‘স্বামী আলী হোসেন মোল্লা (৩৭) তার স্ত্রী ফিরোজাকে ইনজেকশন দিয়ে অচেতন করে। এরপর হত্যা করে লাশ বস্তায় পুরে বাড়ির টয়লেটের ট্যাঙ্কির (রিংয়ের) ভেতর ফেলে দেয়। ওপরে চালের বস্তা দিয়ে স্লাব ঢেকে আটকে দেয়। কেউ যেন কিছু টের না পায়, এ জন্য সে ওই বাড়িতে থেকে স্বাভাবিক চলাফেরা করছিল। হত্যার চার দিন পর ‘স্ত্রী নিখোঁজ’ উল্লেখ করে গত ৩ আগস্ট নিজে বাদী হয়ে থানায় জিডি করে।’ আটক আলী হোসেন রবিবার বিকেলে বাগেরহাট আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এ কথা জানিয়েছে বলে বাগেরহাট সদর মডেল থানার ওসি কে এম আজিজুল ইসলাম জানান।
এর আগে এদিন সকালে এ ঘটনায় নিহতের মেয়ে পূর্ণিমা বেগম বাদী হয়ে তার বাবা আলী হোসেন-সহ কয়েকজন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির নামে মামলা দায়ের করেছেন। এদিন আলী হোসেনকে আদালতে সোপর্দ এবং বাগেরহাট মর্গে নিহত ফিরোজা বেগম ওরফে রুমার ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করা হয়েছে।
হত্যার এক সপ্তাহ পর নিহতের মেয়ে ও জামাতার সহায়তায় বাগেরহাট সদর উপজেলার কাড়াপাড়া ইউনিয়নের দেওয়ানবাটি গ্রামের অকুস্থল থেকে শনিবার বিকেলে পুলিশ লাশ উদ্ধার এবং ঘাতক স্বামী আলী হোসেন মোল্লাকে আটক করে।
প্রথম স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদের পর একমাত্র মেয়ে পূর্ণিমাকে নিয়ে বাবার বাড়ি থাকতেন ফিরোজা বেগম। এরপর আর বিয়ে না করে ১৭ বছর কাটিয়ে দেন। এরমধ্যে মেয়ে পূর্ণিমাকে পিরোজপুর জেলার ভান্ডারিয়া উপজেলার কারিকরপাড়া গ্রামের রায়হান ব্যাপারীর সাথে বিয়ে দেন।
কিন্তু দেড় বছর আগে একদিন থানায় একটি জিডি করতে গিয়ে পরিচয় হয় আলী হোসেন মোল্লার সাথে। এর দুই দিন পরই পরিবারকে না জানিয়ে তারা বিয়ে করে। দ্বিতীয় স্বামীকে নিয়ে দেওয়ানবাটি গ্রামে বাবা গফুর মোল্লার বাড়িতেই থাকতেন ফিরোজা। মাঝে মধ্যে তাদের মধ্যে ঝগড়া হত। এক পর্যায়ে স্বামী হোসেন আলী পরিকল্পিতভাবে ইনজেকশন দিয়ে অচেতন করে হত্যা করে স্ত্রী ফিরোজাকে। লাশ বস্তায় পুরে ফেলে দেয় বাড়ির শৌচাগারের রিংয়ের ভেতরে।
নিহতের মেয়ে পূর্ণিমা বেগম বলেন, বিয়ের পর থেকে আলী হোসেন আমার মাকে মারধর করত। আলী হোসেনকে মা দুটি মোটরসাইকেল কিনে দিয়েছিল। আলী হোসেন মায়ের কাছ থেকে অনেক টাকা নিয়েছে। একবার প্লাস দিয়ে মায়ের দাঁত তুলে ফেলেছিল। কয়েকবার ছুরি দিয়ে আমার মাকে জবাই করতে চেয়েছে। তার দাবি, আলী হয়তো একা তার মাকে হত্যা করতে পারেননি। তাঁর স্বাস্থ্য যেমন, তাতে তাঁর পক্ষে একা খুন করে শৌচাগারের ভেতরে ফেলা সম্ভব নয়। এই হত্যার সঙ্গে নিশ্চয়ই আরও কেউ জড়িত থাকতে পারে।
ফিরোজার জামাতা রায়হান ব্যাপারী বলেন, ‘প্রায় এক সপ্তাহ ধরে আমার স্ত্রী ফোন করে তার মায়ের সঙ্গে কথা বলতে পারছিল না। এর মধ্যে চার দিন আগে আলী হোসেন ফোনে করে জানায়, আমার শাশুড়িকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। আমরা আসতে চাইলে বলে, আসার দরকার নেই। কোথায় যেন গেছে, পাওয়া যাবে।” একপর্যায়ে শনিবার(৫ আগস্ট) পিরোজপুর থেকে আমরা দেওয়ানবাটি গ্রামে আসি। এখানে এসে মায়ের ঘরে ঢুকতেই দেখি, শৌচাগারের চারপাশে নতুন মাটি এবং একটা উৎকট গন্ধ। তখন কী হয়েছে জানতে চাইলে আলী হোসেন দ্রুত পালাতে চেষ্টা করে। পরে স্থানীয় ব্যক্তিদের সহায়তায় আমরা তাকে ধরে ৯৯৯ নম্বরে ফোন করলে পুলিশ এসে তাকে আটক করে নিয়ে যায়।’
নিহতের চাচা বারিক মোল্লা বলেন, শনিবার (২৯ জুলাই) রাত রাত থেকে ফিরোজা নিখোঁজ হয়। আলী হোসেন বলে, আপনাদের মেয়ে চলে গেছে। হয়ত পরে আসবে। এরপর থেকে আর ফিরোজাকে পাইনি।
এদিকে এঘটনায় বাগেরহাটে সর্বত্র ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। এ বিষয়ে বাগেরহাট মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কে এম আজিজুল ইসলাম বলেন, খবর পেয়ে আমরা তাৎক্ষণিক সেখানে ছুটে যাই এবং আলী হোসেনকে আটক ও লাশ উদ্ধার করি। হত্যার মূল কারণ ও হত্যার সঙ্গে অন্য কেউ জড়িত আছেন কি না, এ বিষয় সে স্বীরোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।