প্রণোদনা পাচ্ছে আদিবাসীরা/
শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার ভারত সীমান্তঘেঁষা খলচান্দা কোচপাড়া গ্রামের বসবাসরত কোচ আদিবাসীদের তৈরিকৃত ঐতিহ্যের পোষাক রাঙ্গা লেফেন ( এক ধরনের শাড়ি) বিলুপ্ত হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করতে উদ্যোগ নিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। এরজন্য সরকারি প্রণোদনা পাচ্ছে খলচান্দা গ্রামের কোচ আদিবাসীরা।
সরেজমিনে জানা গেছে, আদিকাল থেকে খলচান্দা গ্রামের কোচ আদিবাসী নারীরা নিজেদের উদ্যোগে কাঁঠ ও বাঁশের যন্ত্রাংশ দিয়ে তাঁতযন্ত্র বানিয়ে তাতে রঙ্গিন সুতা দিয়ে বাড়ির আঙ্গিনায় বসে নিজ হাতে বুনন করতেন তাদের ঐতিহ্যের পোষাক রাঙ্গাপাতি বা রাঙ্গা লেফেন। যা পরিধান করে বছর জুড়ে তাদের পারিবারিক বস্ত্রের চাহিদা মিটতো।
লেফেন হাতে আদিবাসী নারী
এমনকি কোচ আদিবাসীদের নিজেদের ঐতিহ্যের প্রকাশ ঘটতো এই রাঙ্গা লেফেন পরিধানের মাধ্যমে। তাই এই কোচপল্লীর প্রতিটি ঘরেই ছিল এই নিজস্ব তাঁতযন্ত্র। এই যন্ত্র দিয়ে কোচ নারীরা নিজেদের পরিধানের জন্য নিজ হাতে তৈরি করতেন রাঙ্গা লেফেন। এখন ওই গ্রামে দুই একটি বাড়িতে এই যন্ত্র থাকলেও সুতা সংকটে কেউ আর লেফেন বুনন করেন না।
এছাড়া কালক্রমে নানা প্রতিকূলতায় ও আর্থিক দৈন্যতায় হারিয়ে যাওয়ার উপক্রম হচ্ছিল এই কোচদের তাঁত শিল্প। সম্প্রতি সীতারাণী নামের কোচ রমনী নিজ হাতে রাঙ্গা লেফেন বুননের খবর বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। এতে তাদের তাঁত শিল্পের নান সমস্যার কথা উল্লেখ করা হয়।
এমন খবরে ওই গ্রামে ছুটে যান নালিতাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খৃষ্টফার হিমেল রিছিল। তিনি কোচ নারীদের নানা সমস্যার কথা শুনে তাদের তাঁত শিল্প ও ঐতিহ্যের পোষাক রাঙ্গা লেফেনকে টিকিয়ে রাখতে জরুরি উদ্যোগ গ্রহণ করেন।
ওই গ্রামের বাসিন্দা সীতারাণী কোচনী বলেন, নানা সংকটের কারণে আমরা তাঁতের মাধ্যমে রাঙ্গা লেফেন বুনন করতে পারছিলাম না। একদিন আমার পরিবারের সদস্যদের জন্য নিজ যন্ত্রে একটি লেফেন তৈরি করছিলাম। এ নিয়ে সংবাদপত্রে খবর প্রকাশ হয়। পরে সরকারিভাবে এডিপির অর্থায়নে তাঁতশিল্প ঘর নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় একটি টিনশেড ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে। এখানে ১০-১২জন কোচ নারীরা প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে তাদের ঐতিহ্যের পোষাক রাঙ্গা লেফেন তৈরি করতে পারবেন। এর জন্য আমরা পাশ্ববর্তী ঝিনাইগাতী উপজেলার হালচাটি গ্রামের এক কারিগরকে ১১ টি তাঁতযন্ত্র বানানোর জন্য অর্ডার দিয়েছি।
কোচদের রাঙা লেফেন সাধারণত ৬ হাত লম্বা হয়। এর বর্তমান বাজার দর ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা।
এ ব্যাপারে নালিতাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খৃষ্টফার হিমেল রিছিল বলেন, সরকারি প্রণোদনার আওতায় খলচান্দা গ্রামের কোচ আদিবাসীদের ঐতিহ্যের পোষাক রাঙ্গা লেফেনকে টিকিয়ে রাখতে এডিপির প্রকল্পে ওই গ্রামে একটি টিনশেড ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে। সেখানে তাঁতযন্ত্র বিতরণ করা হবে। এছাড়া ওই গ্রামে কোচদের তাঁতশিল্প টিকিয়ে রাখতে কোচ নারীদের নিয়ে একটি সমিতিও গঠন করা হবে।
সুতা সংকটের বিষয়ে তিনি বলেন, সহজে সুতা প্রাপ্তির বিষয়ে কোচ তাঁতীদের উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হবে।
সূত্র: জনকণ্ঠ