আর্কাইভ কনভাটার ঢাকা, সোমবার, মে ২০, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
Logo

Awarded Ekushey Padak

কর্মগুণেই কিছু কিছু মানুষের নাম॥ দই বেচে বই বিলান জিয়াউল

Bijoy Bangla

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪, ০৩:০১ পিএম

কর্মগুণেই কিছু কিছু মানুষের নাম॥ দই বেচে বই বিলান জিয়াউল
কর্মগুণেই কিছু কিছু মানুষের নাম॥ দই বেচে বই বিলান জিয়াউল

কর্মগুণেই কিছু কিছু মানুষের নাম লেখা থাকে সোনার হরফে; মহাকালের কপালজুড়ে। এজন্য ধন নয়, মন থাকা চাই। প্রকৃত অর্থেই সাদা মন। এই ধ্রুব সত্যকে সবার সামনে ফের প্রতিষ্ঠিত করলেন জিয়াউল হক; মানবতার ইতিহাসে এক অনন্য উচ্চতায় আসীন হলেন। পেশায় দই বিক্রেতা এ বৃদ্ধ এবার একুশে পদক পেয়েছেন।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের উত্তর-পশ্চিমের সীমান্তবর্তী ভোলাহাট উপজেলার মুশরীভুজা বটতলা গ্রামে

তার বাড়ি। ‘দই বেচি, বই কিনি’ সেøাগানে দই বেচে তিনি এলাকায় শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিয়েছেন দরিদ্র কৃতী শিক্ষার্থীদের মাঝে। সমাজসেবায় অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৪ সালের একুশে পদক পেয়েছেন জিয়াউল হক।

গত ১৩ ফেব্রুয়ারি সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আইরীন ফারজান স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। জানা গেছে, জিয়াউল হক লেখাপড়া করেছেন ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত। পারিবারিক দরিদ্রতার কারণে প্রাথমিকের গ-ি পেরিয়ে আর এগোতে পারেননি তিনি। অল্প বয়সেই নেমে পড়েন বাবার পেশায়- দুধ বিক্রিতে। কিন্তু মনের মধ্যে স্কুলে না যাওয়ার আক্ষেপ তাড়িয়ে ফিরছিল তার মনকে। এ আক্ষেপ থেকেই তিনি এলাকার দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের বইসহ অন্যান্য উপকরণ কিনে দিতেন। এভাবে এলাকায় শিক্ষার আলো ছড়ানো শুরু করেন তিনি। আর দই বিক্রির টাকা থেকে কিনতেন দু-একটি বই অথবা পত্রপত্রিকা। ১৯৬৯ সাল থেকে তিল তিল করে গড়ে তোলেন ‘জিয়াউল হক সাধারণ পাঠাগার’।

শুরুর দিকে দরিদ্র মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে বিনামূল্যে পাঠ্যবই দিতেন। বর্ষ শেষে আবার ফেরত নিয়ে আসতেন। পরবর্তীতে স্থানীয় হাফিজিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানায় পাঠ্যবই, পবিত্র কোরআন মাজিদ ও এতিমদের পোশাক, শীতবস্ত্র বিতরণ অব্যাহত রাখেন। পবিত্র ঈদে দুস্থদের মধ্যে কাপড় বিতরণ করেন। এছাড়া গ্রামের বিভিন্ন ছিন্নমূল মানুষকে টিনের ঘরও তৈরি করে দেন। এতিমখানায় পবিত্র ঈদুল আজহায় কোরবানির গরু-খাসি কিনে দেন। এভাবেই তিনি সমাজসেবায় নিজেকে বিলিয়ে দেন।

জিয়াউল হকের পাঠাগারে ১৪ হাজারের বেশি বই আছে। দেশের খ্যাতিমান ব্যক্তি ও সংস্থা তাকে বই ও সেলফ দিয়ে সহায়তা করেছেন। শিক্ষানুরাগী ও সমাজসেবী জিয়াউল হক তার কর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে সম্মাননাও পেয়েছেন।

এদিকে, জিয়াউল হকের একুশে পদক প্রাপ্তিতে আনন্দে ভাসছে ভোলাহাটসহ পুরো চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা। তাকে অনেকেই অভিনন্দন জানাচ্ছেন।

এ ব্যাপারে জিয়াউল হক বলেন, গত বছরের আগস্ট মাসে রাষ্ট্রীয়ভাবে একুশে পদকের জন্য তালিকা প্রস্তুত করা হয়। বিষয়টি জানতে পেরে আমি যোগাযোগ করি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রশাসক (ডিসি) এ কে এম গালীভ খানের সঙ্গে। এরপর প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে ভোলাহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে যাই।

তিনি আরও বলেন, তৎকালীন ইউএনও উম্মে তাবাসসুম আমার কাগজপত্র যাচাই-বাছাই শেষে চূড়ান্ত মনোনয়নের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠান। এরপর গত ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ সালের একুশে পদকের জন্য আমার নাম ঘোষণা করা হয়।

এ বিষয়ে ভোলাহাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাশেদুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি আমি জেনেছি এবং গর্বিত হয়েছি। ভোলাহাট উপজেলা থেকে এমন একজন সমাজসেবীকে মনোনীত করায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট কৃতজ্ঞ। তার এ সম্মাননা প্রাপ্তিতে আরও অনেকে অনুপ্রাণিত হবে ও সমাজসেবায় এগিয়ে আসবে।

google.com, pub-6631631227104834, DIRECT, f08c47fec0942fa0