আর্কাইভ কনভাটার ঢাকা, বৃহস্পতিবার, মে ৯, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
Logo

Record production of tea in northern region

উত্তরাঞ্চলে চা উৎপাদনে রেকর্ড ॥ বাড়েনি কাঁচা চা পাতার দাম

Bijoy Bangla

অনলাইন ডেস্ক:

প্রকাশিত: ১২ মার্চ, ২০২৪, ০৩:২৪ এএম

উত্তরাঞ্চলে চা উৎপাদনে রেকর্ড ॥ বাড়েনি কাঁচা চা পাতার দাম
উত্তরাঞ্চলে চা উৎপাদনে রেকর্ড ॥ বাড়েনি কাঁচা চা পাতার দাম

এ বছরও রেকর্ড হারে চা উৎপাদন হয়েছে উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ে। চলতি মৌসুমে জাতীয় উৎপাদনে যুক্ত হয়েছে ১৭ শতাংশ চা। সিলেট ও পার্বত্যাঞ্চল অঞ্চলের পর দ্বিতীয় বৃহত্তম চা অঞ্চল হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে পঞ্চগড়সহ উত্তরাঞ্চল। ২০২৩ সালে রেকর্ড ১ কোটি ৭৯ লাখ ৪৭ হাজার ২৪০ কেজি চা পাতা উৎপাদন হয়েছে। গত বছর চা উৎপাদনে রেকর্ড হয়েছিল ৩২ লাখ কেজি বেশি। যা গত মৌসুমের চেয়ে ১ কোটি ৬৫ লাখ কেজি বেশি। 

তবে চা উৎপাদনে নতুন রেকর্ড হলেও কাঁচা চা পাতার দাম না পাওয়ার হতাশায় এ আবাদ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে শুরু করেছে চাষিরা। অনেকে চা বাগান উঠিয়ে ভিন্ন আবাদের দিকে ছুটছেন। এতে করে চা বাগান সরিয়ে ফেললে ধ্বংসের মুখে পড়তে পারে সবুজ অর্থনীতির এ শিল্প।

আঞ্চলিক চা কার্যালয় জানায়, উত্তরবঙের পাঁচটি জেলায় নিবন্ধিত চা বাগান রয়েছে ৯টি। ২০টি অনিবন্ধিত, ৮৩৭১টি ক্ষুদ্রায়তন চা বাগান (নিবন্ধিত ২১৬৪টি)। চা কারখানা রয়েছে ২৮টি। তার মধ্যে পঞ্চগড়ে ২৭টি ও ঠাকুরগাঁওয়ে একটি। ২০২৩ সালে উত্তরাঞ্চলের পাঁচ জেলায় ১২ হাজার ১৩২.১৮ একর জমিতে চা চাষ হয়েছে। এসব জমিতে চা বাগানগুলোতে ৮ কোটি ৬১ লাখ ৪৬ হাজার ৭০৪ কেজি সবুজ চা পাতা উত্তোলন করা হয়েছে। 

যা থেকে পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁও এর ২৮টি চা কারখানায় ১ কোটি ৭৯ লাখ ৪৭ হাজার ২৩০ কেজি চা উৎপন্ন হয়েছে। বিগত বছরের তুলনায় ২০২৩ সালে ৫৩.১২ একর চা আবাদী বৃদ্ধি পেয়েছে ও ১ কোটি ৬৫ লাখ কেজি চা বেশি উৎপন্ন হয়েছে। জাতীয় চা উৎপাদনে ১৭.৪৪ শতাংশ অবদানে অঞ্চলভিত্তিক চা উৎপাদনে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে এ অঞ্চল।


উত্তরাঞ্চলের শুধু পঞ্চগড়ের নিবন্ধিত ক্ষুদ্রায়তন চা বাগান রয়েছে ১ হাজার ৬৫, বড় চা বাগান রয়েছে ৮টি। অনিবন্ধিত চা বাগান রয়েছে ৫ হাজার ৮৫৫ ও বড় চাবাগান রয়েছে ২০টি। জেলায় মোট নিবন্ধিত চা বাগান ১৪৭৩ ও অনিবন্ধিত চাবাগান রয়েছে ৫৮৭৫ টি। ১০ হাজার ২৬৭.২৮ একর জমিতে আবাদকৃত বাগানে সবুজ চা পাতা (কেজি) উৎপাদিত হয়েছে ৭ কোটি ৩৮ লাখ ২৭৭ কেজি। আর উৎপাদিত তৈরি চা (কেজি) হয়েছে ১ কোটি ৫৩ লাখ ৭৫ হাজার ৫৭ কেজি।

১৯৯৬ সালে পঞ্চগড়ে প্রথম চা চাষের পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হলেও আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষুদ্র পর্যায়ে চা চাষ শুরু হয় ২০০০ সালে। এক সময়ের পতিত গো-চারণ ভূমি এখন সবুজ চা বাগান। সমতল ভূমিতে চা চাষে  ব্যাপক সম্ভাবনা তৈরি করে উত্তরাঞ্চলের জেলা ৫টি জেলা। পঞ্চগড়ের পর ২০০৭ সালে ঠাকুরগাঁও ও লালমনিরহাট এবং ২০১৪ সালে দিনাজপুর ও নীলফামারী জেলায় চা চাষ শুরু হয়। পঞ্চগড়ের চা শিল্পকে অনুসরণ করে ঠাকুরগাঁও, লালমনিরহাট, দিনাজপুর ও নীলফামারীতে চা উৎপাদনে সমৃদ্ধ করেছে রংপুরের পাঁচ জেলা। দুই দশকের বেশি সময় ধরে চা চাষ ও উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়ে দেশের চা উৎপাদনে দ্বিতীয় অবস্থানে পরিচিতি পেয়েছে। চা শিল্প ঘিরে এ অঞ্চলে ৩৫ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে।

চা শিল্পে সবুজ পাতায় সবুজ অর্থনীতিতে বদলে গেছে উত্তরাঞ্চল। এ শিল্পের কারণে দারিদ্র্য বিমোচন ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন হয়েছে। চা বোর্ড চা চাষ সম্প্রসারণে চাষিদের বিভিন্ন সহায়তার মাধ্যমে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। উন্নত জাতের উচ্চ ফলনশীল ও গুণগতমান সম্পন্ন বিটি সিরিজের চা চারা উৎপাদনের কাজ অব্যাহত রয়েছে। চাষীদের হাতে কলমে প্রশিক্ষণ দিতে ‘ক্যামেলিয়া খোলা আকাশ স্কুলে’র মাধ্যমে কর্মশালা, সমস্যা সমাধানে ‘দুটি পাতা একটি কুঁড়ি’ মোবাইল অ্যাপস চালু, আঞ্চলিক কার্যালয়ে একটি পেস্ট ম্যানেজমেন্ট ল্যাবরেটরি স্থাপনসহ চা বাজারজাতকরণে গত বছর দেশের তৃতীয় চা নিলাম কেন্দ্র চালু করা হয়েছে।

এদিকে ৫ বছর উত্তরাঞ্চলে চায়ের উৎপাদন বাড়লেও চা পাতার মূল্য নিয়ে হতাশ চাষিরা। কয়েক বছর ধরে উৎপাদিত কাচা পাতার দাম না পাওয়ায় এ শিল্প থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে শুরু করেছে অনেক চাষি। গত বছর থেকে অনেক চাষি চা বাগান উপড়ে ভিন্ন আবাদের দিকে ঝুকেছেন। চা অর্থনীতিতে উৎপাদন রেকর্ড বাড়লে কৃষকরা উৎপাদিত চা পাতার দাম পাওয়ায় লোকসান গুণতে পারছেন না বলে অভিযোগ চাষিদের। যার কারণে চা উৎপাদনের রেকর্ডের সুবার্তা এলেও চাষিদের কাছে এ নিয়ে কোন আনন্দ নেই।

অভিযোগ, চা শিল্প ঘিরে জেলায় ২৭টি চা কারখানা চালু থাকলেও পাতার দাম পাচ্ছেন না। সরকারিভাবে কাঁচা পাতার দাম ১৬ টাকা কেজি নির্ধারন করলেও তারা এ দামে কারখানায় পাতা বিক্রি করতে পারেননি। কারখানায় পাতা নিয়ে গেলে বিভিন্ন অজুহাতে ৩০-৪০% কর্তন ও নির্ধারিত মূল্য থেকে অর্ধেকের সামান্য বেশি কেজি প্রতি ১০-১২ টাকা বিক্রি করে না লাভের জায়গায় গুনতে হয়েছে লোকসান। মজুরি, পাতা উত্তোলনের খরচ ও সার-কীটনাশকের খরচও উঠেনি চা পাতা বিক্রি করে। চা পাতার ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা গেলে চায়ের আবাদ বাড়ার সাথে লোকসান কাটিয়ে স্বাবলম্বী হয়ে উঠবেন চাষিরা। তেমনি সরকারের রাজস্বও বৃদ্ধির সাথে উন্মোচিত হবে নতুন ব্যবসার দ্বার। কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে আরো হাজারো মানুষের।

অপরদিকে উত্তরাঞ্চলে সম্ভাবনাময় চা শিল্পকে বাঁচাতে ১০০ কোটি টাকার প্রণোদনার সুপারিশ করা হয়েছে। গত ২৩ ফেব্রুয়ারি পঞ্চগড় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় বাংলাদেশ চা বোর্ড আয়োজনে অনুষ্ঠিত ‘‘উত্তরাঞ্চলের চা শিল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত অংশীজনদের চায়ের বর্তমান অবস্থা, ভবিষ্যৎ করণীয় ও চা আইন-২০১৬ অবহিতকরণ’’ বিষয়ক কর্মশালায় এ সুপারিশ করা হয়। 

এ কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ চা বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল আশরাফুল ইসলাম, স্মল টি গার্ডেনওনার্স অ্যান্ডটি ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি আমিরুল হক খোকন, কারখানা মলিকদের পক্ষে নিয়াজ আলী চিশতি, মনসুর আলী, মকবুলার রহমান সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ দেলওয়ার হোসেন প্রধান, চা বাগান মালিক রফিকুল ইসলাম।

প্রণোদনার সুপারিশে ৫০ কোটি ক্ষুদ্র চা চাষিদের প্রত্যেক কেজির জন্য পাঁচ টাকা করে, এক কোটি করে জ্বালানিসহ বিদ্যুতের জন্য ২৮ টি কারখানাকে ২৮ কোটি, চা নার্সারী উৎপাদিত প্রত্যেক চারার জন্য পাঁচ টাকা হিসেবে নার্সারি মালিকদের ১০ কোটি এবং প্রশিক্ষণ, তদারকি ও মনিটরিংয়ের জন্য ১২ কোটি টাকা চা বোর্ডেকে প্রদানের সুপারিশ করা হয়। 

প্রণোদনার পাশাপাশি নিলাম মার্কেটে সর্বনিম্ন প্রতি কেজি তৈরি চা পাতার মূল্য ১৭০ টাকা নিধারর্ণ, কালোবাজারে অবৈধভাবে চা বিক্রি বন্ধ, কাঁচা চা পাতার মূল্য বৃদ্ধি, নানা অজুহাতে কাঁচা চা পাতার কর্তন বন্ধ, বিনামূল্যে প্রুনিং, প্লাকিং মেশিন প্রদান করার সুপারিশও করা হয়েছে।

বাংলাদেশ চা বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল আশরাফুল ইসলাম বলেন, গুনগতমান সম্পন্ন চাউৎপাদনের বিকল্প নেই। অবৈধভাবে চা বিক্রি বন্ধ, সবাইকে চা আইন মেনে চলার আহবান জানিয়ে বলেন, মুক্ত বাজার অর্থনীতিতে দাম নির্ধারণ মান অনুযায়ী নিলাম মার্কেটে তৈরি চা পাতার মূল্য নির্ধারণের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে। গত বছর দেশে ১০৩ কোটি মিলিয়ন চা উৎপন্ন হয়েছে।

যা অভ্যন্তরীণ চাহিদার তুলনায় প্রায় ১৫ কোটি মিলিয়ন চা বেশি উৎপন্ন হয়েছে। বিদেশে চা রপ্তানি বাড়াতে পারলে চা শিল্পের বিরাজমান সংকট কেটে যাবে। প্রণোদনার বিষয়টি বিবেচনাধীন রয়েছে উল্লেখ করে চা চাষীদেও প্রশিক্ষণ অব্যাহত আছে, প্রুনিং, প্লাকিং মেশিন দেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে আরো দেওয়া হবে। চায়ের ক্রান্তিকালে ব্যবসায়ীরা লাভবান হচ্ছে। উৎপাদ করা দাম পাচ্ছেনা। সবাই যেন যৌক্তিকভাবে আনুপাতিক হাওে সুবিধা পায় সে লক্ষ্যেই চা বোর্ড কাজ করছে।

তিনি উত্তরাঞ্চলে চায়ের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করার জন্য গুণগতমান সম্পন্ন চা উৎপাদন, চা আইন-২০১৬ যথাযথভাবে অনুসরণ করে চা উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, ও বিপণনের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।  কেউ আইন চা আইন ভঙ্গ করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বিবিএন/১২মার্চ/এসডি


google.com, pub-6631631227104834, DIRECT, f08c47fec0942fa0