আর্কাইভ কনভাটার ঢাকা, বৃহস্পতিবার, মে ১৬, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
Logo

Complaints of irregularities

যিনি সরকারি কলেজের পিয়ন॥ তিনি মাধ্যমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক

Bijoy Bangla

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৫ মার্চ, ২০২৪, ০২:৫৩ পিএম

যিনি সরকারি কলেজের পিয়ন॥ তিনি মাধ্যমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক
আনোয়ার হোসেন দুটি প্রতিষ্ঠানের চাকরি করার কথা স্বীকার করেছেন

মেহেরপুর জেলার গাংনী উপজেলার আনোয়ার হোসেন একই সঙ্গে দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন। গাংনী সরকারি ডিগ্রি কলেজের এমএলএসএস (পিওন) তিনি, আবার এমপিওভুক্ত মানিকদিয়া ভোলাডাঙ্গা কেশবনগর (এমবিকে) মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকও তিনি। 

তাঁর বিরুদ্ধে বিধিবহির্ভূতভাবে দুটি পদে চাকরি করার পাশাপাশি বিদ্যালয় থেকে অবৈধ সুবিধা নেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন এমবিকে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা।

সম্প্রতি বিষয়টি কর্তৃপক্ষের নজরে এলে গঠন করা হয় তদন্ত কমিটি। এদিকে আনোয়ার হোসেন দুটি প্রতিষ্ঠানের চাকরি করার কথা স্বীকার করলেও বিদ্যালয় থেকে অবৈধ কোনো সুবিধা নিচ্ছেন না বলে দাবি করেন।

এমবিকে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সূত্রে জানা যায়, নিয়োগ বাণিজ্যসহ অবৈধ নানা সুবিধা পেতে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের পদটি ধরে রেখেছেন আনোয়ার হোসেন। আনোয়ার হোসেন একসঙ্গে দুটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন প্রায় ২০ বছর ধরে। 

প্রধান শিক্ষকই মাসের পর মাস বিদ্যালয়ে না আসার কারণে ভেঙে পড়েছে শিক্ষা কার্যক্রম। এমপিওভুক্তির আগে নির্মিত টিনশেডের কয়েকটি কক্ষেই চলছে শিক্ষা কার্যক্রম। উপজেলার অধিকাংশ বিদ্যালয়ে নতুন নতুন বহুতল ভবন নির্মাণ করা হলেও প্রধান শিক্ষকের গাফিলতিতে বিদ্যালয়টি অবকাঠামোগত উন্নয়নবঞ্চিত।

এমবিকে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির বর্তমান সভাপতি আব্দুর রব জানান, বিদ্যালয়ের বর্তমান পরিস্থিতি তেমন ভালো না। প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ে না এলে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনায় সমস্যা সৃষ্টি হয়।

বিদ্যালয়টির ব্যবস্থাপনা কমিটির সাবেক সভাপতি মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, বিদ্যালয়টি ২০০০ সালে প্রতিষ্ঠিত হলেও এমপিওভুক্ত হয় ২০২৩ সালে। এমপিওভুক্তির পর ব্যাক ডেট দিয়ে কয়েকজন শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ দিয়ে অন্তত ৫০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন প্রধান শিক্ষক আনোয়ার হোসেন ও তাঁর সহযোগীরা। 

নিয়োগ বাণিজ্য, ক্ষমতার অপব্যবহার, গোপনে ম্যানেজিং কমিটি গঠনসহ নানা অভিযোগে অভিভাবকেরা গত ৪ মার্চ তাঁর বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেন এবং ইউএনও বরাবর লিখিত দরখাস্ত দিয়েছে। তবে প্রধান শিক্ষক অন্যদের এমপিও শিটে নাম উঠিয়ে দিলেও নিজের এমপিওর কাগজপত্র পাঠাননি। আনোয়ার হোসেন স্কুল থেকে সরকারি বেতন না নিলেও প্রধান শিক্ষকের পদ ছাড়েননি। বেতন না নিলেও নিয়োগ বাণিজ্যসহ অন্যান্য সুবিধা ঠিকই নিয়ে থাকেন।

অভিভাবকরা জানান, ‘প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ে না আসায় শিক্ষা কার্যক্রম একেবারে ভেঙে পড়েছে। আমরা ভেবেছিলাম এমপিও হলে তিনি পিয়নের চাকরি ছেড়ে দিয়ে বিদ্যালয়ে নিয়মিত হবেন। তবে ২০২৩ সালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি এমপিও হলেও নিজের এমপিও ছাড় না নিয়ে প্রধান শিক্ষকের পদ ধরে রেখেছেন। বিদ্যালয় থেকে অবৈধ সুবিধা নেওয়াই এর কারণ। নিয়মিত কলেজে যান, অথচ স্কুলে আসেন না। কীভাবে এই বিদ্যালয়ের পড়াশোনা হবে? আমরা এর সুরাহা চাই।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন শিক্ষার্থী জানায়, প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ে না আসায় ঠিকমতো ক্লাস হয় না। কখন, কবে স্কুল বসবে, ছুটি হবে তা-ও ঠিকমতো কেউ বলতে পারে না। অনিশ্চয়তার মধ্যে লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছে তারা।

এমবিকে বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আব্দুল আলিম বলেন, ‘প্রধান শিক্ষকের হাজিরা খাতায় দুই মাস স্বাক্ষর নেই। প্রধান শিক্ষক যদি বিদ্যালয়ে না আসেন, সেই বিদ্যালয়ের কী অবস্থা হয় তা বলার অপেক্ষা রাখে না। আমরা রুটিন ওয়ার্ক করে যাচ্ছি। আমাদের দায়িত্ব আমরা পালন করে যাচ্ছি।

আরেক সহাকারী শিক্ষক হুমায়ন কবির বলেন, ‘প্রধান শিক্ষক নিয়মিত না আশায় পড়াশোনাসহ দাপ্তরিক কাজে ঝামেলা হয়। আর প্রধান শিক্ষক দুটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে এটা ওপেন, সকলেই জানে। এখানে আমাদের কিছু করণীয় নেই।

এম. বি. কে. মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আনোয়ার হোসেন দুটি প্রতিষ্ঠানে চাকরির কথা স্বীকার করে বলেন, ‘আমি বেতন নিই সরকারি কলেজ থেকে। বিষয়টি সরকারের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ পর্যন্ত পৌঁছেছে। এখন দেখা যাক কী হয়!’ তবে বিদ্যালয় থেকে অবৈধ সুবিধা নেবার কথা অস্বীকার করেন তিনি।

গাংনী সরকারি ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘আনোয়ার হোসেন আমার কলেজে পিয়ন পদে চাকরি করে বেতন নেয়। সে গাংনী সরকারি ডিগ্রি কলেজে নিয়মিত হাজিরা দেয়।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. হোসনে মোবারক বলেন, ওই শিক্ষকের বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত শেষে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।

গাংনী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) প্রীতম সাহা বলেন, ‘একই সঙ্গে দুটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত থাকার সুযোগ নেই। বিষয়টি নিয়ে গত রবিবার ১০ মার্চ তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত করে সাত কর্মদিবসের মধ্যে রিপোর্ট দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।

google.com, pub-6631631227104834, DIRECT, f08c47fec0942fa0