রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (রুয়েট) স্বতঃস্ফূর্তভাবে অনুষ্ঠিত হলো সম্মিলিত ইফতার আয়োজন। গত রোববার (২ মার্চ) বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে শিক্ষার্থীদের প্রাণবন্ত অংশগ্রহণে আয়োজিত এ ইফতার শুধুমাত্র ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতায় সীমাবদ্ধ ছিল না; বরং এটি রূপ নেয় এক অনন্য মিলনমেলায়, যেখানে সৌহার্দ্য, বন্ধুত্ব ও ঐক্যের দৃঢ় বহিঃপ্রকাশ ঘটে।
পবিত্র রমজান মাস ধর্মীয় অনুশীলনের পাশাপাশি বাঙালির সংস্কৃতি ও সামাজিক বন্ধনের প্রতীক। ইফতার এ দেশের ঐতিহ্যের গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব ও প্রতিবেশীদের সাথে ভাগাভাগির আনন্দে পরিপূর্ণ হয়। সেই ধারাবাহিকতায় রুয়েটের শিক্ষার্থীরাও ২০২৫ সালের প্রথম রমজান উপলক্ষে আয়োজন করেছে ‘ইফতার সন্ধ্যা’।
উল্লেখ্য, গত বছর শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি) এবং নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (নোবিপ্রবি) সম্মিলিত ইফতার আয়োজন প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়েছিল। ওই ঘটনার প্রতিবাদে রুয়েট শিক্ষার্থীরাও তখন সাহসিকতার সঙ্গে সম্মিলিত ইফতার আয়োজন করেছিল, যদিও নানা প্রতিবন্ধকতা ও চাপ মোকাবিলা করতে হয়েছিল। তবে এবারের দৃশ্যপট ছিল ভিন্ন। স্বৈরাচারী শাসনব্যবস্থার অনুপস্থিতিতে শিক্ষার্থীরা এবার নির্বিঘ্নে এবং নির্ভয়ে আয়োজনটি সম্পন্ন করতে পেরেছে।
সন্ধ্যার আগেই শিক্ষার্থীরা ইফতারের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন—কেউ পানি সংগ্রহে, কেউ শরবত তৈরিতে, কেউবা নিজের খাবার অন্যের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়ার কাজে। নানা ব্যস্ততা ও সহযোগিতার মাধ্যমে এ আয়োজন পরিণত হয় এক প্রাণবন্ত উৎসবে, যেখানে প্রতিবাদ ও ঐক্যের বার্তা ছড়িয়ে পড়ে।
গ্রাম কিংবা শহর, ধনী কিংবা দরিদ্র—সব শ্রেণির মানুষের জন্য ইফতার যেমন ধর্মীয় গুরুত্ব বহন করে, তেমনি এটি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংহতির এক অনন্য ক্ষেত্রও তৈরি করে। রমজানের প্রথম দিনেই রুয়েট শিক্ষার্থীদের এমন সম্মিলিত আয়োজন প্রমাণ করে, ইফতার কেবল আহারের সময় নয়; এটি বন্ধন, প্রতিবাদ এবং ঐক্যের শক্তিশালী প্রতীকও বটে।
শিক্ষার্থীরা আশা প্রকাশ করেন, সামনের দিনগুলোতেও এ ধরনের উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে এবং প্রতিবাদের সংস্কৃতি থেকে উৎসারিত হবে নতুন নতুন ঐক্যের গল্প।