দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফল আইন অনুযায়ী, জাতীয় সংসদের সাধারণ নির্বাচনের ফলাফলের গেজেট প্রকাশের ৯০ দিনের মধ্যে সংরক্ষিত নারী আসনের নির্বাচন করতে হয়। সেই হিসাবে আগামী ৭ এপ্রিলের মধ্যে এ নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে।
জাতীয় সংসদ (সংরক্ষিত মহিলা) আসনে বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামিলীগ চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শাখার সহ-সভাপতি ও হিন্দু আদিবাসী মুক্তিমোর্চা কেন্দ্রীয় কমিটির মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা রঞ্জনা বর্মন জানান আদিবাসীরা সংখ্যার বিবেচনায় অপেক্ষাকৃতভাবে বেশি হলেও রাজনৈতিক সচেতনতা, ঐক্য এবং অধিকার আদায়ের সংগ্রামে বরাবরই পিছিয়ে রয়েছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রায় ৩২ প্রজাতি জেলাতে বসবাস করে সাঁওতাল, উরাঁও, মাহালী, কোল, পাহান, তুরি, রাজোয়াড়, ভুঁইয়া, ভুঁইমালি, কর্মকার, মালো, পাহাড়িয়া, রায়, মাহাতো, বর্মন, মাড়োয়াড়ি, নাপিত, হরিজন, বরিদাস, মুন্ডা, মালো, সিংসহ ত্রিশার্ধো আদিবাসী জনগোষ্ঠী। এই পিছিয়েপড়া অনগ্রসর জাতিগোষ্ঠী মহান মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে দেশের প্রতিটি সংগ্রাম, আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত হয়েছেন।
বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধে আদিবাসী নারীদের ছোট ছোট অবদানকে খাটো করে দেখার অবকাশ নেই। মায়েরা যুদ্ধকালীন সময়ে তাদের যুব সন্তানদের উদ্বুদ্ধ করেছে, যেন তারা মাতৃভূমিকে শত্রু সেনাদের হাত থেকে মুক্ত করতে ঝাঁপিয়ে পড়ে। মায়েদের এরূপ দৃঢ়চেতা মনোভাব সন্তানদেরকে উজ্জীবিত করেছে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণে। এ জন্যই কয়েকশ আদিবাসী মুক্তিযোদ্ধা সশস্ত্র যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছিলেন। গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয়েছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। দ্বাদশ নির্বাচনে মুক্তিযুদ্ধের আর্দশ লালনকারী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসীন হয়েছে। ইতোমধ্যেই সংবিধান অনুযায়ী সাংসদ ও মন্ত্রিপরিষদ শপথ গ্রহণ করে দেশ পরিচালনার দায়িত্বভারও নিয়েছেন।
নবগঠিত বর্তমান সরকার সংবিধান অনুযায়ী নারী সংরক্ষিত আসনের জন্য মনোনয়ন এবং চূড়ান্তভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে চলেছে। তাই চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে আদিবাসী পক্ষে আমি রঞ্জনা বর্মন ফরম সংগ্রহের কথা জাননেছি। ‘সংরক্ষিত নারী আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হতে পারলে সততার সঙ্গে কাজ করে জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে চাই। আর
তুলনামূলকভাবে সমতল অঞ্চলের আদিবাসী নারীদের আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক তৎপরতার দৈন্যতা, বিচ্ছিন্নতা, ঐক্যহীনতায় সর্বদা নিরাপত্তাহীনতায় দিনাতিপাত করে থাকে। শুধু নারীদের নয় অত্র অঞ্চলের আদিবাসী পুরুষদের শক্তিশালী সামাজিক, রাজনৈতিক কিংবা ধর্মীয় সংগঠনের দৃষ্টান্ত বিরল। আদিবাসী নারী-পুরুষদের বঞ্চনার কথা, প্রাপ্তি-প্রত্যাশার কথা, সুখ-দুঃখ কিংবা অধিকারের কথাগুলো তাদের দৃষ্টিকোণ থেকে সরকারের কাছে জানাতে পারবে। আর আদিবাসী নারীরা ঘরে- বাইরে, বিশেষ করে যখন মাঠের কাজে যান; তৎকালে বৃহত্তর জনগোষ্ঠী কর্তৃক ধর্ষণ, শ্লীলতাহানী কিংবা মানসিকভাবে অপদস্তের শিকার হয়ে থাকেন। আমরা পেরে উঠি না যে, এহেন কাজ যারা করে থাকে তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে। এরা স্থানীয়ভাবে যেমন ক্ষমতাবানদের আশীর্বাদপুষ্ট, তেমনি অর্থনৈতিকভাবেও শক্তিশালী। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কান পর্যন্ত কোনোদিনই সংবাদ পৌঁছাইনি বলে ন্যায়বিচার সম্পাদিত হয়নি বলে নারীরা বিশ্ববাস করেছেন। আদিবাসী নারীরা নিজেদের হৃদয়ের অব্যক্ত কথা, স্বপ্নের কথা, দেশগড়ার ক্ষেত্রে সহভাগিতার কথাগুলো মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দরজা পৌঁছাতেই সংরক্ষিত আসনের প্রার্থনা করছি।