মঙ্গলবার, জুলাই ১৫, ২০২৫
Logo
Mango Market

আমের রাজধানিতে জমে উঠেছে আমের বাজার

Bijoy Bangla

আবুল কালাম আজাদ ,রাজশাহী

প্রকাশের সময়: ২৭ মে, ২০২৪, ০৫:৩৭এএম

আমের রাজধানিতে জমে উঠেছে আমের বাজার
আমের রাজধানি রাজশাহীতে জমে উঠেছে আমের বাজার।

আমের রাজধানি রাজশাহীতে জমে উঠেছে আমের বাজার। জেলার সবচেয়ে বড় আমের হাট  বানেশ্বর হাটসহ জেলার উপজেলার হাট গুলোতে গোপালভোগ আম কেনাবেচা চলছে জোড়েসরে। ক্রেতা- বিক্রেতার সমাগমে জমজমট আম বাজার গুলো। তবে বিগত বছরের তুলনায় এবার মৌসুমের শুরু থেকেই আমের দাম গত বারের চেয়ে বেশি। পাইকারিতে ৬০-৬৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও খুচরায় ৭০-৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে এখন পাইকারির ক্রেতার চেয়ে খুচরা ক্রেতা অনেক কম।

বানেশ্বর হাটে গিয়ে দেখা গেছে, প্রতি মণ দুই হাজার ৪০০ থেকে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে গোপালভোগ আম। পাশাপাশি বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের গুটি আম। বাজারে জাতের প্রকারভেদে বিক্রি হয়েছে এক হাজার থেকে এক হাজার ৮০০ টাকা মণ। যা গত বছরের তুলনায় অনেক বেশি বলেছেন ক্রেতারা।

পুঠিয়া বানেশ্বর  হাটটি ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক ঘেঁষে উত্তর পাশে বসে। প্রতি শনি ও মঙ্গলবার এখানে সাপ্তাহিক হাট বসলেও, আমের মৌসুমে এখানে প্রতিদিনই হাট বসে। রাজশাহীতে এবার ১৫ মে থেকে মৌসুম শুরু হয়েছে। আগস্ট পর্যন্ত চলবে বেচাকেনা । প্রতি আম মৌসুমের মত এবারও হাট এলাকায় সব কুরিয়ার সার্ভিসের কার্যালয় স্থাপন করা হয়েছে, ফলে সহজেই যেকোনো স্থানে পাঠানো যাবে আম।

হাটে গিয়ে দেখা গেছে, আম চাষি ও ব্যবসায়ীরা ভ্যান এবং নসিমন-করিমনে করে আম নিয়ে হাটে আসছেন। এসব গাড়িতে ৩০ থেকে ৬০টি ক্যারেট আম থাকছে। ভ্যান ও ট্রলির ওপর সাজিয়ে রেখেছেন ব্যবসায়ীরা। অনেকে বাজারে মাচা পেতে বসেছেন বিক্রেতারা। অপেক্ষাকৃত পাকা আমগুলো ওপরে রাখা হয়েছে ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য।  আম বিক্রির কৌশল বা ক্রেতা আকর্ষনে ব্যবসায়ীরা ক্রেতাদের আম কেটে দেখাচ্ছেন ও খাওয়াচ্ছেন,  খেয়ে পছন্দ হলে কিনছেন।

হাটটিতে আম বিক্রি করতে আসা, চারঘাটের আমচাষি আব্দুল মজিদ বলেন, কেবলমাত্র আম পাকতে শুরু করেছে। রাতে পাকা আম গাছ থেকে ঝরে পড়ছে। তিনি বলেন,এবছর তার বাগানে ৩৫টি গাছ আছে। তা থেকে  ৭৩ ক্যারেট গোপালভোগ বাজারে এনেছি। গত বছরের তুলনায় এবার দাম বেশি পাচ্ছি। এমন দাম থাকলে এবার বেশি লাভ হবে।’

বানেশ্বর হাটের আম বিক্রেতা মনিরুল বলেন, ‘২৬ মে রবিবার চলতি মৌসুমে গোপালভোগ আম বেশি বিক্রি হয়েছে। এর আগে গুটি জাতের আম বিক্রি হয়েছিল। গোপালভেগ বাজারে আসার পর গুটি জাতের চাহিদা এখন কম। গোপালভোগ পাইকারিতে প্রতি মণ ২৪০০ থেকে দুই হাজার ২৫০০ টাকা দরে বিক্রি করেছি।’

আড়তের আরেক বিক্রেতা আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘হাটে খুচরা ক্রেতা কম। বেশিরভাগ আড়তদাররা কিনে নিচ্ছেন। তারা একসঙ্গে চাষি ও ব্যবসায়ীদের থেকে বেশি করে কিনে ট্রাকভর্তি করে দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠাচ্ছেন। প্রতিদিন কেনাবেচা হচ্ছে। এর মধ্যে শনিবার ও মঙ্গলবার বেশি বিক্রি হয়। কারণ এই দুদিন হাটবার। পাইকারিতে কেজি ৬০-৬৫ টাকায় বিক্রি হলেও খুচরায় ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।’


 বাঘা থেকে আম নিয়ে আসা সিদ্দীকুর রহমান বলেন, ‘অনলাইনে যারা আমের ব্যবসা করেন, তাদের সংখ্যাই এবার বেশি। পাশাপাশি অনেক পাইকারি ব্যবসায়ী এসেছেন। তবে খুচরা ক্রেতা কম। শনিবার থেকে আম বাজারে উঠছে। ইতোমধ্যে বাজার জমে উঠেছে। ভালোই বেচাকেনা হচ্ছে।’

চারঘাট উপজেলা থেকে আম নিয়ে আসা কামাল হোসেন বলেন, ‘সকালের দিকে আম নিয়ে আসতে পারলে ভালো হতো। তখন দুই হাজার ৮০০ টাকা মণ ছিল। বিকালে দুই হাজার ৪০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। ফলে এই দামেই বিক্রি করে দিয়েছি। কারণ ধরে রাখলে পচন ধরবে।’

বাজার জমে উঠেছে জানিয়ে বানেশ্বর হাটের ইজারাদার মাসুদ রানা বলেন, ‘জেলার সবচেয়ে ভালো আমগুলোর মধ্যে রয়েছে গোপালাভোগ, লক্ষ্মণভোগ, ক্ষীরশাপাতি ও ল্যাংড়া। শনিবার থেকে হাটে গোপালভোগ আম আশা শুরু হয়েছে। এখনও লক্ষ্মণভোগ, ক্ষীরশাপাতি ও ল্যাংড়া আসতে বাকি। এবার তুলনামূলক ফলন কম হলেও দাম ভালো পাচ্ছেন চাষিরা। গত বছর মৌসুমের শুরুতে গোপালাভোগের মণ ছিল এক হাজার ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। এ বছর একই সময়ে মণ বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার ৪০০ থেকে তিন হাজার টাকায়। ফলে আশা করা যায়, লোকসান হবে না চাষিদের।’

উল্লেখ্য, ম্যাঙ্গো ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, ১৫ মে থেকে সব ধরনের গুটি আম নামিয়েছেন চাষি ও ব্যবসায়ীরা। ২৫ মে গোপালভোগ আম বাজারে এসেছে। একই দিন রানিপসন্দ আসার কথা থাকলেও পরিপক্ব হয়নি। এরপর লক্ষ্মণভোগ বা লখনা ৩০ মে এবং একই তারিখে হিমসাগর বা ক্ষীরশাপাতি গাছ থেকে পাড়া যাবে। এ ছাড়া ১০ জুন থেকে ল্যাংড়া ও ব্যানানা আম; ১৫ জুন আম্রপালি এবং একই তারিখে ফজলি; ৫ জুলাই বারি-৪ আম; ১০ জুলাই আশ্বিনা; ১৫ জুলাই গৌড়মতি এবং ২০ আগস্ট থেকে ইলামতি আম পাড়া যাবে। তবে এই তারিখের আগেও চাষিরা স্থানীয় প্রশাসনকে জানিয়ে আম পরিপক্ব হওয়া শর্তে পাড়তে পারবেন। এর বাইরে বারোমাসি কাটিমন ও বারি-১১ আম সারা বছর সংগ্রহ করা যাবে।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রাজশাহী জেলায় আমের সম্ভাব্য উৎপাদন ধরা হয়েছে দুই লাখ ৬০ হাজার ৩১৫ মেট্রিক টন। এ বছর আবাদ হয়েছে ১৯ হাজার ৬০২ হেক্টর জমিতে। যার গড় ফলন ধরা হয়েছে ১৩ দশমিক ২৮ মেট্রিক টন।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক উম্মে ছালমা বলেন, ‘এবার এই অঞ্চলে বড় ধরনের কোনও ঝড় ও শিলাবৃষ্টি হয়নি। তাই কম মুকুল আসলেও যেসব আম গাছে ধরেছিল সেগুলো টিকে গেছে। দাম ভালো পাওয়ায় চাষি ও ব্যবসায়ীরা লাভবান হবেন বলে আশা করছি।’