ঢাকাশনিবার , ৩ এপ্রিল ২০২১
  • অন্যান্য

চৈত্রের তিস্তা বর্ষার রূপে

  • এপ্রিল ৩, ২০২১, ১:৩৮ অপরাহ্ণ

অনলাইন ডেস্ক:  চৈত্রের খরতাপ চলছে। বৃষ্টির দেখা নেই। অথচ বর্ষাকালের রূপ নিয়েছে তিস্তা নদীর পানি প্রবাহ। নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার পশ্চিম ছাতনাই ইউনিয়নের কালিগঞ্জ জিরো পয়েন্টে দিয়ে উজানের স্রোতে ধারায় পানি প্রবেশ করছে হু-হু করে। যা দ্রুত তিস্তা ব্যারাজ অতিক্রম করে চলে যাচ্ছে ভাটির দিকে। গত কয়েক দিন আগেও নদীর বুকে যে ধু-ধু বালুচর দেখা গিয়েছিল, তা যেন নিমিষেই নদীর পানিতে চাপা পরে গেছে।

হঠাৎ করে উজানের জোয়ারে তিস্তা এখন ভাসছে। দেশের সর্ববৃহৎ তিস্তা ব্যারাজের সেচ প্রকল্পের কমান্ড এলাকার সেচ ক্যানেল গুলো উপচে পরা পানি। চলতি বোরো আবাদে তিস্তা ব্যারাজ কমান্ড এলাকার নীলফামারী, রংপুর, দিনাজপুর জেলার ১১ উপজেলায় ৬৫ হাজার হেক্টরে সেচ প্রদান চলমান রয়েছে।

আজ শনিবার সরেজমিনে দেখা যায়, উজান হতে পানির প্রবাহ নদীজুড়ে বয়ে চলেছে। ডালিয়ার তিস্তা নদীর পানি পরিমাপক অফিস বলছে দুই দিনে উজানের ঢলে তিস্তায় এখন প্রায় ১৫ হাজার কিউসেকের মতো পানি প্রবাহ চলছে। দুই দিন আগে পানি প্রবাহ ছিল মাত্র এক হাজার ৮০০ কিউসেক।

এদিকে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলেরাও মাছ ধরতে ব্যস্ত সময় পার করছে। তিস্তাপাড়ের বাইশপুকুর চরের জেলে রমজান আলী জানালেন নদীর পানি কমে যাওয়ায় মাছও ঠিকমতো পাওয়া যাচ্ছিলনা। দুইদিন ধরে উজানের জোয়ারে নদী এখন পানিতে ভরে গেছে। মাছও পাওয়া যাচ্ছে প্রচুর। তিনি মনে করেন ৬৫ কিলোমিটার উজানে ভারতের গজলডোবা তিস্তা ব্যারাজের জলকপাট খুলে দেয়ায় চৈত্র মাসে তিস্তা নদীতে বর্ষারকালের মতো ঢল নেমেছে।

সংশ্লিষ্ট সুত্র মতে পহেলা এপ্রিল বৃহস্পতিবার তিস্তার পানি প্রবাহ ছিল ৪৯ দশমিক ৭০ মিটার। পরের দিন শুক্রবার একশত সেন্টিমিটার বেড়ে দাঁড়ায় ৫০ দশমিক ৭০ মিটার। আজ শনিবার দুপুর পর্যন্ত আরও ৬৫ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে পানির প্রবাহ দাঁড়ায় ৫১ দশমিক ৩৫ মিটার। পাশাপাশি উজানের ঢলে পানি বৃদ্ধি অব্যহত ছিল। এতে নদীর শুকিয়ে যাওয়া ভাটি অঞ্চলে নদী প্রাণ ফিরে পেয়েছে। উল্লেখ যে তিস্তার ডালিয়া পয়েন্টে বিপদসীমা ৫২ দশমিক ৬০ মিটার। বিষয়টি নিশ্চিত করেন ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের গ্রেডরিডার নুরুল ইসলাম।

এদিকে হঠাৎ করে তিস্তার পানি হু-হু করে বৃদ্ধির বিষয়টি অবাক করে দিয়েছে তিস্তা পাড়ের মানুষজনকে। তিস্তা পাড়ের আবুল কাশেম জানায়, তিস্তা নদীকে যখন দেখি শুকায়ে যায়, তখন হারিয়ে যাওয়া জমি জিরাত বালুর চরে চোখে পড়ে। পুর্ব ছাতনাই গ্রামের হারুন-অর রশিদ জানায়, হঠাৎ শুনতে পাই তিস্তা নদী থেকে স্রোতের শব্দ বাতাসে ভেসে আসছে। অবাক হয়ে ছুটে যাই নদীর পাড়ে। দেখতে পাই উজান থেকে তিস্তা পানি শো-শো শব্দে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। চৈত্র মাসের খরার সময় বর্ষাকালের মতো তিস্তা নদী দেখে খুব ভাল লাগছে। তিস্তা পাড়ের ভাষানীর চরের নৌকা মাঝি মফিজার রহমান (৪২) বললেন, ভারত হয়তো তাদের গজলডোবা ব্যারাজের গেট খুলে দেয়ায় পানির জোয়ার বেড়ে গেছে।

তিস্তা কমান্ড এলাকার সেচ সুবিধাভোগী কৃষক নজির উদ্দিন (৪০) বলেন, তিস্তা নদীতে উজানের পানির জোয়ার বিগত বছরের চেয়ে এবার অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে।

সুত্রটি মতে তিস্তা চুক্তি হয়েছিল সত্তরের দশকে। বিশেষজ্ঞদের দাবি, সিকিমে একের পর এক জলবিদ্যুৎ প্রকল্প, পানীয় জলের একাধিক প্রকল্প গড়ে উঠেছে। তার জেরে তিস্তা চুক্তির বাস্তবায়ন ঝুলে আছে। বিশেষজ্ঞদের দাবি, চুক্তি মেনে পানি বণ্টন করার আগে আরেকবার দুদেশের যৌথ সমীক্ষা প্রয়োজন। কারন “আন্তর্জাতিক চুক্তির ক্ষেত্রে উজান বা ভাটি কোনও দেশেরই অধিকার যেন খর্ব না হয়, তা দেখতে হয়। শুধু রাজনৈতিক কারণে তিস্তা নিয়ে সিদ্ধান্ত নিলে দুদেশেরই ক্ষতি।

এলাকাবাসী জানায়, তিস্তা নদী হলো উত্তরাঞ্চলের জীবনরেখা। তিস্তা তার জলদুগ্ধে উত্তরের মানুষজনের জীবনকে বাঁচিয়ে রাখে। কখনও প্রত্যক্ষ, কখনও পরোক্ষে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী (উত্তরাঞ্চল) জ্যোতি প্রসাদ ঘোষ বলেন, তিস্তায় হঠাৎ পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। যা ভালর দিক বলে মনে করছি আমরা। তিনি জানান, তিস্তা সেচ প্রকল্পউত্তরাঞ্চলের কৃষি ক্ষেত্রে বৈপ¬বিক পরিবর্তন সাধন করেছে। প্রকল্পের কমান্ড এরিয়ার ১ লাখ ১৬ হাজার হেক্টর জমির তৃণমূল পর্যায়ে সেচের পানি পৌঁছে দিতে ৭৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ সেকেন্ডারি আর টারসিয়ারি সেচ ক্যানেল নির্মাণে একটি বিশেষ প্রকল্প হাতে নিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৪৭৫ কোটি টাকা।প্রকল্পটি একনেকে পাস হলেই সেকেন্ডারি সেচ ক্যানেলগুলোতে করা হবে সিসি লাইনিং আর টারসিয়ারি ক্যানেলগুলোতে দেয়া হবে আরসিসি ঢালাই। এতে পানির অপচয় ছাড়াই খুব দ্রত পানি পৌঁছে যাবে জমিতে।

সূত্র: জনকণ্ঠ