জামালপুরে স্ত্রীর শরীরে পেট্রোল ঢেলে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় মামলাটির একমাত্র আসামি ওই নারীর স্বামী পুলিশ কনস্টবল প্রেমানন্দ ক্ষত্রীয় ওরফে শোভন আহমেদকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। এছাড়াও আদালত আসামিকে এক লাখ টাকা জরিমানা করেছেন। জরিমানার টাকা আদায় করে মৃত ইয়াসমিনের উত্তরাধীকারীকে দেওয়ার আদেশ দেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৭ আগস্ট) দুপুরে জামালপুর জেলা জজ আদালতের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম এই আদেশ দেন। মামলা সূত্রে জানা গেছে, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি প্রেমানন্দ ক্ষত্রীয় ময়মনসিংহ জেলার ময়মনসিংহ কোতয়ালী থানার কাউনিয়া গ্রামের মৃত শচীন্দ্র ক্ষত্রীয়র ছেলে। তিনি শেরপুরের শ্রীবরর্দী থানায় পুলিশ কনস্টবল পদে চাকরি করতেন।
জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জে ব্র্যাকের কর্মসূচি সংগঠক ইয়াসমিন আক্তার নামে তালাকপ্রাপ্তা এক নারীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলেন প্রেমানন্দ ক্ষত্রীয়। ২০১৫ সালে ইয়াসমিন আক্তারকে বিয়ের সময় প্রেমানন্দ ধর্মান্তরিত মুসলিম হয়ে নিজের নাম পরিবর্তন করে হন শোভন আহমেদ। বিয়ের পর থেকে দেওয়ানগঞ্জে ভাড়া বাসায় তাদের সংসার শুরু করেন।
ইয়াসমিন আক্তার নেত্রকোণা জেলার সাতপাই রেলক্রসিং এলাকার মৃত নবাব আলীর মেয়ে। বিয়ের পর থেকেই প্রেমানন্দ ক্ষত্রীয় স্ত্রী ইয়াসমিন আক্তারকে জমি লিখে দেওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। এ নিয়ে তাদের দাম্পত্য কলহ চরম পর্যায়ে চলে যায়।
এর জের ধরে ২০২০ সালের ১ জুলাই রাতে স্ত্রী ইয়াসমিনের গায়ে পেট্রোল ঢেলে সিলিন্ডার গ্যাসের জ্বলন্ত চুলার উপর ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন প্রেমানন্দ ক্ষত্রীয়। এতে ইয়াসমিনের সারা শরীরে আগুন লেগে দগ্ধ হলে তাকে ঢাকায় শেখ হাসিনা বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই বছরের ১৩ জুলাই মারা যান ইয়াসমিন আক্তার। এ ঘটনায় ইয়াসমিনের বড় বোন হাজেরা বেগম বাদী হয়ে প্রেমানন্দ ক্ষত্রীয়কে একমাত্র আসামি করে দেওয়ানগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পর আসামি প্রেমানন্দ ক্ষত্রীয় গ্রেপ্তার হন এবং চাকরি থেকে বরখাস্ত হন।
মামলাটির বিচারিক প্রক্রিয়ায় ১৫ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে বৃহস্পতিবার উপরোক্ত রায় ঘোষণা করেন আদালত। রাষ্ট্রপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন স্পেশাল পিপি মো. আকরাম হোসেন এবং আসামি পক্ষ সমর্থন করেন আইনজীবী মো. দিদারুল ইসলাম।
সূত্র: জনকণ্ঠ