কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় জাসদ নেতাকর্মীদের হামলায় গুরুতর আহত পৌর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি সঞ্জয় কুমার প্রামাণিক ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে জাসদ নেতা ও স্বজনদের বাড়িঘর ও দোকানপাট ভাংচুর এবং অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এসময় আওয়ামী লীগের বিক্ষুদ্ধ নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে এক পুলিশ সদস্যসহ আটজন আহত হয়েছেন। টানা আটদিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর বুধবার (৯ আগস্ট) সকাল ৮টা ৪০ মিনিটে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় সঞ্জয় কুমার প্রামাণিকের।
ভেড়ামারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জহুরুল ইসলাম সঞ্জয়ের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি সঞ্জয় কুমার প্রামাণিকের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে আওয়ামী লীগ-স্বেচ্ছাসেবক লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ সহযোগী সংগঠনের বিক্ষুদ্ধ নেতাকর্মীরা রাজপথে নেমে পড়লে উত্তাল হয়ে ওঠে গোটা ভেড়ামারা শহর। বেলা ১১টার দিকে বিক্ষুদ্ধ নেতাকর্মীরা টায়ার জ্বালিয়ে ভেড়ামারা-কুষ্টিয়া, ভেড়ামারা-দৌলতপুর ও ভেড়ামারা-পাবনা মহাসড়ক অবরোধ করেন। স্কুল ও কলেজসহ সড়কে যানবাহন চলাচল, বাজারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেন। বিক্ষোভকারীরা ভেড়ামারা পৌর এলাকার একটি তিনতলা বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেন। এসময় কয়েকটি দোকানপাট ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।
এসময় পুলিশের সঙ্গে বিক্ষুদ্ধ নেতাকর্মীদের কয়েক দফা ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে রিয়াজুল নামের পুলিশের এক কনস্টেবলসহ আটজন আহত হন। তাদের মধ্যে কয়েকজনকে ভেড়ামারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
ভেড়ামারা ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার শরীফুল ইসলাম জানান, ভেড়ামারা শহরের এক কিলোমিটার এলাকার মধ্যে চারটি বাড়ি ও দুটি দোকানে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। ভেড়ামারা ফায়ার সার্ভিসের দুটি এবং মিরপুরের একটি ইউনিট বেলা ১১টা ১০ মিনিট থেকে কাজ শুরু করে। বিকেল ৪টার দিকে আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হন তারা।
তবে, তাৎক্ষণিকভাবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা যায়নি। ভেড়ামারা থানার ওসি জহুরুল ইসলাম বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। কোথাও যাতে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সেজন্য ভেড়ামারা শহরের মোড়ে মোড়ে ব্যাপক সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন রাখা হয়েছে।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শামিমুল ইসলাম ছানা বলেন, হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার ও হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হলে কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে। এ বিষয়ে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক সোলাইমান হোসেন বলেন, ‘হামলার নেতৃত্ব দেওয়া মোস্তাফিজুর রহমান শোভন একজন চিহ্নিত সন্ত্রাসী। সে এ পর্যন্ত বহুজনকে আহত করেছে। আগামী দুর্গাপূজা উদযাপনের জন্য মেলার মাঠ দখল নিতে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িতে হামলা চালায় শোভন ও তার ক্যাডার বাহিনী। আমাদের দলের নেতা সঞ্জয় প্রামাণিক এর প্রতিবাদ করায় পরিকল্পিতভাবে তাকে হামলা চালিয়ে হত্যা করা হয়েছে।’
গত ২ আগস্ট রাত ১১টার দিকে ভেড়ামারা পৌর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি সঞ্জয় কুমার প্রামাণিক (৩৫) দলীয় মিটিং শেষ করে কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে বাড়ি ফিরছিরেন। তিনি গোডাউন মোড় এলাকায় পৌঁছালে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) যুবজোটের জেলা ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক মুস্তাফিজুর রহমান শোভনের নেতৃত্বে আগে থেকে ওত পেতে থাকা একদল সন্ত্রাসী তাদের লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি চালায় ও হামলা করে। হামলায় সঞ্জয় কুমার প্রামাণিক পায়ে ও মাথায় মারাত্মক জখমপ্রাপ্ত হন।
হামলার ঘটনায় বেলাল হোসেন (৩৬) ও শ্যামল সরদার নামে আরও দুই কর্মী আহত হন। এসময় স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে ভেড়ামারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে সেখানকার চিকিৎসকরা তাদের কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে রেফার করেন। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় সঞ্জয়কে।
হামলার পরপরই ভেড়ামারা থানাপুলিশ অভিযান চালিয়ে জাসদ যুবজোটের জেলা ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক মুস্তাফিজুর রহমান শোভনকে গ্রেফতার করে। ঘটনার পরের দিন স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা সঞ্জয়ের স্ত্রী বিথী রাণী দে বাদী হয়ে ভেড়ামারা থানায় শোভনসহ ১৪ জনের নামে মামলা করেন।
ভেড়ামারা থানার ওসি জহুরুল ইসলাম বলেন, ওই মামলায় শোভনসহ পাঁচজন বর্তমানে কারাগারে। বাকি আসামিরা জামিনে রয়েছেন।
সূত্র: জনকণ্ঠ