আসলাম লিটন, রাজশাহী: ২৭ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার ছিল মুক্তিযুদ্ধ কালীন ৭ নম্বর সেক্টরের প্রথম সেক্টর কমান্ডার শহীদ মেজর নাজমুল হকের জীবন অবসানের দিন। খুবই দু:খজনক নিরবে রাজশাহীতে দিনটি পার হয়ে গেল। তাঁকে নিয়ে যারা বড় বড় কথা বলে নিজেকে জাহির করেন, তারা ছিলেন নিশ্চুপ। হয়তো তাদের তাকে মনে নেই বা তার সম্পর্কে কিছুই জানা নেই, তবে সুযোগ সুবিধা নেবার ক্ষেত্রে ইনারা বেশ তৎপর। বীর মুক্তিযোদ্ধা মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখা ৭ নং সেক্টরের প্রথম সেক্টর কমান্ডার শহীদ মেজর নাজমুল হকের প্রতি অবজ্ঞা কেন? কে দেবেন এর জবাব? যতটুকু জেনেছি চট্টগ্রামের এই নাজমুল হক পাকিস্তান সেনা বাহিনীতে যোগ দেন। তাকে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে পূর্ব পাকিস্তানের নওগাঁ ইপিআর ৭ নং উইং এর অধিনায়কের দ্বায়িত্ব দিয়ে পাঠালে অবাঙ্গালী অধিনায়ক আকরাম তাকে দ্বায়িত্ব বুঝিয়ে না দিয়ে সড়যন্ত্র করে। এ সময় সারাদেশ বঙ্গবন্ধুর ডাকে উত্তাল, চলছে অসহযোগ আন্দোলন, প্রতিরোধের প্রস্তুতি। নওগাঁর রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব আব্দুল জলিলসহ অনান্যরা বিষয়টি অবগত হয়ে তাকে অপেক্ষা করেতে বলেন। এরই মধ্যে চলে আসে ২৫ মার্চ, বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ডাক।
নওগাঁ ইপিআর উইংয়ে স্বাধিন বাংলার পতাকা তোলা ও যোদ্ধাদের সাহসী করতে তার ভুমিকা ছিল। তিনি সহঅধিনায়ক ক্যাপ্টেন গিয়াস উদ্দিন আহমেদ চৌধুরীর সাথে আলোচনা করে ১২টি পরিকল্পনা নেন। রাজশাহীতে একটি ফ্রন্ট খোলার বিষয়ে গুরুত্ব দেন। তারই পরিকল্পনায় ক্যাপ্টেন গিয়াসউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী রাজশাহীতে এসে গণযোদ্ধাদের নিয়ে রাজশাহী ক্যান্টনমেন্টে পাকিস্তানী সৈন্যদের অবরোধ করেন। নাজমুল হক বগুড়াতেও ভুমিকা রাখেন। ১৩ এপ্রিল ঢাকা থেকে আসা পাকিস্তাসী সৈন্যদের তীব্র আক্রোমনে প্রতিরোধ ভেঙ্গে গেলে মেজর নাজমুল হক নওগাঁর দিকে এবং ক্যাপ্টেন গিয়াস উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী চাঁপাই নবাবগঞ্জের দিকে চলে যান। মেজর নাজমুল হক সীমান্ত পার হলে তাকে ৭ নম্বর সেক্টরের অধিনায়ক নিযুক্ত করা হয়। তার ছিল ব্যতিক্রম সুদুরপ্রসারী রণকৌশল। তিনি যোদ্ধাদের সাথেই ক্যাম্পে থাকতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করতেন। এ্যাকশন ওপারেশনে নিজে নেতৃত্ব দিয়ে সফলও হয়েছিলেন। মিত্রবাহিনীর কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক শেষে ক্যাম্পে ফেরার সময় ২৭ সেপ্টেম্বর সড়ক দূর্ঘটনায় নিহত হন। তার স্থলে দ্বায়িত্ব দেওয়া হয় কর্ণেল কাজি নুরুজ্জামান কে। “জয়যাত্রা” নামে একটি পত্রিকায় অনেক আগে একটি সাক্ষাতকারে তিনি বলেন মেজর নাজমুল হকই প্রথম সেক্টর কমান্ডার। দীর্ঘদিন তাকে মর্যাদা দেবার দাবি উত্থাপিত হলে বিষয়টি বঙ্গবন্ধু কণ্যা আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি গোচর হয়। তাঁর হস্তক্ষেপে কমান্ডার শহীদ মেজর নাজমুল হককে সেক্টর কমান্ডারের মর্যাদা দেওয়া হয়। কিন্তু আজও তিনি পদক বিহীন সেক্টর কমান্ডার মুুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেও পাননি কোন পদক। পাশের ছোট্ট অঞ্চল নওগাঁতে দিনটি পালিত হলেও স্বাধীনতা আন্দোলন মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা রাখা রাজশাহীতে দিনটি পালিত হলো না। এ লজ্জা কার? হায়রে… হতভাগা আমরা…