•গায়েব গুরুত্বপূর্ণ ৫ শতাধিক ফাইল
দেশের বৃহত্তম সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্ব গ্রহণের পর মঙ্গলবার প্রথম অফিস করলেন গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের নবনির্বাচিত প্রথম নারী মেয়র জায়েদা খাতুন। তিনি বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেন এবং অফিসের কাজের অগ্রগতি বৃদ্ধির লক্ষ্যে কর্মকর্তা কর্মচারীদের পরামর্শ দেন। এদিন বেশ কিছু ফাইলের খোঁজ পান নি তিনি। এ সময় মায়ের সঙ্গে ছিলেন সাবেক মেয়র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের নবনির্বাচিত মেয়র জায়েদা খাতুন সোমবার তার দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। দায়িত্ব গ্রহণের পরদিন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তিনি শহরের নগর ভবনে তার কার্যালয়ে আসেন। দৈনন্দিন কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে ব্যস্তদিন কাটান। অফিসে এসে সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন এবং তাদের কথা শুনেন।
এ সময় তিনি নগরবাসীর স্বার্থে সিটি কর্পোরেশনের উন্নয়ন কার্যক্রম আরো বেগবান করার জন্য সকলের সহযোগিতা কামনা করেন। তিনি কয়েক কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে অনুপস্থিত দেখতে পান। এছাড়াও বেশ কিছু ফাইল পত্রের খোঁজ পান নি তিনি। নগর ভবনে নতুন মেয়রের আগমনের খবর পেয়ে আশে পাশের নারীপুরুষ ভিড় জমান।
মেয়র জায়েদা খাতুন তাদের সঙ্গেও কথা বলেন এবং তাদের বিভিন্ন সমস্যা শুনে সেগুলো সমাধানের আশ্বাস দেন। দিনভর অফিসে অবস্থানকালে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনসহ গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন ফাইলে স্বাক্ষর করেন।
এছাড়াও তিনি বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেন এবং অফিসের কাজের অগ্রগতি বৃদ্ধির লক্ষ্যে কর্মকর্তা কর্মচারীদের পরামর্শ দেন। তিনি গাজীপুর সিটিকে আধুনিক ও সুন্দর করে গড়ে তুলতে সবাইকে সততার সঙ্গে নিজেদের দায়িত্ব পালনের পরামর্শ দেন। বুধবার তিনি সিটি কর্পোরেশনের কর নির্ধারণ ও আদায়কারী কর্মকর্তা, লাইসেন্স অফিসার সহ সিআরও কর্মকর্তাদের সভা আহবান করেছেন।
কীভাবে কাজ করলে কাজের আরো ভাল অগ্রগতি হবে সভায় সেসব বিষয়ে আলোচনা করা হবে। এদিনের অফিসের কাজ শেষে বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে তিনি অফিস ত্যাগ করেন।
সাবেক মেয়র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম জানান, আমি ২০২১ সালে সিটি কর্পোরেশনের ফান্ডে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা রেখে গেছি। আমার মা জায়েদা খাতুন দায়িত্ব নেওয়ার সময় তারা ৭০ থেকে ৮০ কোটি টাকা রেখে গেছে। এরমধ্যে ৭শ’ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে। গত ২১ মাসে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি এবং লুটপাট হয়েছে। তদন্ত ও হিসেব করলে বিস্তারিত জানা যাবে।
এছাড়াও ৫ শতাধিক গুরুত্বপূর্ণ ফাইল গায়েব করা হয়েছে। যেগুলোর হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। সাবেক ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমানের নেতৃত্বে তার লোকজন এসব অপকর্ম করেছে। এসব কারণে সিটি কর্পোরেশনের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
তাছাড়া নতুন মেয়রের অফিস পরিচালনার প্রথম দিন মঙ্গলবার কয়েকজন কর্মকর্তা কর্মচারী বিনা অনুমতিতে অনুপস্থিত রয়েছেন। তারা নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত। তাদের সম্পর্কেও খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে। নগরবাসী পর্যায়ক্রমে সেসব বিষয়ে জানতে পারবে।
গত ২৫ মে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে জায়েদা খাতুন নির্বাচিত হন। নির্বাচনে তিনি নানা প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করে ১৬ হাজার ১৯৭ ভোটের ব্যবধানে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে পরাজিত করে করেন। নির্বাচনে ৪৮০টি কেন্দ্রের মধ্যে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আজমত উল্লা পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট আর স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুন পেয়েছেন ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট।
জায়েদা খাতুন দেশের ইতিহাসে দ্বিতীয় নারী মেয়র এবং গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের প্রথম নারী মেয়র। এছাড়াও দেশের ইতিহাসে জায়েদা খাতুনই প্রথম যার পূর্বসূরী মেয়র ছিলেন তারই ছেলে জাহাঙ্গীর আলম।
এর আগে ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হন জায়েদা খাতুনের ছেলে মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম।
সূত্র: জনকণ্ঠ