প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুত অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সারাদেশের জেলা-উপজেলায় মডেল মসজিদ নির্মাণ প্রকল্প গণপূর্ত অধিদপ্তরে নির্বাহী প্রকৌশলীর অধীনে। বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলায় ১১ কোটি টাকা ব্যয়ে মডেল মসজিদ নির্মাণ প্রকল্পের কাজে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। কাজের সিডিউলকে তোয়াক্কা না করে নিয়মবহির্ভূতভাবে নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে নির্মাণ কাজ করা হচ্ছে মসজিদ।
বরিশাল গণপূর্ত অফিস সূত্রে জানা গেছে, প্রতিটি জেলা, উপজেলায় একটি করে ৫৬০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপন’ প্রকল্পের আওতায় বাকেরগঞ্জ উপজেলায় তিনতলা মডেল মসজিদ নির্মাণের জন্য ১১ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। বাকেরগঞ্জে কাজটি করছেন হাজী এন্টারপ্রাইজ নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ঠিকাদার কবির সিকদার তিন বছর আগে মডেল মসজিদ নির্মাণ কাজ শুরু করে।
সরেজমিনে দেখা যায়, বাকেরগঞ্জ বরগুনা আঞ্চলিক সড়কের পাশে বাস স্ট্যান্ড থেকে প্রায় আধা কিলোমিটার পশ্চিমে পৌরসভার ১ নং ওয়ার্ডে নির্মাণ করা হচ্ছে উপজেলা মডেল মসজিদ। নিয়ম অনুযায়ী, নির্মাণ স্থলে কাজের বিবরণের সাইনবোর্ড টানানোর কথা থাকলেও তা করেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। মসজিদের নির্মাণ কাজ শুরুর আগে সেখানে একটি সাইড অফিস নির্মাণ করার নিয়ম থাকলেও সেটাও করেনি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মের্সাস হাজী এন্টারপ্রাইজ। দীর্ঘ সময় নিয়ে ঠিকাদার নিজের ইচ্ছা মতো নির্মাণ কাজ করে আসলেও রয়েছে তদারকির অভাব।
জানা যায়, গণপূর্ত বিভাগ বরিশালের নির্বাহী প্রকৌশলীর অধীনে নির্মাণ কাজ শুরু হয়। তদারকির দায়িত্বে নিয়োজিত গণপূর্ত বিভাগের অন্য কর্মকর্তাদের তদারকির অভাবে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করছে। এলাকাবাসী প্রথম থেকে অভিযোগ করে আসলেও তা আমলে নেয়া হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু মেঝেসহ অন্য স্থানে সর্বাধুনিক মার্বেল পাথরের টাইলস বসানোর কথা টেন্ডার সিডিউলে উল্লেখ থাকলেও এই মডেল মসজিদে অত্যন্ত নিম্নমানের টাইলস ব্যবহার করা হচ্ছে। মেঝেতে ব্যাবহার করা টাইলসের বিভিন্ন স্থানে ফাটল দেখা গেছে।
এছাড়াও টুকরো টুকরো টাইলসের ব্যাবহারের পাশাপাশি টাইলসের পুরত্ব নিয়েও রয়েছে ব্যাপক অনিয়ম। নির্মাণাধীন ভবনের বিভিন্ন স্থানে পলেস্তারা এখনি ফাটল দেখা দিয়েছে। এছাড়াও নতুন ইলেকট্রনিক সুইচ বোর্ডে লক ভাঙা দেখা গেছে। নির্মাণাধীন মসজিদের ছাদের উপর জল ছাদ ঢালাইয়ে ত্রুটির কারণে বর্ষার পানি জমে থেকে জলছাদের উপরের অংশে বিভিন্ন স্থানে ফাটা দেখা যাচ্ছে।
বরিশাল গণপূর্ত উপ-বিভাগ -বিভাগীয় প্রকৌশলী আশরাফ-উল আলম জনকণ্ঠকে জানান, নিন্মমানের টাইলস বসানো সম্পর্কে স্থানীয়দের অভিযোগ বিষয়টি সরেজমিন পরিদর্শন করে দেখবেন। তবে আমরা যে টাইলসের কাজ করেছি লোকালে এর চেয়ে ভালো নেই। আর সাইড অফিস কেন নির্মাণ করা হয়নি প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ৩৪ শতাংশ জমির উপরে মূল ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। জমি সংকটের কারণে হয়তো অফিস নির্মাণ করেন না ঠিকাদার। সরকারি বরাদ্দের যে টাকা অফিসের জন্য ছিল সেটা ঠিকাদার ফেরত দিবেন।
সার্বিক বিষয়ে জানতে গণপূর্ত বিভাগ বরিশালের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: কামরুল হাছানের সঙ্গে কথা বলতে তার সরকারি মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার জন্য একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি। তবে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত সর্বাধুনিক মার্বেল টাইলস এর পরিবর্তে নিম্নমানের টাইলস বসানোর কাজ অব্যাহত আছে বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন স্থানীয়রা।
উপজেলা মডেল মসজিদ নির্মাণ কাজে নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহারের বিষয়ে ঠিকাদার কবির সিকদার বলেন, ঠিকাদারি কাজে সামান্য সমস্যা হতেই পারে। সব বিষয়ে ধরলে আমরা কাজ করব কীভাবে? যখন মসজিদে টেন্ডার হয়েছে তার চেয়ে এখন নির্মাণ সামগ্রীর দাম অনেক বেশি। এখন যে টাইলসের কাজ এখন চলছে তা তুর্কির মার্বেল পাথরের টাইলস।
ইসলামী ফাউন্ডেশন বরিশাল বিভাগীয় পরিচালক কৃষিবিদ মো. নূরুল ইসলাম জানান, কাজ তদারকির জন্য গণপূর্ত থেকে একজন উপ-সহকারী প্রকৌশলী দায়িত্বে আছেন। মসজিদ নির্মাণ কাজ শেষ হলে আমাদেরকে বুঝিয়ে দেয়া হবে। তারপরও আমি ঠিকাদারকে ডেকে মডেল মসজিদ নির্মাণে যে কাজ হচ্ছে তার বিবরণ সংবলিত সাইনবোর্ড টানানো কথা বলব। কোনো কাজের মান খারাপ হলে তদন্ত সাপেক্ষে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।
সূত্র: জনকণ্ঠ