ঢাকাবুধবার , ৩১ মার্চ ২০২১
  • অন্যান্য
আজকের সর্বশেষ সবখবর

ঈর্ষণীয় সাফল্য ॥ স্বাধীনতার ৫০ বছরে অনন্য উচ্চতায় দেশ

Paris
  • মার্চ ৩১, ২০২১, ৬:১৮ অপরাহ্ণ

*অর্থনীতির প্রায় সব সূচকে পাকিস্তানকে টপকে গেছে
*দেশের ৭৩ শতাংশ অগ্রগতি গত ১২ বছরে
*পদ্মা সেতু, মেট্রোরেলসহ মেগা প্রকল্পগুলোর কাজ শেষ হলে পাল্টে যাবে দেশের চেহারা

অনলাইন ডেস্ক:  ১৯৭১ সালে অর্থনৈতিক মুক্তির স্বপ্ন নিয়ে পাকিস্তানী শোষণ-শাসনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিল বাঙালী জাতি। অর্জন স্বাধীন একটি ‘দেশ’। এরপর মুক্ত, যুদ্ধবিধ্বস্ত স্বদেশে বৈষম্যহীন, ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সমাজ গড়ার স্বপ্ন নিয়ে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নেন স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যে পাকিস্তান থেকে আলাদা হয়ে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্ম, ৫০ বছরে অর্থনীতির প্রায় সব সূচকেই টপকে গেছে বাংলাদেশ। শুধু অর্থনীতি নয়, পাকিস্তানের চেয়ে শিক্ষা-সামাজিকসহ সব ক্ষেত্রেই এগিয়ে আছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের হাতে বৈদেশিক মুদ্রার সম্পদের পরিমাণ এখন পাকিস্তানের দ্বিগুণ। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বাংলাদেশের বিদেশী মুদ্রার রিজার্ভ এখন ৪ হাজার ৪০০ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে। একই সময়ে পাকিস্তানের রিজার্ভ ২ হাজার কোটি ডলার। অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, স্বাধীনতা পরবর্তী আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে বাংলাদশের ঈর্ষণীয় সাফল্য অহঙ্কার করার মতো। এই অগ্রগতির জন্য পাকিস্তান এখন ঈর্ষা করে বাংলাদেশকে। তারা বলছেন, দেশে ৭৫ পরবর্তী অর্থনীতির যত পরিবর্তন ঘটেছে তার ৭৩ শতাংশ হয়েছে গত ১২ বছরে। পদ্মা সেতু, মেট্রোরেলসহ মেগাপ্রকল্পগুলোর কাজ শেষ হলে দেশের চেহারা পাল্টে যাবে।

১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি মৃত্যুর দুয়ার থেকে দেশে ফিরে এসে ১২ জানুয়ারি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শাসনভার গ্রহণ করেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। রাজনৈতিক বক্তৃতায় কিংবা সংসদে দেয়া বক্তৃতার সবটা জুড়েই ছিল বাংলার মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির কথা। যে অর্থনৈতিক বৈষম্যের কারণে সোনার বাংলা শ্মশান হয়েছিল পাকিস্তানী আমলে, তিনি সেই শ্মশান বাংলাকে আবার সোনার বাংলায় রূপান্তরের স্বপ্ন নিয়ে মাঠে নামেন। স্বাধীনতার মাত্র চার বছরের মাথায় চরম দুর্ভিক্ষে অসংখ্য মানুষ মারা যায়। আর স্বাধীনতার পর গত চার দশকে বিদেশী রাষ্ট্রের শোষণমুক্ত বাংলাদেশ বেশ পুষ্ট হয়েছে। অর্থনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য ও মানবসম্পদ উন্নয়নে বহু পথ এগিয়েছে। পদ্মা সেতুর মতো বৃহৎ প্রকল্প কোন প্রকার বৈদেশিক সহায়তা ছাড়াই নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ। ২০১৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) এক অনুষ্ঠানে এসে বাংলাদেশের গৌরবময় অর্জনের কথা শুনিয়ে যান নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক অমর্ত্য সেন।

স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের অগ্রগতির ওপর আলোকপাত করে তিনি বলেন, যারা এক সময় বাংলাদেশকে ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ বলে আখ্যায়িত করেছিল তারা আজ এ দেশকে ‘উন্নয়নের মডেল’ মনে করছে। স্বাধীনতার পর এই দীর্ঘ সময়ে বাংলাদেশের অর্থনীতির এ অর্জনকে ‘রোল মডেল’ মনে করছে বিশ্বের অনেক বড় বড় দেশ। অনেক ক্ষেত্রে অনুকরণীয় দৃষ্টান্তও স্থাপন করেছে। দারিদ্র্য বিমোচন, নারী শিক্ষা, মাতৃ ও শিশু মৃত্যুর হার কমানো, তথ্যপ্রযুক্তির বিকাশ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলার মতো বিভিন্ন খাতে বাংলাদেশের অগ্রগতি নজর কেড়েছে বিশ্ব সম্প্রদায়ের।

গত পাঁচ দশকে দেশের আমূল পরিবর্তন ঘটেছে উল্লেখ করে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গবর্নর ড. আতিউর রহমান বলেন, সার্বিক অর্থনীতিতে বাংলাদেশে বিস্ময়কর পরিবর্তন ঘটেছে। যুদ্ধপরবর্তী দেশের অর্থনীতির আকার ছিল ৬.৩ বিলিয়ন। বর্তমানে সেটি দাঁড়িয়েছে ৩৩০ বিলিয়নের বেশি। ১৯৭৫-এর পর থেকে আজ পর্যন্ত যে পরিমাণ অর্থনীতি প্রবৃদ্ধি ঘটেছে তার ৭৩ শতাংশ হয়েছে গত ১২ বছরে। তিনি বলেন, অস্বাভাবিক এ পরিবর্তনের সবচেয়ে বড় অবদান বঙ্গবন্ধুর। কারণ তিনি শক্তিশালী একটি ভিত্তি দাঁড় করে রেখে গেছেন। তিনি জনসংখ্যা কমানোর জন্য নীতি তৈরি করেছিলেন। কৃষি উন্নয়ন, প্রথমিক শিক্ষা জাতীয়করণ, মানবিক উন্নয়ন, এসব এর ভিত্তি তিনিই তৈরি করেছেন। আমাদের রেমিটেন্স বেড়েছে ২৮৫ গুণ। রফতানি আয় ১৩৩ গুণ বেড়েছে। তিনি আরও জানান, গত ১২ বছরে মাথাপিছু আয় বেড়েছে ৩ গুণ, রিজার্ভ ৭ গুণ। চাল উৎপাদন বেড়েছে ৪ গুণ। মাছ সবজি ৬ গুণ। গ্রামীণ অর্থনীতিতে এসেছে বিরাট পরিবর্তন। কৃষির বাইরেও গ্রামের মানুষের আয় বেড়েছে ডিজিটাল ব্যবসায়। পদ্মা সেতু, মেট্রোরেলের কাজ সম্পূর্ণ হলে দেশের চেহারা বদলে যাবে উল্লেখ করে সাবেক এ গবর্নর বলেন, অর্থনীতির এই অগ্রযাত্রা ধরে রাখতে এবং আরও সামনে এগিয়ে যেতে দেশের মেগাপ্রকল্পগুলো দ্রুত শেষ করতে হবে। ব্যবসা-বাণিজ্যের নীতি সহজ করতে হবে। সহজে কিভাবে একজন উদ্যোক্তা ব্যবসা শুরু করতে পারেন, সেদিকে নজর দিতে হবে এবং ঋণের ক্ষেত্রে সহজীকরণ করতে হবে। তবেই বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশ আরও এগিয়ে যাবে।

বাংলাদেশের এমন সাফল্যকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন পাকিস্তানের উন্নয়ন কর্মীরাও। পাকিস্তানের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান দায়িত্ব নেয়ার পরপরই সে দেশের এক টেলিভিশন টক শোতে পাকিস্তানের উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশকে উদাহরণ হিসেবে নেয়ার পরামর্শ দেন উন্নয়নকর্মী ও কলামিস্ট জাইঘাম খান। নিউইয়র্কভিত্তিক একটি জনপ্রিয় বিজনেস পোর্টাল কোয়ার্টজ ডটকম বলেছে, বিশ্ব অর্থনীতিতে অগ্রসরমান এশিয়ার অন্যতম প্রতিনিধিত্বশীল দেশ হচ্ছে বাংলাদেশ। এটি বিশ্বের একমাত্র দেশ ২০২০ এবং ২০২১ এই বছরেই যাদের প্রবৃদ্ধি হবে ২ শতাংশের বেশি।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সর্বশেষ তথ্য বলছে, বাংলাদেশের পাকিস্তানের ছাড়িয়ে যাওয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অর্জনটি ঘটতে যাচ্ছে চলতি ২০২১ সালে। সূচক বিবেচনার বাইরে গিয়ে বাংলাদেশের অর্থনীতি যে পাকিস্তানের চেয়ে বেশি শক্তিশালী তার আত্মপ্রকাশ হবে এ বছরই। যদিও মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) বাংলাদেশ পাকিস্তানকে ছাড়িয়ে গেছে দুই বছর আগে, আর মাথাপিছু জিডিপিতে ছাড়িয়েছে তিন বছর আগে। আইএমএফ বলছে, ক্রয়ক্ষমতার সমতার ভিত্তিতে ২০২১ সালে পাকিস্তান যে পিছিয়ে পড়তে যাচ্ছে সে অবস্থান থেকে পাকিস্তান আর বাংলাদেশকে ধরতে পারছে না সহসাই।

জিডিপি প্রবৃদ্ধি ॥ স্বাধীনতার পরবর্তী (১৯৭৩-৮০ সময়ে) বাংলাদেশে গড়ে ৩.৮ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছিল। বর্তমান দশকে (অর্থবছর ২০১০-১১ থেকে ২০১৯-২০ পর্যন্ত) বাংলাদেশের গড় প্রবৃদ্ধি হার দাঁড়ায় ৬.৭ শতাংশ। সম্প্রতি কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে সারা বিশ্বের প্রবৃদ্ধির গড় হার যেখানেÑ ৩.৫ শতাংশ সেখানে ২০২০ সালে ৫.২৪ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে বাংলাদেশ। কোভিড-১৯ পূর্ববর্তী অর্থবছর ২০১৮-১৯ এ আমাদের প্রবৃদ্ধি ছিল ৮.১৫ শতাংশ। গত পাঁচ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে গড়ে ৭.১ শতাংশ হারে। মহামারীর স্থবিরতা কাটিয়ে চলতি অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি ৭.৪ শতাংশ হবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।

মাথাপিছু আয় ॥ স্বাধীনতার আগে মাথাপিছু আয় ছিল ১০০ ডলারের মতো, ২০১৯-২০ অর্থবছর শেষে তা দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৬৪ ডলার। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কাক্সিক্ষত ফল দারিদ্র্য নিরসনের ক্ষেত্রেও ইতিবাচক প্রভাব রাখতে পেরেছে। দারিদ্র্যের হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। চার দশক আগে দারিদ্র্যের হার ছিল ৭০ শতাংশেরও বেশি। খানা আয়-ব্যয় জরিপ ২০১৬ অনুসারে দারিদ্র্যের হার ২৪.৩ শতাংশে নেমে এসেছে। সর্বশেষ প্রাক্কলন অনুযায়ী ২০১৯ সালে দারিদ্র্যের হার ২০.৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

বিগত পাঁচ দশকে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বিরাট পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। কৃষিনির্ভরতা কমেছে, বেড়েছে ম্যানুফ্যাকচারিং শিল্প ও সেবা খাতের গুরুত্ব। স্বাধীনতার পর যেখানে জিডিপিতে শিল্প খাতের অবদান ছিল মাত্র ৯ ভাগ, তা এখন বেড়ে ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রায় ৩৫ ভাগ হয়েছে, যার মধ্যে ম্যানুফ্যাকচারিং খাতের অবদান ২৪.২ শতাংশ। অন্যদিকে স্বাধীনতার পর যেখানে জিডিপিতে কৃষি খাতের অবদান ছিল ৫০ শতাংশের বেশি, তা এখন হ্রাস পেয়ে ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১৩ শতাংশ হয়েছে।

আমদানি-রফতানি ॥ ১৯৭৪-৭৫ অর্থবছরে দেশের মোট রফতানি আয়ের পরিমাণ ছিল ৩৮৩ মিলিয়ন ডলার। আমদানি ব্যয়ের পরিমাণ ছিল ১.৪ বিলিয়ন ডলার। ২০১৯-২০ অর্থবছরে দেশের রফতানি আয়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৩.৭ বিলিয়ন ডলার, যা ১৯৭৪-৭৫ এর তুলনায় ৮৮ গুণ বেশি। অন্যদিকে আমদানি ব্যয়ের পরিমাণ ২০১৯-২০ অর্থবছরে দাঁড়িয়েছে ৫৪.৮ বিলিয়ন ডলারে, ১৯৭৪-৭৫ সালের তুলনায় ৩৯ গুণ বেশি। এখানে উল্লেখ্য, কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে ২০১৯-২০ অর্থবছরে পূর্ববর্তী কয়েক বছরের তুলনায় গড় রফতানি ও আমদানির পরিমাণ কম ছিল। অর্থবছর ২০১৮-১৯ এ রফতানি ও আমদানি ছিল যথাক্রমে ৪০.৫ ও ৫৯.৯ বিলিয়ন ডলার।

পোশাক খাত ॥ স্বাধীনতা পরবর্তী পাঁচ দশক পর বাংলাদেশে রফতানি খাতে বিশাল পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। ১৯৭২ সালে রফতানি আয়ের ৭০ ভাগ ছিল পাটের দখলে। কৃত্রিম তন্তু আবিষ্কারের ফলে সত্তরের দশকেই পাটের চাহিদা কমে যায়। আশির দশকে ধীরে বিকাশ লাভ করে শ্রমঘন পোশাক খাত। বাংলাদেশ আজ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম গার্মেন্টস পণ্য রফতানিকারক দেশ। বিশ্ববাজারে পোশাক রফতানিতে একমাত্র চীনের পরেই এর অবস্থান। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রফতানি খাত হচ্ছে এই পোশাকশিল্প। মোট রফতানি আয়ের ৮৩ শতাংশই আসছে এ খাত থেকে (অর্থবছর ২০১৯-২০)।

ওষুধ শিল্প ॥ গত এক দশকে ওষুধ শিল্প থেকে রফতানি আয় বেড়েছে এগারো গুণ। বর্তমানে বাংলাদেশের ৪৭টি ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ইউরোপ ও আমেরিকাসহ বিশ্বের প্রায় ১৪৭টি দেশে রফতানি হচ্ছে বাংলাদেশের ওষুধ।

বিদেশে কর্মসংস্থান ও রেমিটেন্স ॥ বর্তমানে বিশ্বের ১৬৮টি দেশে কাজ করছেন বাংলাদেশের প্রায় ১ কোটি ৩২ লাখ কর্মী। প্রতি বছর প্রায় ৭ লাখ কর্মীর বিদেশে কর্মসংস্থান হচ্ছিল, তবে গত ২০২০ সালে কোভিড-১৯ জনিত কারণে মাত্র ২.২ লাখ কর্মীর কর্মসংস্থান হয়। রেমিটেন্স প্রবাহের দিক দিয়ে বাংলাদেশ বর্তমানে বিশ্বে অষ্টম এবং দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে। কোভিড-১৯ সময়ে বাংলাদেশসহ মাত্র ৩টি দেশ রেমিটেন্স প্রবাহে ধনাত্মক ধারায় ছিল। এই রেমিটেন্সের পরিমাণ আমাদের মোট জিডিপির প্রায় ৫.৫ শতাংশ, রফতানি আয়ের অর্ধেক (৫৪ শতাংশ) এবং প্রাপ্ত বৈদেশিক সাহায্যের প্রায় তিনগুণ (নিট বৈদেশিক সাহায্য ৬ বিলিয়ন)। ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রবাসী আয়ের ক্ষেত্রে নতুন রেকর্ড করেছে বাংলাদেশ। আলোচ্য সময়ে দেশে রেমিটেন্স এসেছে ১৮.২ বিলিয়ন ডলার, যা পূর্ববর্তী অর্থবছরের তুলনায় ১০.৯ শতাংশ বেশি। সর্বশেষ জুলাই-ফেব্রুয়ারি ২০২০-২১ সময়ে রেমিটেন্স এসেছে ১৬.৭ বিলিয়ন ডলার যা পূর্ববর্তী বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩৩.৫ শতাংশ বেশি।

রিজার্ভ ॥ ২০২০-২১ অর্থবছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ সালে রিজার্ভ নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করে ৪৪.০২ বিলিয়নে দাঁড়ায়। সর্বশেষ ২০২১ সালের ২৩ মার্চে রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ৪৩.৩৭ বিলিয়ন ডলার। দেশে এ ধরনের বিপুল পরিমাণ রিজার্ভ সৃষ্টি হওয়াটা যে কোন বিচারেই বিরাট অর্জন। কোন দেশের তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর মতো রিজার্ভ থাকলেই তাকে সন্তোষজনক রিজার্ভ হিসেবে গণ্য করা হয়। আমাদের বর্তমান রিজার্ভ দিয়ে দেশের প্রায় নয় মাসের বেশি সময়ের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব।

বাজেটের আকার ॥ ১৯৭৩-৭৪ অর্থবছরে বাংলাদেশের রাজস্ব বাজেট ছিল ২৮০ কোটি টাকা। রাজস্ব ও উন্নয়ন বাজেট মিলে ২০১৯-২০ অর্থবছরে তা প্রায় পাঁচ লাখ এক হাজার কোটি টাকা হয়েছে।

ব্যাংক খাত ॥ ১৯৭২ সালে বাংলাদেশে রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত মাত্র ছয়টি ব্যাংক ছিল। বর্তমানে সরকারী, বেসরকারী ও বিদেশী মিলে মোট ব্যাংক রয়েছে ৬১টি। এসব ব্যাংকের ১০ হাজার ৭৫২টি শাখার সমন্বয়ে বাংলাদেশের বর্তমান ব্যাংকিং নেটওয়ার্ক বিস্তৃত। শহর ও গ্রামের শাখা প্রায় সমান। ডিসেম্বর ২০২০ শেষে সব ব্যাংক শাখায় সাড়ে ১২.২৩ কোটির বেশি আমানতকারী ও প্রায় ১.০২ কোটি ঋণগ্রহীতা রয়েছে। আর মোট আমানত ও ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ১৪ হাজার ১৪৫ ও ১১ হাজার ৫৭ বিলিয়ন টাকা।

খাদ্য উৎপাদন ॥ বাংলাদেশ এখন খাদ্য উৎপাদনে অনেকটাই স্বয়ংসম্পূর্ণ। একাত্তরের তুলনায় খাদ্য উৎপাদন প্রায় পাঁচগুণ (৪.৭৫) বেড়ে দাঁড়িয়েছে চার কোটি ২১ লাখ টন (অর্থবছর ২০১৮-১৯)। গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশ খুব সামান্যই চাল আমদানি করেছে। ফেব্রুয়ারি ২০২০ পর্যন্ত বেসরকারী খাতে মাত্র ০.০৪ লাখ মেট্রিক টন চাল আমদানি করা হয়েছে। জুলাই-ফেব্রুয়ারি ২০২০-২১ সময়ে বাংলাদেশ ধান/চাল রফতানি করে ৮৩.৭ লাখ মার্কিন ডলার আয় করে।

জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ॥ জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার বর্তমানে (সর্বশেষ [প্রক্কলিত] ২০১৯ সালে) ১.৩২ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, সর্বশেষ শুমারি ২০১৭ অনুযায়ী এ হার ১.৩৭ শতাংশ। ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশী নারীরা গড়ে ৬.৩টি সন্তান জন্ম দিতেন, ২০১৯ সালে তা দাঁড়িয়েছে ২.০৪টিতে।

শিশু মৃত্যুর হার ॥ ১৯৭১ সালে শিশু মৃত্যুর হার ছিল ১৪.৬ শতাংশ। ২০১৯ সালে তা ২.৮ শতাংশে নেমে এসেছে। বাংলাদেশে মা-মৃত্যুর হার ২০১৯ সালে ০.১৭ শতাংশে নেমে এসেছে। ২০১৯ সালে প্রতি হাজারে শিশু মৃত্যু হার ২১ এ নেমে এসেছে। বাংলাদেশে মা-মৃত্যুর হার ২০১৯ সালে প্রতি হাজারে ১.৬৫। মানুষের গড় আয়ু পাঁচ দশকের ব্যবধানে ৫০ থেকে বেড়ে ৭২.৬ বছরে দাঁড়িয়েছে।

প্রাথমিক শিক্ষা ॥ প্রাথমিক শিক্ষায় নারী-পুরুষের আনুপাতিক অসাম্য দূরীকরণে বাংলাদেশের সাফল্য বিশাল। প্রাথমিক স্তরে ১৯৯০-এর দশকে ছেলেমেয়ের অনুপাত যেখানে ছিল ৫৫ ঃ ৪৫, নারী শিক্ষার ওপর গুরুত্ব প্রদান ও মাধ্যমিক স্তরে বিনামূল্যে নারী শিক্ষা প্রবর্তনের ফলে বর্তমানে এ অনুপাত দাঁড়িয়েছে ৪৮.৯ ঃ ৫১.১-এ। বর্তমানে ছাত্রের চেয়ে ছাত্রী ভর্তি হার বেশি। ১৯৯১ সালে বাংলাদেশে মোট প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ছিল ৪৯ হাজার ৫৩৯টি, যা ২০১৯ এ বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ২৯ হাজার ২৫৮টি। জাতিসংঘের ২০১৯ সালের প্রতিবেদনে মানব উন্নয়ন সূচকে ১৮৭টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৩৫।

সূত্র: জনকণ্ঠ