আর্কাইভ কনভাটার ঢাকা, সোমবার, মে ২০, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
Logo

কোলের দুই সন্তান নিয়ে নির্বাক সৈনিকের স্ত্রী

Bijoy Bangla

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২৪ জানুয়ারী, ২০২৪, ০৭:২২ পিএম

কোলের দুই সন্তান নিয়ে নির্বাক সৈনিকের স্ত্রী
কোলের দুই সন্তান নিয়ে নির্বাক সৈনিকের স্ত্রী

যশোরের বেনাপোল ধান্যখোলা সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে নিহত বিজিবি সদস্য রইস উদ্দিনের বাড়িতে শোকের মাতম চলছে। দুই বছরের শিশু রাইসা ও চার মাসের হাসান আলীকে নিয়ে মরদেহের অপেক্ষায় নির্বাক স্ত্রী নাসরিন খাতুন।

ভবিষ্যৎ নিয়েও দিশেহারা তিনি। পাশে বসে অঝোরে কাঁদছেন নিহত রইসউদ্দীনের মা রহিমা বেগম।আট বছর আগে স্বামী বিজিবিতে চাকরি পাওয়ার পর এলাকার জন্য অনেক কিছু করলেও নিজের নেই কোনো বাড়ি বা সঞ্চয়। এ নিয়ে দিশেহারা স্ত্রী নাসরিন। সাংবাদিকদের দেখে শুধু আধো আধো কণ্ঠে একটায় প্রশ্ন এখন তাদের কি হবে? কোথায় থাকবেন, আর দুই শিশুকে নিয়ে কোথায় যাবেন?

ছেলের বউয়ের পাশে বসে নাতনিকে কোলে নিয়ে শাশুড়ি রহিমা বেগম তো অঝোরে কাঁদছেন। আর বলছেন, কেন তার ছোট সন্তানকে পাখির মত গুলি করা হলো? সীমান্ত রক্ষা করতে গিয়েই কি অন্যায় করছে তার সন্তান? এ সময় তিনি তার সন্তানের মরদেহ দ্রুত ফিরিয়ে দেওয়ার অনুরোধ করেন সরকারের কাছে।

এ সময় ছোট্ট শিশু রাইশা ফ্যাল ফ্যাল করে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। আর চার মাস বয়সী হাসান তখনও মায়ের কোলে ঘুমাচ্ছে।

স্থানীয়রা জানায়, নিহত রইস উদ্দিনের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার সীমান্ত এলাকা সাহাপাড়ার শ্যামপুর গ্রামে। কৃষক কামরুজ্জামানের পাঁচ সন্তানের মধ্যে তিন ছেলে ও দুই মেয়ে। বড় ভাই সেনাবাহিনীতে, মেজ ভাই বিজিবিতে এবং ছোট ভাই যশোর সীমান্তে বিজিবির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে মারা যান।

রইসউদ্দিনের গ্রামের বাড়ি শ্যামপুরে গিয়ে দেখা গেছে, রইসউদ্দীনের টিনের একচালা একটি ঘর ও রান্না ঘর তালাবদ্ধ। বাড়ির প্রধান ফটক টিতে নেই কোনো দরজা। চলমান শৈত্যপ্রবাহের কারণে দুই শিশুকে নিয়ে স্ত্রী নাসরিন রইসের বড় ভাইয়ের বাড়িতে উঠেছেন। বিএসএফের গুলিতে স্বামী মারা যাওয়ার পর এ বাড়িতেই গ্রামবাসীরা একনজর তাকে দেখতে ভিড় করছেন। অনেকে আসছেন খোঁজ নিতে মরদেহ এসেছে কিনা। আবার অনেকে আসছেন নিহতের স্বজনদের সান্ত্বনা দিতে। আবার কেউ বা আসছেন পরিবারটির খোঁজ খবর নিতে।

আরও পড়ুন:>> সৈনিকের মরদেহ বিজিবির হাতে হস্তান্তর

রইসউদ্দীনের বাবা কামরুজ্জামান জানান, তিন ছেলের মধ্যে সবার ছোট রইসউদ্দীন ছিল পরোপকারী। ছেলের বিয়ে দেওয়ার পর তার দুই সন্তান নিয়ে সুখেই কাটছিল তাদের পরিবার। কিন্তু বিএসএফের এক গুলিতেই সব তচনচ হয়ে গেল। এ সময় তিনি তার নাতি-নাতনিকে যেন যোগ্য সন্তান হিসেবে গড়ে তুলতে পারেন এজন্য সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

রইসউদ্দীনের বন্ধু আ. মমিন জানান, ছাত্রজীবন থেকেই রইস বিপদগ্রস্তদের পাশে সব সময় দাঁড়িয়েছেন। আট বছর চাকরি করার পরও তার নেই কোনো সঞ্চয় বা একটি আশ্রয়স্থল। গ্রামের সবার বিপদে ঝাঁপিয়ে পড়লেও এখন তার পরিবারটি অসহায়।

স্থানীয় বাসিন্দা গোলাম হোসেন দাবি করেন, গতবার গ্রামে এসে দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে ২০ হাজার টাকা অনুদান দেন। পরে কয়েকটি জানালা বানিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি। তার মত একজন সমাজসেবককে তারা হারালেন। আমাদের দাবি সরকার এ অসহায় পরিবারটির পাশে যেন দাঁড়ায়। সেই সঙ্গে পরিবারটির জন্য যেন একটি আশ্রয়স্থলের ব্যবস্থা করা হয়।

স্থানীয় মহিলা ওয়ার্ড সদস্য মোসা শাহনাজ পারভিন লিলি জানান, দেশের জন্য কাজ করতে গিয়ে তার এলাকার একজন শহীদ হয়েছেন। তাই সরকার যেন যথাযথ মর্যাদায় দ্রুত মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে এবং শহীদ ওই বিজিবি সদস্যের পরিবারের দায়িত্ব নেয়।

প্রসঙ্গত: ভারতের সুটিয়া ও বাংলাদেশের ধান্যখোলা সীমান্ত এলাকা দিয়ে গত সোমবার (২২ জানুয়ারি) ভোরে চোরাকারবারিরা গরু নিয়ে আসছিল। বিষয়টি টের পেয়ে বিএসএফ চোরাকারবারিদের ধাওয়া করে। এসময় বিজিবি সদস্যরা বিষয়টি নজরদারি করার সময় চোরাকারবারিদের ধরতে সিপাহি রইসউদ্দীন দলছুট হয়ে সীমান্তে এগিয়ে গেলে বিএসএফ সদস্যদের গুলিতে আহত হন। পরে বিএসএফ সদস্যরা ভারতের একটি হাসপাতালে ভর্তি করলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই দিন দুপুর ২টার দিকে মারা যান।

google.com, pub-6631631227104834, DIRECT, f08c47fec0942fa0