পুলিশ আরো বলছে, কিশোর গ্যাং সদস্যদের অনেকেই এসেছে সচ্ছল পরিবার থেকে। তাদের সঙ্গে জোট বাঁধছে নগরীর বস্তির কিশোর যুবকরা। এদের মধ্যে অনেকেরই দামি মোটরসাইকেল রয়েছে। সন্ধ্যা নামলেই তারা একই মোটরসাইকেল  তিন- চারজন করে  উঠে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে নগরীর অলি-গলি  সহ এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে। 

তারা নেশার অর্থ যোগানে পথে কোনো পথচারী বা অটোরিকশা যাত্রীর ব্যাগ দেখলেই টান দিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। 

নগরীর থানা গুলোতে মামলার পরিসংখনে জানাগেছে গত এক মাসে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় এমন ২৬টি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে।তবে এর সংখা দ্বিগুনেরও বেশি বলে নগরবাসী বলছে।

সম্প্রতি নগরীর শাহ মখদুম থানার গাংপাড়ায় প্রতিপক্ষের আরাফাত হোসেন নামে এক কিশোরকে মারধরের পর অস্ত্র উঁচিয়ে নৃত্য করে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া ঐ ভিডিওতে দেখা যায়, বাদ্যের তালে তালে চাইনিজ কুড়াল, ধারাল ছুরি, রামদা ও অন্য দেশীয় অস্ত্র নিয়ে কিছু কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা নৃত্য করছে। পরে পুলিশ ভিডিও দেখে সনাক্ত করে  সাতজনকে গ্রেফতার করে। জানাগেছে গ্রেফতার এসব কিশোর গ্যাং সদস্যরা রাসিকের একজন ওয়ার্ড কাউন্সিলরের ছত্রছায়ায় এলাকায় চাঁদাবাজি করে আসছিল বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা।

জানা গেছে, বিভিন্ন ওয়ার্ড ও পাড়া-মহল্লায় নানা নামে গড়ে উঠেছে কিশোর গ্যাং। এর মধ্যে রয়েছে, ‘টেন স্টার বয়’, ‘রাইজিং বয়’, ‘অদম্য বালক’। এসব কিশোর গ্যাং সদস্যের অনেকে সারা দিন ঘুমায়, রাত হলেই নানা অপরাধে জড়ায়।মাঝে মধ্যে এরা হিন্দি ছবির বড় ভাই হবার জন্য নিজেরা নিজেদের শক্তি জানান দিতে নিজেদের মধ্যেই সংঘটিত হয়ে খূনের মতো নৃশংস ঘটনা।

২০২৩ সালের বছরের ৭ এপ্রিল ছিনতাই করে পালানোর সময় অনিক (১৯) নামে এক কিশোর গ্যাং সদস্য নগরীর ডাবতলায় মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ঘটনাস্থলেই নিহত হয়। এ সময় তার আরেক সহযোগী মারুফ হোসেন (১৮) মারাত্মক আহত হয়।

২৯ অক্টোবর রাতে রাজশাহী রেলস্টেশন এলাকায় সশস্ত্র ছিনতাইকারীর কবলে পড়েন বাগমারার  কৌশিক ও অভিজিৎ নামের দুই ছাত্র। তাদের ধারাল অস্ত্রের আঘাতে গুরুতর আহত হয়ে উভয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। কৌশিকের বুকে ৫০টি এবং অভিজিতের বুকে ৩০টি সেলাই দিতে হয়েছে।

১৭ সেপ্টেম্বর ভোরে নগরীর রাজারহাতা এলাকায় সশস্ত্র ছিনতাইকারীর আঘাতে রাজশাহী কলেজের পরিসংখ্যান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র নিশাদ আকরাম গুরুতর আহত হন। ১৬ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর ৩ অক্টোবর তিনি মারা যান।

সর্বশেষ ২০২৪ সালের চলতি মাসের ৮ ফেব্রুয়ারী  রাত সোয়া ৯টার দিকে রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনে খূন হয় মাঈনুল নামের এক আনসার সদস্য।এ ঘটনার সাথে জড়িত এক কিশোরকে আটক করে রেলওয়ে পুলিশ।

রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার বিপ্লব বিজয় তালুকদার বলেন, কিশোর গ্যাং সদস্যদের নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে পুলিশ। আগে নগরীতে পাঁচ শতাধিক কিশোর গ্যাং সদস্য ছিল। এই সংখ্যা কিছুটা বেড়েছে। নতুন কোনো গ্রুপ তৈরি হচ্ছে কিনা পুলিশ সেদিকে তীক্ষ্ণ নজর রাখছে।