‘আমি কোন এক পাখির জীবনের জন্য অপেক্ষা করছি। তুমি কোন এক পাখির জীবনের জন্য অপেক্ষা করছো, হয়তো হাজার বছর পরে, মাঘের নীল আকাশে, সমুদ্রের দিকে যখন উড়ে যাবো, আমাদের মনে হবে হাজার হাজার বছর আগে আমরা এমন উড়তে চেয়েছিলাম, হরিয়াল দেখে নির্সগপ্রেমীদের মনে জীবনানন্দ দাশের এমন পক্তিমালা ভেসে উঠতে পারে। বনের নিরবতা ভেঙে এরা উড়ে বেড়াই।
পাহাড়ের এক সুন্দর পাখি হরিয়াল। দেশের সমতল এলাকায় বিলুপ্ত প্রায় এ পাখিটি দেখা পাওয়া না গেলেও পাহাড়ের বিভিন্ন স্থানে ইদানিং পাখিটিকে দেখা যাচ্ছে। এর আগে খাগড়াছড়িতে একাধিকবার হরিয়ালের দেখা মিলে। বিশেষত বট বৃক্ষের ফল এদের খুব পছন্দ। হরিয়াল পাখি হরিতাল নামেও পরিচিত।
খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সংলগ্ন বটবৃক্ষ, কমলছড়ি সংলগ্ন পাড়া বন, খাগড়াছড়ি দীঘিনালা সড়ক একাধিক স্থানে এই পাখি দর্শন পাওয়া যায়। এরা আমাদের দেশের সুলভ আবাকিস পাখি। এদের প্রায় সারা বছরই দেখা যায়। তবে বসন্তের এই সময়ে হরিয়াল বেশি দেখা যায়। হলুদ পা এর কারণে এরা হলদে পা হরিয়াল হিসেবে পরিচিত।
হলদে পা হরিয়ালের ইংরেজি নাম বষষড়ি ভড়ড়ঃবফ মৎববহ ঢ়রমবড়হ এদের বৈজ্ঞানিক নাম ঞৎবৎড়হ অঢ়রপধঁফধ .এরা আকারে কবুতরের মতো। লম্বা প্রায় ৩৩ সে.মি। এদের দেহ হলদে সবুজ। মাথার রং ছাই বর্ণের। এদের চঞ্চু হলুদ। এদের গলা ও বুক হলদে। লেজ ও ডানার প্রান্ত কালো। এদের পা হলুদ।
তবে প্রকৃতিপ্রেমীদের ধারণা ক্রমশ কমে যাচ্ছে হলদে পা হরিয়াল এর সংখ্যা। শিকারের কারণে হরিয়াল হারিয়ে যাচ্ছে।
খাগড়াছড়ির দীঘিনালার গণেশ ত্রিপুরা নামে সাব্কে এক ইউপি সদস্য জানান, শিকারের কারণে অনেক পাখিসহ বন্যপ্রাণীর জীবন হুমকির মুখোমুখি । এদের ঘুঘু, হিল ময়না, হরিয়াল অন্যতম। পাহাড়ে এখনো পর্যাপ্ত হরিয়াল রয়েছে। তবে সংখ্যা আগের তুলনায় কম মনে হয়। প্রায়শ শিকারীরা পাখি শিকার করে নিয়ে যায়।
খাগড়াছড়ির মহালছড়ি মুবাছড়ি ইউনিয়নের বাসিন্দা রিপন চাকমা বলেন, আমাদের গ্রামে সব ধরনের পাখি ও বন্যপ্রাণী শিকার বন্ধ করেছি। বছরের শুষ্ক মৌসুমে বট ফল খেতে প্রচুর পাখির আনাঘোনা হয়। পাকড়া ধনেশের মতো দুর্লভ পাখিও এখন দেখা যায়। শিকার বন্ধ হলে পাহাড় পাখিদের নিরাপদ আশ্রয় হবে।
খাগড়াছড়ির শৌখিন আলোকচিত্রী সবুজ চাকমা বলেন,পার্বত্য এলাকায় ৭ প্রজাতির হরিয়াল দেখা যায়। এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সুলভ হলদেপা হরিয়াল। তবে নজরদারির অভাবে পার্বত্য এলাকায় শিকার বেড়ে যাচ্ছে। একসময় পাহাড়ে রাজধনেশ ছিল। তা এখন আর দেখাই যায় না। শিকারের কারণে হরিয়ালদের জীবন বিপন্ন। এদের রক্ষায় শিকার বন্ধে পদক্ষেপ নিতে হবে।
হলদে পা হরিয়াল বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন -২০১২ অনুযায়ী সংরক্ষিত। খাগড়াছড়ির বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো.ফরিদ মিঞা বলেন, যে কোন বন্যপ্রাণী শিকার করলে ১ বছরের জেল ১ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। একই অপরাধ একাধিকবার করলে ৩ বছরের জেল ও ২ লাখ জরিমানার বিধান রয়েছে।