পরীক্ষায় অংশ নিতে ফরম পূরণের সমুদয় টাকা জমা দিয়েও এসএসসি পরীক্ষা দিতে পারছে না ২২ পরীক্ষার্থী। ঘটনাটি ঘটে গফরগাঁও উপজেলার মুখী পল্লিসেবক বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের।
এ ঘটনা বুধবার সন্ধ্যায় ও বৃহস্পতিবার পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে অভিযোগ দেয় প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে।
জানা যায়, বৃহস্পতিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) থেকে শুরু হতে যাওয়া এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিতে অন্য শিক্ষার্থীদের সাথে ওই ২২ পরীক্ষার্থী ফরম পূরণ করেন। পরে বুধবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) বিদ্যালয়ে গিয়ে ওই পরীক্ষার্থীরা জানতে পারেন তাদের প্রবেশপত্র আসেনি। এরপর পরীক্ষার্থীরা প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষককে প্রবেশ পত্র দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। ওই সময় প্রধান শিক্ষক চাপের মুখে শিক্ষার্থীদেরকে বৃহস্পতিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) ১২টার মধ্যে প্রবেশপত্র আসবে তোমরা পরীক্ষা দিতে পারবে। কিন্তু পরীক্ষা চলার আগ মুহুর্তে প্রধান শিক্ষক মোবাইল বন্ধ করে রাখে।
প্রধান শিক্ষক আশ্বস্ত করলেও ২২ শিক্ষার্থীর মধ্যে পরীক্ষা চলাকালীন ১০টা পর্যন্ত মুখী পল্লিসেবক বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ ২২ শিক্ষার্থীকে প্রবেশপত্র দিতে পারেননি।
তবে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দাবী বলছে, ২২ জনের মধ্যে ৮ জনের ছবি ও গ্রুপের সমস্য হয়েছে। তাদের প্রবেশপত্র সকালে পরীক্ষা শুরু হওয়ার আগেই পেয়ে যাবে। বাকি ১৪ জন এ বছর আর পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে না।
এমন পরিস্থিতিতে ওই ১৪ জন পরীক্ষার্থী বৃহস্পতিবার গফরগাঁও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, প্রবেশপত্র না পাওয়া ২২ শিক্ষার্থী যথাসময়ে তাদের রেজিস্টেশন ফিস ও পরে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিতে ফরম পূরণের সমুদয় অর্থ পরিশোধ করেন। সে সময় বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের ফরম পূরণ হয়েছে বলে তাদের জানান করে। কিন্তু বুধবার বিদ্যালয়ে গিয়ে পরীক্ষার্থীরা জানতে পারে তাদের রেজিস্টেশনেই হয়নি। ফলে তাদের প্রবেশপত্র আসেনি। যেখানে রেজিস্টেশন হয়নি সেখানে এসএসসি পরীক্ষার ফরম ফিলাপের জন্য কর্তৃপক্ষ কিভাবে টাকা নিলেন এমন প্রশ্ন অভিভাবক ও সচেতন মহলে।
শিক্ষার্থীরা বলেন, রেজিস্টেশন ফি দিয়েছি তাহলে কেনো আমাদের রেজিস্টেশন হয়নি। আর রেজিস্টেশন না হলে আমাদের কাছ থেকে কর্তৃপক্ষ কেনো ফরম পূরণের টাকা নিলেন এমন প্রশ্ন রাখেন পরীক্ষার্থীরা।
এ ব্যাপারে পরীক্ষার্থী হৃদয় মিয়া (বিজ্ঞান), মাহবিয়া আক্তার (বিজ্ঞান), রিয়া, মেঘলা, মিথিলা, মেহেদী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমাদের প্রধান শিক্ষক সহ অন্যরা আমাদের সাথে প্রতারণা করেছে। রেজিস্টেশন ও ফরম পূরনের জন্য ফি নিয়েছেন। এখন বলা হচ্ছে আমাদের রেজিস্ট্রেশনেই হয়নি তাহলে প্রবেশপত্র আসবে কোথা থেকে। তাদের প্রতারনার কারনে আমাদের জীবন থেকে একটি বছর হারিয়ে যাবে তা মেনে নিতে পারছি না। এমন জঘন্য প্রতারণা মেনে নেয়া যায়না।
পরীক্ষার্থী জিহাদ আল আবিদের বাবা আব্দুল জলিল অভিযোগ করে জানান, গত মঙ্গলবার বিকেলে পরীক্ষার বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানান আপনার ছেলের ফরম পূরণ হয়নি। কারণ হিসেবে আমাকে বলা হয় তার রেজিষ্ট্রেশন হয়নি, যে কারণে তার ফরম পূরণ হয়নি। তিনি আরও বলেন, রেজিষ্ট্রেশন যদি হয়ে না থাকে তাহলে রেজিষ্ট্রেশন ফি কেনো নেয়া হয়েছিল। শুধু রেজিষ্ট্রেশন ফি নিয়েই কর্তৃপক্ষ ক্ষান্ত দেননি, ফরম পূরণের জন্যও ফি নিয়েছেন। শিক্ষার্থীদের সাথে এমন প্রতারণা মেনে নিতে পারছি না। তিনি দায়ীদের বিচার ও শাস্তি দাবী করেন।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল হান্নান বৃহস্পতিবার সকালে পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে (১৫ই ফেব্রুয়ারী) স্বীকার করে বলেন, আমাদের আইসিটি শিক্ষক মো. রেজাউল খুবই দক্ষ। কিন্তু রেজিস্টেশনের ক্ষেত্রে এমন ভুল কেমনে করলেন বুঝতে পারছি না। ওই ১৪ শিক্ষার্থীর রেজিষ্ট্রেশন না হওয়ায় তারা আর পরীক্ষা দিতে পারবে না। বাকি ৮ জনের ছবি ও গ্রুপের ভুল ছিল তা সমাধান হয়ে গেছে। ১৪ পরীক্ষার্থীর রেজিষ্ট্রেশন না হওয়ার পরেও ফরম ফিলাপের জন্য কেনো টাকা নেয়া হয়েছে এমন প্রশ্নে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। তিনি এই প্রতিনিধিকে মোবাইল ফোনে বলেন, ভাই নিউজটা কইরেনা স্কুল এবং আমার নিজের ক্ষতি হয়ে যাবে। আমি পরে আপনার সাথে দেখা করতেছি।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, প্রথমে ২২ পরীক্ষার্থী প্রবেশপত্র পায়নি বলে জেনেছি। সর্বশেষ জানতে পেরেছি ১৪ জন প্রবেশপত্র পায়নি। তাদের কারোর রেজিষ্ট্রেশন ছিলোনা বলে আমাকে জানানো হয়েছে। এ অবস্থায় কর্তৃপক্ষ ফরম পূরণের জন্য কেনো টাকা নিয়েছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ শফিকুল ইসলামের মোবাইলে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ না করায় কথা বলা সম্ভব হয়নি।
এ ঘটনায় ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ডের একজন স্কুল পরিদর্শকের সাথে কথা বললে তিনি নাম প্রকাশ না করার অনুরোধে জনকণ্ঠকে বলেন, শিক্ষকদের গাফিলতির কারণেই এমন ঘটনা হয়েছে। এ ঘটনার জন্য বোর্ড কর্তৃপক্ষ যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তদন্ত করে প্রতিষ্ঠান প্রধানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।