আর্কাইভ কনভাটার ঢাকা, সোমবার, মে ২০, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
Logo

The railway line is bending in summer

রক্ষণাবেক্ষণে অবহেলা আর মেয়াদোত্তীর্ণ রেললাইনের কারনেই ঘটছে ট্রেন দূর্ঘটনা

Bijoy Bangla

আবুল কালাম আজাদ (রাজশাহী)

প্রকাশিত: ৩০ এপ্রিল, ২০২৪, ০৮:৫২ পিএম

রক্ষণাবেক্ষণে অবহেলা আর মেয়াদোত্তীর্ণ রেললাইনের কারনেই ঘটছে ট্রেন দূর্ঘটনা
মেয়াদোত্তীর্ণ রেললাইন আর অবহেলা বাড়াচ্ছে সংকট ॥ গরমে বেঁকে যাচ্ছে রেললাইন

তাপমাত্রা ধারণ করার ক্ষমতা হারিয়েছে পুরোনো ও মেয়াদোত্তীর্ণ লাইন ফলে বেঁকে যাচ্ছে রেলের পাত। অন্যদিকে ট্রেন চলাচল সচল রাখতে, অনেক রেললাইনের স্লিপারে নাট-বল্টু নেই, আবার কোথাও ক্লিপ নেই কিংবা ক্লিপের পরিবর্তে সুতো পেঁচিয়ে রাখা হয়েছে, যাতে নাট খুলে না পড়ে। এ ছাড়া চুরি হয়ে গেছে ফিশপ্লেট।

অন্যদিকে কাঠের তৈরি পুরোনো লাইনগুলোতে পচে গেছে স্লিপার। ফলে পুরো রেললাইন হয়ে গেছে নড়বড়ে। রেললাইনে এ ধরনের নানা সমস্যায় ক্ষতবিক্ষত সারাদেশের রেল লাইন। বছরের অন্য সময় জোড়াতালি দিয়ে রেললাইনগুলো চালানো গেলেও গ্রীষ্মে প্রচন্ড তাপাদহে (এপ্রিল থেকে জুনে মাসে) বাঁধে বিপত্তি। এ সময় তীব্র তাপপ্রবাহে রেললাইন বেঁকে গিয়ে ঘটে দুর্ঘটনা

রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে রেলওয়ের পাতের স্বাভাবিক তাপমাত্রা গ্রহণের সক্ষমতা ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর চেয়ে ৫ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বেশি থাকলে রেললাইনের পাত বেঁকে  যায় বা বেঁকে যাওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়। বিশেষ করে স্বাভাবিক তাপমাত্রার চেয়ে সূর্যের টানা তাপ পেলে তাপদাহে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে যায়। এ তাপমাত্রায় রেলের পাতের ওপর ট্রেনের ঘর্ষণের ফলে তাপমাত্রা আরও বেড়ে গেলে পাত বেঁকে যাওয়ার সর্বোচ্চ ঝুঁকি তৈরি হয়। কিন্তু বাংলাদেশের তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের চেয়ে গড়ে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস কম থাকার পরেও মাঝেমধ্যে বেঁকে যাচ্ছে রেলপথ।

উল্লেখ, চলতি বছরের ৪ মার্চ পূর্বাঞ্চল রেলের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার আজমপুর স্টেশনের কাছে অন্তত ১৫ ফুট রেললাইন বেঁকে যায়। যদিও তখন তাবদাহ ছিল না। এছাড়া গত বছরও এই সময়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেললাইনে পরপর দুই দিন পাত বেঁকে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছিল।  

এছাড়া গত শুক্রবার পশ্চিমাঞ্চল রেলের পাবনার ঈশ্বরদীতে বাইপাস রেলওয়ে স্টেশনে রেললাইনের পাত বেঁকে গিয়ে একটুর জন্য বড় দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পায় খুলনা থেকে রাজশাহীগামী আন্তঃনগর ট্রেন কপোতাক্ষ এক্সপ্রেস। পরে দুই ঘণ্টা ধরে রেললাইনের ওপর পানি ঢেলে বেঁকে যাওয়া পাত স্বাভাবিক করা হয়।  যেদিন এই ঘটনা ঘটে সেদিন ওই অঞ্চলের তাপমাত্রা ছিল ৪২ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। 

পশ্চিম রেলের মহাব্যবস্থাপক অসীম কুমার তালুকদার বলেন, রেললাইন বেঁকে যাওয়ার ক্ষেত্রে নতুন ও পুরনো লাইনের মধ্য একটা পার্থক্য থাকে। নতুন-পুরনো লাইনের কথা মাথায় রেখেই নিরাপত্তা বিবেচনায় গতি কমানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়।এছাড়া রেললাইন নতুন হলে ঝুঁকি কম থাকে জানিয়ে তিনি বলেন, লাইন পুরনো হলে গতি যা থাকে তার থেকে অর্ধেক করে দেওয়া হয়।

পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের প্রধান প্রকৌশলী আসাদুল হক বলেন, ১৯৭৩ সালে রাজশাহী থেকে আব্দুলপুর পর্যন্ত রেললাইন স্থাপন করা হয়। একটি রেললাইনের আয়ুষ্কাল ধরা হয় ২০ থেকে ২৫ বছর। কিন্তু এই স্লিপার ও রেললাইনের বয়স ৫০ পেরিয়ে গেছে।

এর ফলে রাতদিন রেললাইন তদারকিসহ জোড়াতালি দিয়ে রেল যোগাযোগ স্বাভাবিক রাখতে রাতদিন রেললাইন কাজ করছেন তারা। এর পর রয়েছে জনবল সংকট।

রেল সূত্র জানিয়েছে, সারা দেশে এখন রেলপথ আছে তিন হাজার ৯৩ কিলোমিটার। আর রেললাইন আছে চার হাজার ৪৩৮ কিলোমিটার। রেল মন্ত্রণালয়ের ২০২২-২৩ বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ১৫ বছরে নতুন করে ৮৪৩ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ করা হয়েছে। সে হিসেবে বাকি রেলপথ পুরনো। পুরনো রেলপথের বড় অংশের রেললাইন ব্রিটিশ আমলে নির্মাণ করা।

বর্তমানে দেশের রেলপথ দুই অঞ্চলে বিভক্ত—পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চল। দুই অঞ্চল মিলে এক হাজার কিলোমিটার রেললাইন অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ বলে জানা গেছে। কিছু কিছু রেললাইন আছে যেটি ৩০ বছরেও সংস্কার হয়নি। বেশির ভাগ লাইনের অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল শেষ হয়ে গেছে। আবার কোনটির শেষ হওয়ার পথে।

রেলওয়ের পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চলের পাঁচটি করে জেলায় খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, বেশির ভাগ লাইনে বড় ধরনের সমস্যা রয়েছে। লাইনে পর্যাপ্ত পাথর না থাকা, স্লিপারের নিচ থেকে মাটি সরে যাওয়া, ফিশপ্লেট ও নাট-বল্টু না থাকাসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত দেশের রেললাইনগুলো।

যে সব এলাকায় সমস্যা বেশি

পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের অধীনে আছে ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-কক্সবাজার, ঢাকা-নোয়াখালী, ঢাকা-সিলেট ও ময়মনসিংহ-চট্টগ্রাম রেলপথ, যার পরিমাণ ১ হাজার ৩৩৩ কিলোমিটার। এ অঞ্চলে রেললাইন আছে ২ হাজার ১৫১ কিলোমিটার।

রেলের ২০২৩ সালের সমীক্ষা মতে, পূর্বাঞ্চলের ১৬ জেলায় লাইনের সমস্যা বেশি। চট্টগ্রাম, ফেনী, কুমিল্লা, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কিশোরগঞ্জ, নরসিংদী, গাজীপুর, সিলেট, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, ময়মনসিংহ, জামালপুর ও ঢাকায় রেলপথে এসব সমস্যা রয়েছে।

অন্যদিকে রেলের পশ্চিমাঞ্চলে জেলা বিবেচনায় রাজশাহী, ঢাকা, রংপুর ও খুলনা বিভাগের ২৩ জেলায় সমস্যা বেশি রয়েছে। এর মধ্যে শুধু ঢাকা-চিলাহাটি-পঞ্চগড় ও রাজবাড়ী-ঢাকা রুটের রেললাইনে কংক্রিট স্লিপার আছে।

বিবিএন-এসডি

google.com, pub-6631631227104834, DIRECT, f08c47fec0942fa0