আর্কাইভ কনভাটার ঢাকা, বুধবার, জুলাই ৩, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৮ আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
Logo

Anwarul Azim Anar

শাহীনের নির্দেশে আনারকে হত্যা করেছি

Bijoy Bangla

অনলাইন ডেস্ক:

প্রকাশিত: ০৬ জুন, ২০২৪, ০৩:১৫ পিএম

শাহীনের নির্দেশে আনারকে হত্যা করেছি
আনোয়ারুল আজিম আনার

ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন শিমুল ভুঁইয়া ওরফে শিহাব ওরফে ফজল মোহাম্মদ ভুঁইয়া ওরফে আমানুল্যাহ সাঈদ। দুই দফায় ১৩ দিনের রিমান্ড শেষে বুধবার আদালতে হাজির করে পুলিশ। তিনি ‘স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে রাজি হলে তা রেকর্ড করার আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের সিনিয়র সহকারী কমিশনার মাহফুজুর রহমান।

আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে  ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেন তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন। জবানবন্দি রেকর্ড শেষে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেওয়া হয়েছে। তদন্ত সংশ্লিষ্ট পুলিশ ও আদালত সূত্রে এ খবর জানা গেছে।

এদিকে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার চিনার পার্কের কাছে ব্লু মুন নামে একটি হোটেলে স্যুয়ারেজ লাইন ভেঙে দুটি ধারালো ছুরি উদ্ধার করেছে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ।

ছুরি দুটি আনার হত্যাকা-ে ব্যবহার হয়েছে বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের। ১০ সেন্টিমিটার লম্বা ছুরি দুটি খুনে ব্যবহৃত হয়েছিল কি না নিশ্চিত হতে ফরেনসিক ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। বুধবার এ তথ্য জানিয়েছে কলকাতার পুলিশ। কলকাতার চিনার পার্কের কাছে ব্লু মুন নামে হোটেলে বুধবার তল্লাশি চালানো হয়। ওই হোটেলের স্যুয়ারেজ পাইপ ভেঙে দুটি ধারালো ছুরি ছাড়াও বেশকিছু ব্যবহৃত বস্তু সংগ্রহ করা হয়েছে। সেগুলোও ফরেনসিক ল্যাবে পাঠানো হয়েছে।

এই হোটেলের মালিক এবং অ্যাক্সিস মলের রিলায়েন্স ডিজিটাল শোরুমের ম্যানেজার ও কর্মচারীদের আনার হত্যাকা- নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। দেশীয় অস্ত্র ছাড়াও স্যুয়ারেজ থেকে একটি বুলেট উদ্ধার করা হয়েছে। আদালত সূত্রে জানা গেছে, ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় দেওয়া জবানবন্দিতে শিমুল বলেছেন, আকতারুজ্জামান শাহীনের নির্দেশে তিনি টাকার বিনিময়ে এই হত্যাকা- বাস্তবায়ন করেন। আনারকে হত্যার পর লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে টুকরা টুকরা করেন। 

ফের ২ দিনের সিআইডি হেফাজতে জিহাদ হাওলাদার ॥ ঝিনাইদহ-৪ আসনের এমপি আনোয়রুল আজিম আনার হত্যা মামলায় ভারতে গ্রেপ্তার জিহাদ হাওলাদারকে বুধবার উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বারাসত জেলা ও দায়রা আদালতে তোলা হয়। ১২ দিনের সিআইডির হেফাজত শেষে মঙ্গলবার ৫ জুন দুপুর ১টা ৫০ মিনিট নাগাদ কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের তদন্তকারী সংস্থা সিআইডির কর্মকর্তারা তাকে আদালতে তোলেন।

বুধবার দুপুর ২টা ৩০ মিনিট নাগাদ বিচারপতি শুভঙ্কর বিশ্বাসের এজলাসে তোলা হলে সিআইডির পক্ষ থেকে আরও কিছু তথ্য উদ্ধারের জন্য ফের দুদিনের সিআইডি হেফাজতে চাওয়া হয়। বিচারপতি শুভঙ্কর বিশ্বাস সিআইডির কাছে জানতে চান ১২ দিনের সিআইডির হেফাজত দেওয়া হয়েছিল, তাতে কিছুই পাওয়া গেছে।

সিআইডির কর্মকর্তারা বিচারপতি শুভঙ্কর বিশ্বাসকে জানান, বেশকিছু তথ্য পাওয়া গেছে, আরও কিছু দিনের হেফাজতে দিলে তদন্তের অগ্রগতি আসবে। এর পর বিচারপতি শুভঙ্কর বিশ্বাস অভিযুক্ত জিহাদকে ২ দিনের সিআইডি হেফাজতের নির্দেশ দেন। অর্থাৎ পরবর্তী শুনানির দিন আগামী ৭ জুন। অভিযুক্তে জিহাদ হাওলাদারের বিরুদ্ধে ভারতীয় দন্ডবিধির ৩৬৪ (হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণ), ৩০২ (অপরাধমূলক নরহত্যা), ২০১ (তথ্য প্রমাণ লোপাট) এবং ১২০বি (অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র)- এই চার জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা দেওয়া হয়েছে।

আদালত সূত্র জানান, সৈয়দ আমানুল্লাহ আমান ওরফে শিমুল ভুইয়া আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বলেছেন, এমপি আনার হত্যাকা-ের পুরো কিলিং মিশনে নেতৃত্ব দিয়েছেন। এমপি আনার হত্যাকা-ের পর তার হাত-পাসহ শরীরের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ টুকরা টুকরা করে আলাদা করে ট্রলি ও ব্যাগে করে খণ্ড খণ্ড লাশ বের করে অজ্ঞাত স্থানে ফেলা হয়েছে।

সৈয়দ আমানউল্লাহ আমান স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়ায়  ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখায় (ডিবি) গ্রেপ্তার হওয়া তিন আসামিই জবানবন্দি দিয়েছেন। স্বীকারোক্তিমূলক  জবানবন্দি দেওয়ার পর তিন আসামিকেই কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।

আদালত সূত্র জানান, জবানবন্দিতে সৈয়দ আমান উল্লাহ আমান বলেছেন, আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যাকা-ের ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী তারই ছোটবেলার বন্ধু ও ব্যবসায়িক অংশীদার ঝিনাইদহের বাসিন্দা ও যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক আক্তারুজ্জামান শাহীন।

এই হত্যার পরিকল্পনা করে তা বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেয় আরেক বন্ধু ও পুর্ববাংলা সর্বহারা পার্টির নেতা চরমপন্থি নেতা আমানউল্লাহ আমানকে। আনারকে হত্যার জন্য পাঁচ কোটি টাকায় চুক্তিবদ্ধ হয় আমান। এই টাকা দিতে চেয়েছিলেন আক্তারুজ্জামান শাহীন। হত্যাকা-ের আগে আমানকে কিছু টাকা দেওয়া হয়। হত্যাকা-ের পর বাকি টাকা দেওয়ার কথা ছিল।

কলকাতায় বসে হত্যার চূড়ান্ত ছক এঁকে বাংলাদেশে চলে আসেন শাহীন। পরে আমানসহ ছয়জন মিলে এমপি আজিমকে সঞ্জীবা গার্ডেন নামের একটি ফ্ল্যাটে ট্র্যাপে ফেলে ডেকে আনেন। এর পর তাকে জিম্মি করে বালিশচাপা দিয়ে হত্যা করা হয়। পুরো কিলিং মিশনে সবার সামনে ছিলেন শিমুল ভূঁইয়া ওরফে  সৈয়দ আমানুল্লাহ। হত্যার পর তার হাত-পাসহ শরীরের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ টুকরা টুকরা করে আলাদা করে হত্যাকারীরা।

এমপি আনারকে হত্যার বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন শিমুল ভূঁইয়া ওরফে আমানুল্লাহ। কীভাবে এমপি আনারকে বালিশচাপা দিয়ে হত্যার পর হাত-পাসহ শরীরের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ আলাদা করা হয়। যেন কোনোভাবেই আনারের চেহারা দেখে কেউ পরিচয় শনাক্ত করতে না পারে, সেজন্যই খুনিরা এ পরিকল্পনা করে। এর পর ট্রলি ও ব্যাগে করে খ- খ- লাশ বের করে নেওয়া হয়। পরে মরদেহ কেটে টুকরা টুকরা করে ট্রলি ব্যাগে ভরে ফেলা হয় অজ্ঞাত স্থানে।

হত্যাকা-ের মিশন সফল হওয়ার পর আনারের মরদেহের টুকরাগুলো গুম করার জন্য সিয়াম ও জিহাদ নামের দুজনকে দায়িত্ব দিয়ে ঢাকায় চলে আসেন আমান। ঢাকায় এসে আক্তারুজ্জামান শাহীনের সঙ্গে দেখা করেন। 

এমপি আনার হত্যাকা-ে প্রথমে জবানবন্দি দিয়েছেন শিলান্তি রহমান। এর পর ফয়সাল আলী সাজী ওরফে তানভীর ভূঁইয়া জবানবন্দি দিয়েছেন। সর্বশেষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন  সৈয়দ আমানুল্লাহ আমান ওরফে শিমুল ভুঁইয়া।  ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) হাতে গ্রেপ্তার হওয়া তিন আসামীকেই রিমান্ড নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের পর আদালতে হাজির করে দায় স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়ার পর কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।

গত ৪ জুন রিমান্ড চলাকালীন ফয়সাল আলী সাজী ওরফে তানভীর ভূঁইয়াকে আদালতে হাজির করে পুলিশ। এর পর তিনি স্বেচ্ছায় জবানবন্দি দিতে রাজি হলে তা রেকর্ড করার আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার মাহফুজুর রহমান। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে  ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেন তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন।

জবানবন্দি রেকর্ড শেষে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত। এর আগে গত ৩ জুন রিমান্ড চলাকালীন সিলিন্তি রহমানকে আদালতে হাজির করে পুলিশ। এর পর তিনি স্বেচ্ছায় জবানবন্দি দিতে রাজি হলে তা রেকর্ড করার আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার মাহফুজুর রহমান।

আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে  ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেন তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন। জবানবন্দি রেকর্ড শেষে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানান, এমপি আনার হত্যাকান্ডের মামলায় ৩১ মে কয়েকজন আসামির প্রথম দফা রিমান্ড শেষ হয়। তারা হলেন-সৈয়দ আমানুল্লাহ আমান ওরফে শিমুল ভূঁইয়া, ফয়সাল আলী সাজী ওরফে তানভীর ভূঁইয়া ও সিলিন্তি রহমান। তাদের আদালতে হাজির করে মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য আরও ৮ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা।

শুনানি শেষে  ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শান্ত ইসলাম মল্লিকের আদালত প্রত্যেকের পাঁচদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এর আগে ২৪ মে দুপুর সোয়া ২টার দিকে তিন আসামিকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। এ সময় মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য তাদের ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়।

শুনানি শেষে  ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট দিলরুবা আফরোজ তিথি প্রত্যেকের আটদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এর আগের দিন ২৩ মে  সৈয়দ আমানুল্লাহ আমান ওরফে শিমুল ভূঁইয়া, ফয়সাল আলী সাজী ওরফে তানভীর ভূঁইয়া ও সিলিন্তি রহমানকে অপহরণ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

গত ১২ মে চিকিৎসার জন্য ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ থেকে ভারতে যান এমপি আনার। পশ্চিমবঙ্গে বরাহনগর থানার ম-লপাড়া লেনে গোপাল বিশ্বাস নামে এক বন্ধুর বাড়িতে ওঠেন। পরদিন চিকিৎসক দেখানোর কথা বলে বাড়ি থেকে বের হন। এর পর থেকেই রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হন আনোয়ারুল আজিম।

বাড়ি থেকে বেরোনোর পাঁচদিন পর ১৮ মে বরাহনগর থানায় আনোয়ারুল আজিম নিখোঁজের বিষয়ে একটি জিডি করেন বন্ধু গোপাল বিশ্বাস। এর পরও খোঁজ মেলে না তিন বারের এই সংসদ সদস্যের। ২২ মে হঠাৎ খবর ছড়ায়, কলকাতার পার্শ্ববর্তী নিউটাউন এলাকায় সঞ্জীবা গার্ডেনস নামে একটি আবাসিক ভবনের বিইউ ৫৬ নম্বর রুমে আনোয়ারুল আজিম খুন হয়েছেন।

ঘরের ভেতর পাওয়া গেছে রক্তের ছাপ। তবে ঘরে মেলেনি মরদেহ। এ ঘটনায় ২২ মে  ঢাকার শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করেন তার মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন।

মামলার এজাহারে এমপির মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন উল্লেখ করেন, ৯ মে রাত ৮টার দিকে আমার বাবা মানিক মিয়া এভিনিউয়ের সংসদ সদস্য ভবনের বাসা থেকে গ্রামের বাড়ি ঝিনাইদহে যাওয়ার উদ্দেশে রওনা হন। ১১ মে ৪টা ৪৫ মিনিটে বাবার সঙ্গে মোবাইলে ভিডিও কলে কথা বললে বাবার কথাবার্তায় কিছুটা অসংলগ্ন মনে হয়।

এর পর বাবার মোবাইলফোনে একাধিকবার ফোন দিলে বন্ধ পাই। ১৩ মে আমার বাবার ভারতীয় নম্বর থেকে হোয়াট অ্যাপে একটি মেসেজ আসে। মেসেজে লেখা ছিল ‘আমি হঠাৎ করে দিল্লি যাচ্ছি, আমার সঙ্গে ভিআইপি আছে। আমাকে ফোন দেওয়ার দরকার নেই। পরে ফোন দেব’। এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়, আমরা বিভিন্ন জায়গায় বাবার খেঁাঁজখবর করতে থাকি।

কোনো সন্ধান না পেয়ে বাবার বন্ধু গোপাল বিশ্বাস কলকাতার বরাহনগর পুলিশ স্টেশনে সাধারণ ডায়েরি করেন। বাবাকে খোঁজাখুঁজি অব্যাহত রাখি। পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানতে পারি অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তিরা পূর্বপরিকল্পিতভাবে বাবাকে অপহরণ করে। বাবাকে সম্ভাব্য সব স্থানে খোঁজাখুঁজি করেও পাইনি।

google.com, pub-6631631227104834, DIRECT, f08c47fec0942fa0