবে এই উদ্যাপন যেন শুধু আনুষ্ঠানিকতা-সর্বস্ব না হয়। জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীকে সামনে রেখে আমাদের দেশকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার নতুন করে শপথ নিতে হবে। এবারের স্বাধীনতা দিবস অন্যান্য বছরের স্বাধীনতা দিবসের মতো নয়। এবার স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি হলো। এইদিন আনন্দে অবগাহনের দিন।

প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণের শেষাংশে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষায় দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘আনন্দধ্বনি জাগাও গগনে। কে আছ জাগিয়া পূরবে চাহিয়া, বলে ‘উঠ উঠ’ সঘনে গভীর নিদ্রামগনে। হেরো তিমির রজনী যায় ওই, হাসে ঊষা নব জোতির্ময়ী-নব আনন্দে, নব জীবনে, ফুল্ল কুসুমে, মধুর পবনে, বিহগ কলকূজনে।

সূত্র: জনকণ্ঠ