ঢাকারবিবার , ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩
  • অন্যান্য

তোমার শাড়ির আচলে আমার ভালোবাসার কথা লেখা থাকবে……

  • সেলিম জাহাঙ্গীর

    সেপ্টেম্বর ৩, ২০২৩, ৫:২৯ অপরাহ্ণ
ছবিটি চট্রগ্রামের পতেঙ্গায় সাগরের পাড়ে আলোক চিত্রী মুজুরের ক্যামেরায় তোলা।

জনপ্রিয় ও অনেক সুন্দর এ গানটি ছিল ব্যাংকার মাইনুল আহসানের প্রিয় গান গুলির একটি। করোনায় আক্রান্ত হয়ে ২০২১ সালের ৩ সেপ্টেম্বর চলে যান না ফেরার দেশে। দিনটি ছিল শুক্রবার জুম্মার নামাজের ওয়াক্তের শেষ দিকে। মাইনুল আহসান ছোট থেকেই ছিলেন সাহিত্য সাংস্কৃতিক সামাজিক অনুরাগী। স্কুল জীবনে সমাজ পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখতে দেখতে এ আন্দোলনে জড়িয়ে যান। ছিলেন মিষ্টি ভাষী মিসুক পরউপকারী সাহসী মেধাবী ও সবার পরিচিত। অন্যদের নানা ভাবে সহযোগিতা দিতেন। নানা প্রতিভার মাইনুল আহসান রাজশাহী সিটি কলেজে পড়ার সময় কলেজটিকে সরকারী করনের দাবীতে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষন করলে সরকার পক্ষ বিষয়টি আমলে নেন। স্বার্থপর ছিলেন না এ কারনে দল মত নির্বিশেষে সকলের প্রিয় ছিলেন। বাম ধারা, মধ্য ধারা এবং ধর্মীয় চিন্তা ভাবনায় ছিলেন অনেক পারদর্শী। কোথাও এগুলি নিয়ে আলোচনা হলে তিনি খুবই সহজে তা বুঝিয়ে দিতেন। শিক্ষা জীবন শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের পেশায় যুক্ত হন। কাওকে কষ্ট দিতেন না বরং আনন্দে রাখার চেষ্টা করতেন। দার্শনিক চিন্তা ভাবনায় মাইনুল আহসান প্রচুর বই পড়তেন। সহ কর্মীদের কাছে তিনি ছিলেন সৎ ও প্রিয় আপনজন।বাংলাদেশ ব্যাংক রাজশাহী ক্লাবের একটি নাটকে অভিনয় করে সকলের প্রশংসা পান।

চট্টগ্রামে থাকার সময় সহকর্মী ও সেখানকার লোকজন তাকে সেখানেই থেকে যেতে বলেন। কিন্তু জন্ম স্থান ও স্বজনদের টানে তিনি রাজশাহীতে ফিরে আসেন। জানা যায় একটি রাজনৈতিক সংগঠন তাকে তৎকালিন সময় চাঁপাইনবাবগঞ্জ অঞ্চলে সাংসদ হবার প্রস্তাব দেন কিন্তু তিনি রাজি হননি। তিনি সহজ সরল জীবনে আনন্দ পেতেন। অবসর নেবার পর কখনো ভেঙ্গে পড়েননি। অসুস্থতার মাঝেও অন্যকে সহযোগিতা অন্যদের খোঁজ খবর নেবার জন্য অস্থির হয়ে উঠতেন। তিনি প্রায় সময়তেই অন্যান্য গানের সাথে সহধর্মিনী এক সময়কার নৃত্যশিল্পী সংগীত শিল্পী নাসরিন সুলতানা বিলুকে শোনাতেন তার প্রিয় গান ‘তোমার শাড়ির আচলে আমার ভালবাসার কথা লেখা থাকবে……….’ ২০২১ সালের আগষ্ট মাসে করোনায় আক্রান্ত হলে ঝুঁকি নিয়ে হাসপাতালে ডাক্তার, নার্স ও সেবার দায়িত্বে যারা ছিলেন তাকে সুস্থ করে তুলতে সর্বাত্তক চেষ্টা চালান। হাসপাতাল থেকে তাকে ছেড়ে দেয়ার পর বাড়ীতে ডাক্তারের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা চলে।

শহিদ জামিল বিগ্রেডের সমন্বয়ক দেবাশীষ প্রামানিক দেবুর নেতৃত্বে স্বেচ্ছাসেবীরা ঝুঁকি নিয়ে তাকে সেবা দিয়েছে। ভাগ্যের পরিহাস ঐ বছরের ৩ সেপ্টেম্বর না ফেরার দেশে চলে গেলে ঐদিন রাতে তাকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদরের পাঠানপাড়া মসজিদ পারিবারিক গোরস্থানে মায়ের কবরের পাশে শায়িত করা হয়। তিনি সহকর্মী ও এককালের রাজনৈতিক সঙ্গীদের কাছে এখন স্মৃতির ফ্রেমে। তার রাজনৈতিক সঙ্গী সাংবাদিক দিলু বলেন ছোট বেলাতেই তারা সমাজ পরিবর্তনের আদর্শে দীক্ষিত হয়ে এ আন্দোলনে সংপৃক্ত হন। সে কথা অল্প কথায় শেষ হবেনা। পরবর্তীতে মাইনুল আহসান ব্যাংকের চাকুরীতে আর উনি সাংবাদিকতায় যুক্ত হন। মাইনুল আহসানের সাথে তার সম্পর্ক ছিল অত্যন্ত  নিবিড়। তাদের দুজনের কথা শুরু হলে তা আর শেষ হতোনা জমে উঠতো আড্ডা। তাকে নিয়ে তার অনেক স্মৃতি। তিনি জানান তিনি শুনেছেন হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে মাইনুল হাসান বাড়ী ফেরার সময় ছেলেকে বলেন আমি নাসরিনের কাছে যাচ্ছি, আমাদের বাড়িতে ফিরছি। সহকর্মী সহপাটি বন্ধু স্বজনদের কাছে তিনি এখনো সেই মাইনুলই হয়ে আছেন। অনেকের কাছে তিনি আজও গুরু।

লেখক: সাংবাদিক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, চিত্র শিল্পী, আলোক চিত্রী, লেখক।