প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের পর এখন তা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলাপ আলোচনা চলছে। যথারীতি বিরোধী দল শেখ হাসিনার এই ভারত সফরকে ব্যর্থ এবং নিষ্ফল বলেছে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ভারত সফরে দুই দেশের সম্পর্ক নতুন মাত্রায় উন্নীত হয়েছে এবং তাদের সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন যে, বাংলাদেশকে ভারতের সেবা দাসে পরিণত করা হয়েছে। ভারতের কাছে বাংলাদেশের যে ন্যায্য হিস্যা গুলো সেগুলো আদায়ও নতজানু সরকার ব্যর্থ হয়েছে। তবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যাই বলুন না কেন, নির্মোহ ভাবে ভারত সফর বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে যে, এই সফরে প্রচুর ইতিবাচক দিক রয়েছে।
ভারত সফরে মোটা থাকে যে বিষয়গুলো নিয়ে ভারত সরকারের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী আলোচনা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে তিস্তা নদী সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনায় ভারতের সাথে যৌথভাবে কাজ করা এবং এজন্য ভারত একটি বিশেষজ্ঞ টিম বাংলাদেশে পাঠাবে। বাংলাদেশের জন্য ই-মেডিক্যাল ভিসা চালু করবে ভারত। রাজশাহী-কলকাতার নতুন যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এই বৈঠকে। চট্টগ্রাম-কলকাতা বাস চালু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ভারতীয় গ্রিডের সাহায্যে নেপাল থেকে বিদ্যুৎ কিনবে বাংলাদেশ। ভারতের সহায়তায় সিরাজগঞ্জে অভ্যন্তরীণ কন্টেইনার ডিপো তৈরি করা হবে। এছাড়াও দুই দেশের ভেতর যে অমীমাংসিত বিষয়গুলো আছে, সেই অমীমাংসিত বিষয়গুলো নিয়ে তারা আরও সম্পর্ককে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
নানা কারণে এই সফর অত্যন্ত তাত্পর্যপূর্ণ এবং গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা। প্রথমত, এই সফরের মধ্য দিয়ে নতুন সরকারের সাথে সম্পর্ককে চলমান রাখার অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হল। ভারতে এখন একটি নতুন সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশেও নতুন সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। গত এক দশকে বাংলাদেশ এবং ভারতের সম্পর্কের যে উন্নয়নের ধারা সেটি যেন অব্যাহত থাকে তা ঝালাই করা অত্যন্ত প্রয়োজন ছিল। কারণ বাংলাদেশে যেমন আওয়ামী লীগ সরকার টানা চতুর্থবারের মতো দায়িত্ব গ্রহণ করেছে ভারতের তেমনি বিজেপি একটি জোট সরকার গঠন করেছে। টানা তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন নরেন্দ্র মোদি। এই বাস্তবতায় দুই দেশের সম্পর্ক যেখানে ছিল, সেখান থেকে আবার নতুন মাত্রায় এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য এই সফরটি ছিল গুরুত্বপূর্ণ।
দ্বিতীয়ত, এই সফরের মাধ্যমে বাংলাদেশকে মর্যাদার আসনে বসিয়েছে ভারত। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহনের পর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী প্রথম সরকারি সফরে গেলেন। এটা নিঃসন্দেহে একটি নতুন বার্তা দেয়। বাংলাদেশ ভারতের কাছে যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এটি প্রমাণিত হয়েছে এই সফরের মধ্য দিয়ে। ভারত যে বাংলাদেশকে গুরুত্ব দেয় তা এই সফরের মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয়েছে এবং এই গুরুত্বের বিষয়টি কেবল কথার কথা না এটি যে একটি বাস্তবতা সেটিও প্রমাণিত হয়েছে।
তৃতীয়ত, এই সফরের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের বেশ সুবিধা অর্জিত হয়েছে। যেমন ই-ভিসা চালু করা, ঢাকা-কলকাতার পাশাপাশি রাজশাহী-কলকাতা, চট্টগ্রাম-কলকাতা সহ যে যোগাযোগ ব্যবস্থার নতুন মাত্রাগুলো যুক্ত হয়েছে তা দু দেশকেই লাভবান করবে। বিশেষ করে লাভবান হবে বাংলাদেশ। তবে সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে যে, পারস্পরিক বিশ্বাস এবং আস্থার যে সম্পর্কের জায়গা সেটি এর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এটি এই সফরের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
সূত্র: বাংলা ইনসাইডার