শুক্রবার, ডিসেম্বর ৬, ২০২৪
Logo
logo

প্রচণ্ড দাবদাহে পুড়ছে দেশ

the weather


অনলাইন ডেস্ক: প্রকাশিত:  ২৮ নভেম্বর, ২০২৪, ০৭:৩১ এএম

প্রচণ্ড দাবদাহে পুড়ছে দেশ
প্রচণ্ড দাবদাহে বিপর্যস্ত হয়ে পুড়ছে প্রায় গোটা দেশ। ....সংগৃহীত ছবি

প্রচণ্ড দাবদাহে বিপর্যস্ত হয়ে পুড়ছে প্রায় গোটা দেশ। প্রচণ্ড গরমে-ঘামে হাঁপাচ্ছে মানুষ। ঘরে-বাইরে প্রশান্তি নেই কোথাও। কোনো কোনো জেলায় তাপমাত্রার পারদ ৪১ ডিগ্রিতে পৌঁছালেও তপ্ত অনুভূত হচ্ছে অনেক বেশি। বাতাসের আর্দ্রতার আধিক্যে ভ্যাপসা গরমে নাভিশ্বাস দশা। বহু জনপদে থমকে গেছে স্বাভাবিক জনজীবন। হাঁসফাঁস করছে প্রাণিকুল। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া তেমন কেউ গৃহ আবাসের বাইরে যাচ্ছেন না। রাস্তাঘাট সড়কে পিচ গলছে। নিদাঘের মধ্যাহ্ন সূর্য যেন প্রকৃতিতে তরল আগুন ঢালছে। প্রতিদিন বাড়ছে উষ্ণতা। তীর্যক সূর্যের অসহনীয় তাতানো তাপের কারণে জনশূন্য হচ্ছে শহর-নগর-পল্লিপথ। মধ্যাহ্নে বাতাস নেই। ঝাঁ ঝাঁ করছে চারিদিক। পশ্চিম ও উত্তরাঞ্চলে গত এক সপ্তাহ টানা তাপপ্রবাহ মাঝারি থেকে তীব্র, তীব্র থেকে আরও তীব্রতর হচ্ছে।

গতকাল ছয় জেলায় তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে ছিল। চুয়াডাঙ্গা যেন গনগনে অগ্নিভূমি। গতকাল বুধবার চুয়াডাঙ্গায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে প্রায় ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস! 

আবহাওয়াবিদরা বলছেন, দাবদাহ আরও বৃদ্ধি পাবে। সহসা প্রশান্তির পূর্বাভাস নেই। এ মাসে তাপমাত্রা ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত ওঠার আশঙ্কা রয়েছে। গতকাল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চূয়াডাঙ্গায় ৪০ দশমিক ৮ ডিগ্রি রেকর্ড করা হয়। এছাড়া কুষ্টিয়া কুমারখালীতে ৪০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যশোরে ৪০ দশমিক ২ ডিগ্রি, রাজশাহী ৪০ দশমিক ৪, ঈশ্বরদী ৪০ দশমিক ৫, মোংলা ৪০ ডিগ্রি তাপমাত্রার রেকর্ড করা হয়। চলমান তপ্ত বৈরী আবহাওয়ায় খর রোদ্র দহনে পুড়ছে মানুষ, পুড়ছে ফল-ফসল, খেত-খামার, জীববৈচিত্র্য-প্রকৃতিরাজ্য। আম, লিচুর গুটি, কাঁঠালের মোছাসহ মৌসুমি ফলমূলের গুটি প্রচণ্ড রোদে শুকিয়ে ঝরে যাচ্ছে। নদী, খাল, পুকুর-দীঘিসহ পানির উৎসগুলো শুকিয়ে তলানিতে ঠেকেছে। মাঠের ফসল, বাগান-মাঠেই শুকিয়ে যাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড়ের শঙ্কায় পাকা ধান কাটতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন কৃষক-শ্রমিকরা।

আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, এপ্রিল মাসের বাকি সময় জুড়েই দেশে থাকবে তাপপ্রবাহ। তবে কোথাও কোথাও তাপমাত্রা ওঠানামা করতে পারে। এ মাসে তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি পর্যন্ত উঠার আশঙ্কা রয়েছে। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৭ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে মৃদু তাপপ্রবাহ, ৩৮ থেকে ৩৯ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে মাঝারি তাপপ্রবাহ, ৪০ থেকে ৪১ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে তীব্র তাপপ্রবাহ এবং ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার বেশি হলে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বলে থাকে আবহাওয়া অধিদপ্তর। 

আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ বলেন, আগামীকাল শুক্রবার থেকে সারা দেশে তাপমাত্রা আরও বাড়তে পারে। আর শনিবারের পর ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যেতে পারে। 

বজলুর রশীদ বলেন, এপ্রিল উষ্ণতম মাস হওয়ায় এ মাসের বাকি দিনগুলো জুড়েই সারা দেশে থাকবে দাবদাহ। আর এ সময় অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে। আগে এপ্রিল মে মাস পর্যন্ত তাপপ্রবাহ থাকত। তিনি বলেন, এই মৌসুম গরম-ঝড়-বৃষ্টির মৌসুম। ঝড়-বৃষ্টি হতেই থাকবে। তবে ঝড়ের সঙ্গে বৃষ্টির পরিমাণ যদি পর্যাপ্ত না হয়, তাহলে গরম কমার কোনো সম্ভাবনা নেই। 

আবহাওয়াবিদ এ কে এম নাজমুল হক বলেন, আবহাওয়া নিয়ে সহসাই কোনো সুসংবাদ নেই। দেশের ওপর দিয়ে চলমান মৃদু ও মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে। জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তি আরও বৃদ্ধি পেতে পারে।

আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত ১০ বছরে দেশের গড় তাপমাত্রা বেড়েছে এক থেকে দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকায় গড়ে বেড়েছে প্রায় ৩ ডিগ্রির মতো। এখন তা বেড়ে জুন-জুলাই পর্যন্ত বিরাজ করে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আবহাওয়ার এই বৈরী আচরণ। গত ২৯ মার্চ আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান সাময়িকী ‘আরবান ক্লাইমেট’-এ প্রকাশিত ‘চেঞ্জেস ইন হিউম্যান ডিসকমফোর্ট অ্যান্ড ইটস ড্রাইভার ইন বাংলাদেশ’ গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতি ১০ বছরে বাংলাদেশে দশমিক ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস করে তাপমাত্রা বাড়ছে। আর আর্দ্রতা বাড়ছে দশমিক ৩ শতাংশ হারে।