ঢাকারবিবার , ১৮ জুন ২০২৩
  • অন্যান্য

killed journalist is Nadeem

সাংবাদিক নাদিম হত্যা/ ইউপি চেয়ারম্যান বাবুর উত্থানের নেপথ্য কাহিনী

  • অনলাইন ডেস্ক

    জুন ১৮, ২০২৩, ৯:০৬ অপরাহ্ণ
ইউপি চেয়ারম্যান বাবু

সাংবাদিক নাদিম হত্যা/

বহুল আলোচিত জামালপুরের সাংবাদিক গোলাম রাব্বানী নাদিম হত্যা মামলার প্রধান আসামি বকশীগঞ্জের সাধুরপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগনেতা মাহমুদুল আলম বাবু গ্রেপ্তার হয়েছে। এই হত্যাকান্ডের মূল পরিকল্পনাকারী ও নির্দেশদাতা মাহমুদুল আলম বাবু প্রভাব প্রতিপত্তি নিয়ে এলাকার মানুষ মুখ খুলতে শুরু করেছে।

স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, বকশীগঞ্জে সাধুরপাড়া ইউনিয়নের কামালের বার্ত্তী গ্রামের মৃত সায়েদুল হকের ছেলে মাহমুদুল আলম বাবু রাজনীতিতে আসার আগে তার নিজ গ্রামের বাড়িতে মুদির দোকান চালিয়ে কোনো রকমে দিন যাপন করতেন। পরে তার এক চাচাতো ভাই ইঞ্জিনিয়ার হারুনের ঠিকাদারি লাইসেন্সে তার সহযোগিতায় বিভিন্ন মোবাইল কোম্পানির টাওয়ার নির্মাণ কাজ শুরু করেন তিনি। সেই থেকে অর্থ উপার্জন শুরু হয় তার। এভাবেই দিন পাল্টে যেতে থাকে তার।

এলাকাবাসীরা জানায়, পুলিশের অবসর প্রাপ্ত এক ডিআইজির চাচাত ভাই পরিচয় দিয়ে বকশীগঞ্জে নানা অপকর্ম শুরু করেন মাহমুদুল আলম বাবু। ছাত্রজীবনে তিনি জাতীয় পার্টির ছাত্রসংগঠন জাতীয় ছাত্রসমাজের রাজনীতি করলেও পরবর্তীতে ভোল পাল্টে রাজনীতি ছেড়ে কিছু দিন নিরপেক্ষতার ভান ধরে।

এলাকাবাসীরা আরো জানায়, ১৯৯৪-৯৫ সালের দিকে জাতীয় ছাত্রসমাজের প্রথম সারির কর্মী হিসেবে পরিচিত ছিল তার। ঠিকাদারি করে টাকা পয়সা কামিয়ে ২০১১ সালে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে ভিড়েন বাবু। এরপর ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর অনেকের মতো বাবুও আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করেন। পরবর্তীতে ২০১১ সালে আওয়ামী লীগে ভিড়েই ইউপি নির্বাচনে অংশ নিয়ে পাশ করতে না পারলেও ২০১৪ সালে সাধুরপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ বাগিয়ে নিতে সক্ষম হন তিনি।

তারপর থেকে বকশীগঞ্জ উপজেলা তথা জেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় হন তিনি। সাধুরপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক থাকায় খুব সহজেই ২০১৬ সালে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে স্থানীয় সংসদ সদস্যকে ম্যানেজ করে আওয়ামী লীগের টিকিট পান মাহমুদুল আলম বাবু।

কশীগঞ্জ উপজেলার সাধুরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে ব্যাপক অনিয়মের মাধ্যমে তাড়াতাড়ি নিজের অবস্থান পাকাপোক্ত করতে সক্ষম হন বাবু।

জানা যায়, নারীলোভী বাবু সবসময় টাকা আর ক্ষমতার দম্ভ দেখিয়ে চলতেন। চেয়ারম্যান হওয়ার পর থেকে বাবু আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। তিনি হয়ে যায় সাধুরপাড়া ইউনিয়নের অঘোষিত বাদশা। ২০১৬ সালের নির্বাচনের বিজয় তার জীবনে যেন চিরস্থায়ী আশীর্বাদ হয়ে ফিরে আসে। ২০১৪ সালে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সম্মেলনের পর আর কোনো সম্মেলন হয়নি, তাই পদে থেকে ২০২১ সালে ফের আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে আবারও ফিরে আসেন সাধুরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবু।

একদিকে দুই বারের নৌকার চেয়ারম্যান, অন্যদিকে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নয় বছরের টানা সাধারণ সম্পাদক। এই ক্ষমতায় ঠেকায় কে তাকে? তার ছেলে বকশীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্মআহ্বায়ক ফাহিম ফয়সাল রিফাতও তার বাবার মতোই বেপরোয়া হয়ে ওঠে ক্ষমতার দম্ভে। সেই মাহমুদুল আলম বাবু আজ অঢেল সম্পদের মালিক এবং বিলাসী জীবনযাপন করেন। একসময় যে বাবুর দিন আনতে পানতা ফুরাতো, সেই বাবু তার গ্রামের বাড়ি কামালের বার্ত্তী বাজারে পাঁচবিঘা জমিতে তিনতলা ভবনসহ গড়ে তুলেছেন বিশাল মার্কেট। ওই বাজারে তিনি আরো একটি দ্বিতল মার্কেট নির্মাণ করছেন।

এদিকে বাবুর নেতিবাচক চরিত্র ফাঁস হয় যখন তার দ্বিতীয় স্ত্রী সাবিনা আক্তার দৃশ্যপটে আসেন। স্থানীয় এলাকাবাসী জানান, সাবিনাকে তিনি দুইবার বিয়ে করেন। দ্বিতীয়বার বিয়ের পর সাবিনার কোলে বাচ্চা আসার পর থেকেই বাবু সাবিনাকে স্ত্রী হিসেবে অস্বীকার করে। যখন সাবিনা তার অধিকার ফিরে পেতে চায়, তখন দুঃসাহসিক সংবাদকর্মী গোলাম রব্বানী নাদিম একের পর এক তার বিরুদ্ধে এক সংবাদ প্রকাশ করতে থাকে। এতেই ক্ষীপ্ত হয়ে ওঠে বাবু। বারবার বাবুর বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করায় নাদিম ও অন্যদের নামে সাইবার ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করেন তিনি।

কিন্তু মামলার মেরিট না থাকায় তা খারিজ করে দেন ময়মনসিংহের সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক। মামলা খারিজের চার ঘণ্টার মধ্যে হামলার শিকার হন সাংবাদিক নাদিম। সাংবাদিক ও সচেতন নাগরিকদের ধারণা, বাবু হয়তো জানতেন নাদিমকে কোনোভাবেই আটকানো যাবে না। তাই আগে থেকেই পরিকল্পনা করতে থাকে তাকে কীভাবে শায়েস্তা করা যায়। মামলা দিয়েও ব্যর্থ হয়ে পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক নাদিমকে মেরে ফেলার নীল নকশা তৈরি করে বাবু ও তার পোষা সন্ত্রাসীরা। এরই অংশ হিসেবে বাবু নিজে উপস্থিত থেকে হামলার নেতৃত্ব দেয় বলে জানিয়েছেন নাদিমের সহকর্মী এবং সহযোগী সাংবাদিক মুজাহিদ বাবু।

সূত্র: জনকণ্ঠ