আর্কাইভ কনভাটার ঢাকা, সোমবার, মে ২০, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
Logo

Jibanananda Das

জীবনানন্দ দাশের ১২৫তম জন্মজয়ন্তী উদযাপনে বৈচিত্র্যময় আয়োজন

Bijoy Bangla

অনলাইন ডেস্ক:

প্রকাশিত: ১১ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪, ১১:০০ এএম

জীবনানন্দ দাশের ১২৫তম জন্মজয়ন্তী উদযাপনে বৈচিত্র্যময় আয়োজন

এ বছর কবি জীবনানন্দ দাশের ১২৫তম জন্মজয়ন্তী উদযাপনে বরিশালে বৈচিত্র্যময় আয়োজন করছে জীবনানন্দ উদযাপন পর্ষদ। আগামী ১৭ ফেব্রুয়ারি ব্রজমোহন বিদ্যালয় কম্পাউন্ডে এই আয়োজন অনুষ্ঠিত হবে। 

অনুষ্ঠানে সবাইকে আমন্ত্রণ জানিয়ে শনিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে বরিশাল রিপোর্টার্স ইউনিটির মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলন করে এসব তথ্য জানান জীবনানন্দ জন্মজয়ন্তী উদযাপন পর্ষদ। এ আয়োজনে কোনো ধরনের প্ল্যাস্টিক বা প্যানাফ্লেক্স সামগ্রী ব্যবহার করা হবে না বলে পর্ষদ সিদ্ধান্ত নিয়েছে । 

জীবনানন্দ জন্মজয়ন্তী উদযাপন পর্ষদের আহ্বায়ক কবি ও শিক্ষাবিদ অধ্যাপক দীপঙ্কর চক্রবর্তী বলেন, জীবনানন্দ দাশের চলে যাওয়ার পর আমরা সবাই বুঝেছি তিনি কত বড় কবি ছিলেন। সাধারণ জীবনযাপন করেও তিনি অসাধারণ কবিতা লিখেছেন। বিগত দিনের ধারাবাহিকতায় কবি জীবনানন্দ দাশের ১২৫তম জন্মজয়ন্তীতে বরিশালের অনেকেই অনেক কিছু করবে। তবে আমরা একটু ভিন্নতায় গুরুত্ব দিয়েছি।

তিনি বলেন, কোনো কিছুর উদযাপনের পেছনে দুটি জিনিস কাজ করে, একটি হল মনে করিয়ে দেওয়া আর একটি হল প্রচার। আর আমরা স্থানীয় প্রচারকে গুরুত্ব দিয়েই সাংবাদিক বন্ধুদের সঙ্গে বসেছি। আশা করি আপনাদের লেখনীর মধ্য দিয়ে জীবনানন্দ দাশের ১২৫তম জন্মজয়ন্তী সম্পর্কে আরও বেশি মানুষ জানবে। তাকে নিয়ে ভাববে।

জন্মজয়ন্তী উদযাপন পর্ষদের সদস্য জাহিদ আব্দুল্লাহ রাহাত বলেন, কবি জীবনানন্দ দাশের ১২৫তম জন্মজয়ন্তীতে বোধের জায়গাটিতে ঝাঁকুনি দেওয়া একটা সময় হয়েছে। আমরা এমন একটি আয়োজন করতে চাই যা দীর্ঘমেয়াদে এই শহরে একটি কার্যকরী অনুরণ সৃষ্টি করবে।

তিনি বলেন, প্রথমবারের মতো জীবনানন্দ দাশকে নিয়ে কোনো আয়োজন ব্রজমোহন বিদ্যালয়ে হচ্ছে। আমরা জানি জীবনানন্দ এই প্রতিষ্ঠানটির একজন কৃতি শিক্ষার্থী ছিলেন, যিনি ভালো ফলাফলের কারণে প্রতিবছর শিক্ষা বৃত্তি পেতেন। এই কৃতি শিক্ষার্থীর কল্যাণে বাংলা সাহিত্যে ব্রজমোহন বিদ্যালয় নামটি অক্ষয় হয়ে থাকবে। এই বিষয়টি বিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকরা হয়ত বুঝবেন। আশা করি প্রতিবছর এই মানের অন্তত একটি আয়োজন তারা করবেন। এছাড়া জীবনানন্দের জীবনের দু’জন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব তার বাবা সত্যানন্দ দাশ এবং প্রধান শিক্ষক আচার্য জগদীশ্চন্দ্র মুখোপাধ্যায় এর মতো শিক্ষকেরা একসময়ে এই বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন।  এমন মহতী শিক্ষকদের শিক্ষা কি ছিলো -এ বিষয়ে বিদ্যালয়ে আগ্রহ তৈরী হোক।

ব্রজমোহন বিদ্যালয় নামাঙ্কিত ভবনটি জীবনানন্দ যখন পড়তেন তখনও এভাবেই ছিলো। আমরা মনে করি এটি একটি ঐতিহাসিক স্থাপনা এবং ভবনটি অবিকল রেখে আরও সুরক্ষিত করা উচিত। আমরা এই ভবনটিকেই আমাদের আয়োজনের ব্যাকড্রপ হিসেবে নান্দনিকভাবে উপস্থাপন করতে চাই। 

আয়োজকরা জানান, জীবদ্দশায় জীবনানন্দ মাত্র ২৭২ টি কবিতা প্রকাশ করেছিলেন, অথচ তাঁর প্রায় সাড়ে তিন হাজারের উপরে কবিতা রয়েছে যা তার মৃত্যুর পরে আবিষ্কৃত হয়েছে এবং এখনও অপ্রকাশিত কবিতা নামে প্রকাশিত হচ্ছে। তিনি ২৭ টি উপন্যাস, ১০৯ টি ছোটগল্প লিখেছেন, এছাড়া অসংখ্য প্রবন্ধ, সমালোচনা সাহিত্য, চিঠিপত্র, লিটেরারী নোটস ইত্যাদি পাওয়া যাচ্ছে। তাঁর আর্থিক সংকটের সময়ে তিনি যে কিছু গানও লিখেছিলেন টা একেবারেই অনাবিষ্কৃত ছিলো। আমরা জীবনানন্দের ১৫ টি গান পেয়েছি(জীবনানন্দ দাশ: বিকাশ প্রতিষ্ঠার ইতিবৃত্ত-দেবীপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায়, পৃষ্ঠা: ৫৮৫)যার মধ্যে বাছাই করে ৫ টি গানের সুর ও সঙ্গীতায়োজন করা হয়েছে। যা এপার বাংলা-ওপার বাংলা মিলে সম্ভবত প্রথমবারের মতো পরিবেশিত হতে যাচ্ছে।

যারা গানগুলোর সুর ও সঙ্গীতায়োজন করেছেন ব্রজমোহন বিদ্যালয়ের শিক্ষক মৈত্রী ঘরাই, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সোহেল রানা, সরকারি বরিশাল কলেজের ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সঞ্জয় হালদার, নজরুল ও উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত শিল্পী রিপন কুমার গুহ।

অনুষ্ঠানে কোন প্রধান ও বিশেষ অতিথি নেই জানিয়ে তারা বলেন, সবাইকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি, আমরা সবার উপস্থিতিও কামনা করছি। তবে যারা নিবিষ্ট মনে জীবনানন্দকে নানাভাবে চর্চা ও ধারণ করেন, তাদের মধ্যে বরিশালেই জন্ম এমন ৩ জন তরুণ আমীন আল রশীদ, সৌরভ মাহমুদ ও আব্দুল্লাহ মাহফুজ অভিকে এই আয়োজনে অতিথি করা হচ্ছে। 

বাস্তবতা হলো জীবনানন্দের শহরে তার অনুরাগীরা এসে মোটামুটি একটা হোঁচট খান। কারণ জীবনানন্দের বাংলার এই ছবি আজ কল্পনায় শুধুমাত্র। বিলীন হয়ে যাচ্ছে তার প্রিয় ঝাউবন, লাল সুড়কির ইটের রাস্তা, জলসিঁড়ি- ধানসিঁড়ি নদীর তীর, ঘুঘু, প্যাঁচা, গোলপাতার ছাউনি কিংবা নাটাফল। জীবনানন্দ চর্চা বা আয়োজনে সংশ্লেষণের জায়গাটিও অনুপস্থিত। কবি জীবনানন্দ দাশের ১২৫তম জন্মজয়ন্তীতে এই বোধের জায়গাটি জাগিয়ে তোলার একটা সময় এসেছে। আমরা এমন একটি আয়োজন করতে চাই যা দীর্ঘমেয়াদে এই শহরে একটি কার্যকরী অনুরণন সৃষ্টি করতে পারে।


google.com, pub-6631631227104834, DIRECT, f08c47fec0942fa0