বাংলাদেশের জ্বালানি খাতকে টেকসই ও পরিবেশবান্ধব করার লক্ষ্যে সংশপ্তক (Songshoptaque), CLEAN, এবং BWGED-এর উদ্যোগে কক্সবাজার শহরে এক প্রচারাভিযান অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শনিবার ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ প্রচারিভযানে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ, পরিবেশবিদ, শিক্ষার্থী, সমাজকর্মী এবং সাধারণ নাগরিকেরা অংশ নেন। সবাই একত্রে স্লোগান দেন, 'জীবাশ্য জ্বালানি নয়, নবায়নযোগ্য শক্তিই হোক আমাদের ভবিষ্যৎ!'
সমাবেশে বক্তারা এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) আমদানির ফলে দেশের অর্থনীতি, পরিবেশ, ও জনগণের জীবনে সৃষ্ট ভয়াবহ ক্ষতির বিষয়টি তুলে ধরেন।
বক্তাগণ বলেন, এলএনজি কোনো দীর্ঘমেয়াদি সমাধান নয়, বরং এটি বাংলাদেশের জন্য এক গভীর সংকট তৈরি করছে। বিশ্ববাজারে এলএনজির অস্থির মূল্য দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় বাড়িয়ে দিয়েছে, যা জনগণের জন্য একটি অতিরিক্ত অর্থনৈতিক বোঝা। এলএনজি আমদানির ফলে শুধুমাত্র বিদ্যুৎ খরচ বেড়েছে তা নয়, বরং এটি পরিবেশের জন্যও ভয়ংকর হুমকি।
বক্তারা বলেন, এলএনজি পোড়ানোর ফলে বিপুল পরিমাণ কার্বন-ডাই-অক্সাইড ও মিথেন নির্গত হয়, যা বৈশ্বিক উষ্ণায়ন বৃদ্ধি করছে এবং জলবায়ু পরিবর্তনকে আরও ত্বরান্বিত করছে। এছাড়া, বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চল ইতোমধ্যেই জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, যার একটি বড় কারণ জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারের উপর নির্ভরতা।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য শক্তির, বিশেষত সৌর ও বায়ু শক্তির বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। গ্রামাঞ্চলে ও শহরগুলোর ছাদ ব্যবস্থাকে কাজে লাগিয়ে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন করলে জাতীয় গ্রিডের উপর চাপ কমানো সম্ভব হবে।
বক্তারা বলেন, যদি নবায়নযোগ্য শক্তিতে বিনিয়োগ করা হয়, তবে এটি শুধু বিদ্যুৎ সংকট সমাধান করবে না, বরং আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে কর্মসংস্থানের নতুন সুযোগ তৈরি করবে।
সমাবেশে বক্তারা সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, এখন সময় এসেছে এলএনজি আমদানি বন্ধ করে নবায়নযোগ্য শক্তিতে বিনিয়োগ বাড়ানোর। বাংলাদেশকে টেকসই ভবিষ্যতের পথে এগিয়ে নিতে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
সংশপ্তক-এর প্রতিনিধি বলেন, আমরা চাই বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ একটি নিরাপদ, সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব শক্তির উপর গড়ে উঠুক। নবায়নযোগ্য শক্তিতে বিনিয়োগের মাধ্যমেই আমরা উন্নত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারব।
এই প্রচারাভিযান ও সমাবেশ কক্সবাজারে নবায়নযোগ্য শক্তির গুরুত্ব সম্পর্কে জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করেছে।
সংশপ্তক, CLEAN, এবং BWGED ঘোষণা দিয়েছে যে, এলএনজি আমদানি বন্ধ ও নবায়নযোগ্য শক্তির প্রসারের দাবিতে এই আন্দোলন আরও জোরদার করা হবে এবং দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়া হবে।
সকাল ১১ ঘটিকায় এক বর্ণঢ্য র্যালী লালদীঘির পশ্চিম পাড় থেকে শুরু হয়ে কক্সবাজার প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে কক্সবাজার পৌরসভা চত্বরে র্যালি পরবর্তী সমাবেশে বক্তব্য রাখেন হিউম্যান রাইটস ডিফেন্ডার ফোরামের (HRDF) কক্সবাজার জেলা সদস্য সচিব মিজানুর রহমান বাহাদুর, সংশপ্তক এর পরিচালক অগ্রদূত দাশ গুপ্ত, আদিবাসী পরিষদ নেত্রী মা টিন টিন রাখাইন, ওয়াইসিএন সভাপতি মোঃ মুসা, স্টুডেন্ট প্লাটফর্ম সাধারণ সম্পাদক রিচিমনি, আইনজীবী নাজিম উদ্দিন কাদের, রাখাইন টেকসই উন্নয়ন সংস্থা সভাপতি মং ব্ল্যা রাখাইন, মোঃ ফয়েজ ও শিক্ষার্থী আসিব নূর প্রমুখ।