মৌসুমি ফলগুলোর মধ্যে আতা ফল দেশের প্রায় সব এলাকায় পাওয়া যায়। এই ফলে রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্যকর উপাদান যা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এতে ক্যালরির পরিমাণ অনেক বেশি থাকে। এ ছাড়া কিছু ভিটামিন, প্রোটিন ও যথেষ্ট পরিমাণ মিনারেলও আছে। আতা ফলে প্রধান ভিটামিন উপাদানগুলোর মধ্যে ভিটামিন-সি, ভিটামিন-বি কমপ্লেক্স রয়েছে। মিনারেল উপাদানগুলোর মধ্যে পটাসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, আয়রন অন্যতম। ফলে আতা ফল মানসিক সুস্থতায় টনিক হিসেবে কাজ করে।
মিষ্টি জাতীয় আতা ফল হাঁপানি প্রতিরোধে সাহায্য করে। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের জন্য আতা ফল বেশ উপকারী ভূমিকা রাখে। এটি রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা কমাতে বেশ কার্যকর। ফলের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ফাইবারের উপস্থিতি থাকার কারণে এটি চিনির শোষণ কমিয়ে দেয়। প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ থাকায় আতা ফল ত্বক, চুল এবং চোখের জন্য উপকারী। এটি ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখে, তারুণ্য ধরে রাখে। আতা ফল গর্ভপাতেরও ঝুঁকি কমায়। গর্ভাবস্থায় আতা ফল খেলে দুর্বলতা দূর করে। এ ছাড়া নিয়মিত এটি খেলে মায়ের বুকেও পর্যাপ্ত দুধ তৈরি হয়। সাধারণত এপ্রিল থেকে জুন মাসের মধ্যে আতাগাছে ফুল ধরে এবং ৪/৫ মাসের মধ্যে আগস্ট থেকে সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে ফল পেকে যায়। আতা ফল হৃৎপিন্ড আকৃতির হয়ে থাকে।
প্রতি ১০০ গ্রাম আতা ফল থেকে যে পরিমাণ পুষ্টি পাওয়া যায় তা হলো-শর্করা ২৫ গ্রাম, পানি ৭১.৫ গ্রাম, প্রোটিন ১.৭ গ্রাম, ভিটামিন-এ ৩৩ ওট, ভিটামিন-সি ১৯২ মিলিগ্রাম, থিয়ামিন ০.১ মিলিগ্রাম, রিবোফ্লাবিন ০.১ মিলিগ্রাম, নিয়াসিয়ান ০.৫ মিলিগ্রাম, প্যানটোথেনিক এসিড ০.১ মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম ৩০ মিলিগ্রাম, আয়রন ০.৭ মিলিগ্রাম, ম্যাগনেসিয়াম ১৮ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ২১ মিলিগ্রাম, পটাসিয়াম ৩৮২ মিলিগ্রাম, সোডিয়াম ৪ মিলিগ্রাম।
আতা ফলে প্রচুর পরিমাণে আমিষ ও শর্করা জাতীয় খাদ্য উপদান রয়েছে। পাকা আতার শাঁস মিষ্টি হয়ে থাকে। খাওয়ার সময় জিভে চিনির মতো মিহি দানা দানা লাগে। তা ছাড়া আতা ফলের কিছু ভেষজগুণ রয়েছে। যেমন-পাকা আতার শাঁস বলকারক, বাত-পিত্তনাশক ও বমনরোধক। আতা ফলে রিবোফ্লাভিন ও ভিটামিন-সি এর উপস্থিতির কারণে চমৎকার যা চোখের দৃষ্টিশক্তি স্বীকার সহায়তা করতে পারে। এর খাদ্য আঁশ হজমশক্তি বৃদ্ধি করে ও পেটের সমস্যা দূর করে। এর পটাশিয়াম ও ভিটামিন বি-৬ রক্তের উচ্চচাপ নিয়ন্ত্রণ করে এবং হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়।
আতা ফলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-সি, যা একটি উন্নতমানের এন্টি-অক্সিডেন্ট এবং ফ্রি রেডিক্যাল নিয়ন্ত্রণে রক্ষা করে। এ ছাড়া ত্বকে বার্ধক্য বিলম্বিত করে। আতা ফলের ম্যাগনেয়িাম মাংসপেশির জড়তা দূর করে এবং হৃদরোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে। চোখ, চুল নখ ও ত্বকের জন্য আতা ফল খুবই উপকারী। আতা ফলের খাদ্য উপাদান এনিমিয়া প্রতিরোধ করে। যা স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারী। আতা গাছের শেকড়ের ছাল আমাশয়ের ওষুধ ও আতা ফলের শাঁসের রস রক্তের শক্তি বৃদ্ধিকারক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এ ছাড়া যে ফোঁড়া পাকেও না আবার বসেও না, এমন ফোঁড়ায় আতার বীজ বা পাতা বেটে সামান্য লবণ মিশিয়ে প্রলেপ দিলে ফোঁড়া পেকে পুঁজ বের হয়ে যায়। বিস্ময়কর হলেও সত্য যে, আতা গাছের পাতার রস উকুন নাশক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বাজারে অনেক ফলে ফরমালিন ব্যবহার করা গেলেও আতা ফলে ফরমালিন ব্যবহার করা যায় না। বর্তমানে হাইব্রিড জাতের আতা ফল উৎপাদন করা হচ্ছে। যাতে আসল আতা ফলের স্বাদ বা গুণাগুণ থাকে না।
বরিশালের গৌরনদীর আমেনা বেগম হোমিও প্যাথিক কলেজের প্রভাষক ডা. শাহনাজ রুবী বলেন, আতা ফলে পটাশিয়াম ও ম্যাগনেশিয়ামের ভালো উৎস হওয়ায় আতাফল উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। যাদের রক্তচাপ ওঠানামা করে তা নিয়ন্ত্রণে আনতে নিয়মিত আতা ফল খেতে পারেন। এ ছাড়া কোলেস্টেরল কমাতেও এটি ভূমিকা রাখে। স্তন ক্যানসার প্রতিরোধে আতা গাছের পাতার নির্যাস কার্যকরী ভূমিকা রাখে। এটি স্তনের মধ্যে থাকা বিষাক্ত টক্সিনকে দূর করতে সাহায্য করে। আতা ফলের চামড়া ব্যবহার করলে দাঁত পরিষ্কার থাকে। এটি দাঁত ক্ষয় রোধ করে এবং মাড়িকে আরও মজবুত করে।
ডা. কাজী শিউলীর মতে, আতা ফলে থাকা ভিটামিন-সি একটি শক্তিশালি এন্টি-অক্সিডেন্ট। যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউনিটি বাড়ায়।
এ ছাড়া ভিটামিন-সি ক্যান্সারের মতো মারাত্মক রোগ সৃষ্টিকারী ফ্রি রেডিক্যালস প্রতিরোধেও সহায়তা করে। তিনি আরও বলেন, আতা ফলের মধ্যে সবেচেয়ে বেশি থাকে ভিটামিন-বি কমপ্লেক্স। ভিটামিন বি-৬ নিউরো ট্রান্সমিটারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। স্ট্রেসফুল জীবনযাপনের কারণে অনেক বেশি হতাশা বা হীনমন্যতা তৈরি হয়। এসব হতাশা প্রতিরোধে ভিটামিন বি-৬ খুব বেশি সহায়তা করে। এ কারণে মানসিক সুস্থতার জন্য আতা ফল সবচেয়ে কার্যকরী।
বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. মীর্জা মাহবুব আলম জনকণ্ঠকে বলেন, আতা ফলে অন্য একটি উপাদান ক্যারটিন অয়েড। যা আমাদের চোখের সুস্থতায় এবং দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এ ফলটিতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার রয়েছে। যা আমাদের শরীরের হজম প্রক্রিয়ায় সহায়তা করে। পাশাপাশি আতা ফলে থাকা খনিজ উপাদানগুলো আমাদের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। হার্টের মারাত্মক রোগ প্রতিরোধেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
সূত্র: জনকণ্ঠ