আর্কাইভ কনভাটার ঢাকা, সোমবার, মে ২০, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
Logo

Railway GM caught in dramatic dialogue

নিজেকে হিরোইজম ভাবা রেলের জিএম নাটকিয় সংলাপে ধরা

Bijoy Bangla

আবুল কালাম আজাদ (রাজশাহী)

প্রকাশিত: ০৯ মার্চ, ২০২৪, ০৪:২০ পিএম

নিজেকে হিরোইজম ভাবা রেলের জিএম নাটকিয় সংলাপে ধরা
নিজেকে হিরোইজম ভাবা রেলের জিএম নাটকিয় সংলাপে ধরা

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিইচ্ছুক  ৭ শতাধিক শিক্ষার্থীকে যথা সময়ে পৌঁছে দিলো রেলওয়ে পশ্চিম কতৃপক্ষ,৫ মার্চ পশ্চিম রেলের মহাব্যবস্থাপকের নিজস্ব পেইজে দেয়া পোস্টটি সম্প্রতি জনপ্রিয়তার শীর্ষে ভাইরাল হয়েছে।যা সবার নিকট প্রশংসনীয়।।

তবে সে দিন বিলম্বে চলাচলকারী ধুমকেতুর ট্রেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহনকারী শিক্ষার্থীদের নিয়ে নাটক করেছেন পশ্চিম রেলের মহাব্যবস্থাপক  অসীম কুমার তালুকদার বলে ঐ ট্রেনের যাত্রী এমনকি ট্রেনটিতে কর্তব্যরত রানিং স্টাফসহ অনেকের অভিযোগ। 

রেল কতৃপক্ষের সে দিন নিজেদের ব্যার্থতা আড়াল করে বিষয়টি ভিন্ন পথে প্রভাতি করার  জন্য, বিশেষ করে তিনি নিজেকে ভাইরাল করার জন্য নাটকীয় সংলাপ দিয়ে তার ফেসবুকে পোস্ট দেন।যা কাকতালীয় ভাবে সাধারন মানুষের মনে যায়গা করে নেয়।পোস্ট নিয়ে অনেক বাহাবা পান তিনি,এমন কি তিনি হিরো অবদ্যা গ্রেট হয়ে যান।

আসলে সেদিন কি হয়েছিলো,ঐট্রেনের যাত্রী ও ট্রেনটির কর্তব্যরত রানিং স্টাফদের সাথে আলাপ চারিতায় জানা গেছে প্রকৃত ঘটনা।

ট্রেনের "ক" কোচের  যাত্রী আব্দুল মান্নান জানান,পশ্চিম রেলের জিএম অসীম কুমার তালুকদার তার স্বভাবসুলভ আচরনের মতো সেদিন তিনি তার দলবল নিয়ে টিকিট চেক করা শুরু করেন,কোচ টিতে ২/৩ জন্য ছাত্রের নিকট জরিমানা সহ ভাড়া আদায়ও করেন।এনিয়ে তার সাথে বাকবিতন্ডায় জড়িয়ে পড়েন যাত্রীরা।

কারন অনেকে টিকিট পেয়েও নিজ সীটের কাছে যেতে পারেননি।এছাড়া কাউন্টারে টিকিট পাইনি।ট্রেনে তীল ধরনের ঠাইনেই,তার উপর যাত্রীদের ঠেলে দলবল নিয়ে চেকিং।জিএমের আচরনে অতিষ্ঠিত হয়ে উঠেন যাত্রীরা।

" চ" কোচের যাত্রী কনক রায় বলেন,জিএম একটা অমানুষ লোক,তার আচরনে ভদ্রতা বলে কিছু নাই।এমনিতে গাড়ী ভর্তি যাত্রী,তদুপরি দেড় ঘন্টা লেটে চলছে ট্রেন।আবার ট্রেনটিতে কিছু রাবিতে ভর্তি পরিক্ষা দেয়া ছাত্রও আছে।কি দরকার আছে অন্তত আজ চেক করার।

বিপত্তি ঘটে লাহাড়ী মোহনপুর স্টেশনে।যান্ত্রিক ত্রুটির জন্য ট্রেনটির ইন্জিন বিকল হওয়ায়।। ছাত্ররা হইহুল্লা শুরু করতেই জিএম কৌশলে শটকে পড়েন কোচ থেকে।

অপারেটিং রুমে আত্মগোপন করে কন্ট্রোলের সাথে যোগাযোগ করে অন্য ট্রেনের ইন্জিন দিয়ে ট্রেনটি চালানোর ব্যবস্থা করেন।আসলে তিনি নিজেকে ও ট্রেনটিটে ভাংচুরের কবল থেকে রক্ষা করতে পদক্ষেপটি নেন। যাত্রী বা ছাত্রদের স্বার্থে নয়।

পরদিন জানাগেছে ঐ ট্রেনে আসা ছাত্ররা সেদিন  কেউ পরিক্ষার হলে ঢুকতে পারেনি রাাবির নিয়মানুযায়ী। 

জিএম অসীম কুমার তালুকদারের পোস্টটি এমন:


আজকের ধূমকেতুর যাত্রাঃ 

আজ(০৫/০৩/২০২৪) রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা শুরু হয়েছে। এটাকে পরীক্ষা না বলে ভর্তি যুদ্ধ বলা যেতে পারে। প্রায় ৭০০ ছাত্র ছাত্রী আজকে ধুমকেতু এক্সপ্রেস ট্রেনে ঢাকা থেকে এসে বিকেল সাড়ে তিনটার ভর্তি  পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবেন । রেল ব্রোকেনের জন্য ধুমকেতু এক্সপ্রেস ঢাকা থেকেই বিলম্বে রওনা হয়। সকাল ১১ টায় হিসেব করে দেখা গেল ট্রেনটি বিকেল ৩:০০ টা নাগাদ রাজশাহী পৌঁছবে। পরীক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে ট্রনটি অন্য ট্রেনকে বসিয়ে দিয়ে এগিয়ে আনছিলাম। ভাগ্য এতই খারাপ,  লাহেড়ী মোহনপুর স্টেশনে এসে ধূমকেতুর ইঞ্জিন ফেইল করে, চাকা ঘুরছে না । কি করা যায়, কি করা যায় পরীক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে শরৎনগরে বসা চিলাহাটি এক্সপ্রেস ট্রেনের ইঞ্জিন কেটে এনে  ধুমকেতু আবার চালু করলাম। হিসেবে করে দেখলাম ট্রেনটি বিকেল ৪ ঘটিকায় রাজশাহী পৌঁছবে, তখন পরীক্ষা শুরু হয়ে যাবে। মাননীয় ভিসি মহোদয়কে পরীক্ষার সময় পিছিনোর বিনীত অনুরোধ করলাম। তিনি আমাকে প্রায় ৪ বার ফোন করে ট্রেনের খবর নিলেন। ট্রেন সর্বোচ্চ অনুমোদিত গতিতে চলছে। দূশ্চিন্তা ছাড়ছে না। পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। উপায়ন্ত না দেখে আড়ানী স্টেশনের স্টপেজে ট্রেন না থামিয়ে থ্রু পাশ করলাম। ঈশ্বরকে খুব একটা ডাকি না, পরীক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে জোড়ে জোড়ে ডাকা শুরু করলাম, একটু মানত ও করলাম। ঈশ্বর মনে হয় সদয় হলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশনে ট্রেন থামিয়ে দিলাম, তখন বিকেল ৩/৩৮ ঘটিকা। দৌড় দৌড় হলে ঢুকতে হবে ৪ টার মধ্যে। ভিসি মহোদয়কে বিনীত অনুরোধ করলাম ছেলে মেয়েদের হলে ঢোকার সুযোগ দেয়ার জন্য। তিনি কথা রাখলেন এবং রেলওয়ের সবাইকে ধন্যবাদ দিলেন। ট্রেন পরিচালনায় পাকশী কন্ট্রোলে সার্বক্ষনিক ভাবে মনিটরিং করেন ডিআরএম(পাকশী)। এখন নিজেকে বেশ হালকা লাগছে।

আসলে রেলের এই কর্মকতার স্ট্যাটাস কতদূর সত্য বা কতটা নাটকীয় সংলাপ তার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ :


৭ মার্চ সন্ধায়,বিজয় বাংলা টিভি ও দৈনিক কাগজ,দৈনিক সমাচারকে দেয়া এক ভিডিও সাক্ষাতকারের তিনি এক প্রশ্নের জবাবে বলেন,ট্রেন টিতে ৭০০ পরিক্ষার্থী ছিলো।আসলে এটি তিনি তা ডাহা মিথ্যা বলেছেন।

রাবি কতৃপক্ষের পরিক্ষা কক্ষে উপস্থিত রোল অনু্যায়ী ঐদিন বেলা সাড়ে ৩ টায় ৭০ থেকে ৮০ জন্য শিক্ষার্থী  পরিক্ষা কক্ষে অনুপস্থিত ছিলো।

আর রেল বলছে ট্রেনটি ৩,৩৮ মিনিটে রাবি স্টেশনে থামে।

২) তিনি বলেন,ট্রেনে কোন হইহুল্লা হয়নি।

যাত্রীরা বলছেন শুধু হইহুল্লা নয় জিএম যাত্রী কতৃক ধাওয়া খেয়েছন।

৩) তিনি বলেন,শিক্ষার্থীদের স্বার্থে তিনি ট্রেন টিতে বিকল্প ইন্জিন সংযোজন করে দ্রুত গতিতে ট্রেন চালিয়ে নিয়ে আসেন।

আসলে বিকল ইন্জিন পরিবর্তন করে ট্রেন গন্তব্যে যাত্রীদের পৌঁছে দেয়া রেল কতৃপক্ষের নৈতিক দায়িত্ব, ট্রেন বিলম্বের চলছে এটা তাদের ব্যার্থতা।

৪) ট্রেন থেকে নামার পরে শিক্ষার্থীরা পরিক্ষার হলে ঢুকলো কিনা তিনি তার কোন খোজ নেননি বা রাবি কতৃপক্ষের নিকট নুন্যতম যোগাযোগও করেননি।

বরং তিনি বাহাবাহা নেয়ার জণ্য ফেসবুকে নাটকের সংলাপ লেখায় ব্যাস্ত ছিলেন।

জিএম এর দেয়া পোস্টে সাধারন মানুষের মতামত ও প্রতি ক্রিয়া:


সাংবাদিক রফিকুল ইসলাম তার নিজস্ব ফেসবুক আইডিতে লিখেছেন, 

রেলের পশ্চিমাঞ্চলের জিএম সাহেব গরু দিয়ে ট্রেন চালাইছেন!

৯২৮ টি আসনের বিপরীতে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা ধুমকেতু ট্রেনের ১২টি বগিতে ৭০০ নাকি পরীক্ষার্থী ছিলো। ধরে নিলাম অধিকাংশ আসনের জন্য বেছে বেছে পরীক্ষার্থীদেরই টিকিট দিছে রেল। তাহলে অভিভাবক থাকার কথা আরও অন্তত ৫০০। সেই সঙ্গে সাধারণ যাত্রী এবং টিকিট বিহীন যাত্রী থাকার কথা আরও অন্তত ৭০০। তাহলে কী এক ট্রেনে ১৯শ যাত্রী এনে গিনেজ বুকে নাম লিখায়ছে পশ্চিমাঞ্চল রেল? আর এতো যাত্রী কী ট্রেনের ছাদে এবং চাকার ওপরেও বসেছিলো? 

তবে জিএম সাহেব ওই ট্রেনে থাকা রাবি ভর্তিইচ্ছু পরীক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে তিন ঘন্টা দেরিতে ছাড়া ট্রেনটি তার ক্ষমতায় দ্রুত গতিতে রাজশাহীতে আনতে পেরেছেন; তার জন্য অবশ্যই ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য। কিন্তু এক ট্রেনে ৭০০ পরীক্ষার্থী ছিল এই কথা বিশ্বাস করা আর গল্পের গরু দিয়ে ট্রেন চালানোর কথা বিশ্বাস করা একই সমান।

বি: দ্র: আমার জানামতে, ধুমকেতু, সিল্কসিটি এবং পদ্মা ট্রেনে সর্বোচ্চ ১১০০ থেকে ১২০০ যাত্রী পরিবহন করা যায়। আর গড়ে যাত্রী পরিবহন করা হয় সর্বোচ্চ এক হাজার।

সাংবাদিক সুজা উদ্দীন ছোটন:

পশ্চিম রেলের জিএম একজন

বড় অভিনেতা। অডিশন দিলেই চান্স পেয়ে যাবেন বিটিভি ও বাংলাদেশ বেতারে। 

এছাড়াও থিয়েটার ও নাগরিক এর মত সংগঠনগুলোতেও  এমন অভিনেতার ডাক মিলতে পারে।

সাংবাদিক আবারার সাঈর:

রাবি: ভর্তি পরীক্ষায় পরীক্ষার্থীদের কক্ষে পৌছুতে রেল কর্তৃপক্ষ যার পর নাই চেষ্টা করে তাদের পরীক্ষার হলে ঢুকিয়েছেন।- এমন এক ধাপ্পাবাজি গল্প ঘুরে বেড়াচ্ছে সারা ফেসবুকে। সকলে সেটা শেয়ার করে বাহবা দিচ্ছেন। 

অন্য কথা, যুক্তি, তর্কে যাবোনা। শুধু বলবো রেল কর্তৃপক্ষের দাবি করা সেই কর্মকর্তাদের পরীক্ষা শুরুর ২০ মিনিট পূর্বে রাবি: স্টেশনে ছেড়ে দেবো। বলব 'যা বেটা, পরীক্ষার হল খুঁজে পরীক্ষা দিয়ে আয়।' 

শুধু একদিনে এমন গাঞ্জাখুরি গল্প দিয়ে আর কতোইবা নিজেদের দুর্বলতা ঢাকবেন? মিথ্যে বলারও তো একটা সীমা আছে না কি?- (বরাবর, রেল কর্তাগণ পশ্চিমাঞ্চল)

অংকুর সান্যাল:

এই কর্মকর্তা ট্রেনের ভেতরে আমাকে একবার চরম ভাবে হ্যারাজমেন্ট করেছিলো !

উনি নিজেকে রেল মন্ত্রীর চাইতেও নিজেকে বড় কিছু মনে করেন !

উনি জিএম কিন্তু উনি টিকেট চেক করে বেরিয়ে সেটা ফেসবুকে আপলোড করে নিজের হিরোইজম দেখিয়ে বেড়ান !

উনার অফিস নাকি চলন্ত ট্রেন 

গতকাল রাবির পরীক্ষার ভেতরে ট্রেন ৩ ঘন্টা লেট করে সেটা ধামাচাপা দিতে উল্টা আবার অকাট্য গল্প তৈরী করে সেটা ফেসবুকে আপলোড করে নিজেকে ভাইরাল করেছেন !

উনি ট্রেনের ভেতর দিয়ে হেটে গেলে সেটাও ফেসবুকে আপলোড করে নিজের হিরোইজম দেখাতে ব্যাস্ত থাকেন!

গতকালকের ঘটনার পরে যে গল্প ফেসবুকে তৈরী হলো !

তা ঐতিহাসিক উপসাগরীয় যুদ্ধের কাহিনীর চাইতেও একধাপ ওপরে !!

আপনাকে আবারও ধন্যবাদ এই সত্য ঘটনা সবার সামনে নিয়ে আসার জন্য

google.com, pub-6631631227104834, DIRECT, f08c47fec0942fa0