আর্কাইভ কনভাটার ঢাকা, সোমবার, মে ২০, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
Logo

Ahsanul Islam Titu

রমজানের আগেই দাম কমবে ভোজ্যতেল ও চিনির

Bijoy Bangla

অনলাইন ডেস্ক:

প্রকাশিত: ১৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪, ১১:৪৬ এএম

রমজানের আগেই দাম কমবে ভোজ্যতেল ও চিনির
রমজানের আগেই দাম কমবে ভোজ্যতেল ও চিনির

রমজানের আগে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে  আগামী দু’একদিনের মধ্যে ভোজ্যতেল-চিনির মূল্য কমিয়ে নতুন দাম নির্ধারণ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এছাড়া পণ্যের কৃত্রিম সংকট প্রতিরোধে সরকারি ওয়েবসাইটে সব ধরনের ভোগ্যপণ্যের বিভিন্ন পর্যায়ের দাম, উৎপাদনের স্থান এবং পণ্য সরবরাহ ও মজুত সংক্রান্ত বিষয়টির বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করা হবে। আশা করা হচ্ছে, এর ফলে অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের অপতৎপরতা বন্ধ হবে বাজারে। মার্চ মাসের শুরুতেই পণ্য সংক্রান্ত এই ওয়েবসাইটটি চালু করা হবে।

এছাড়া নিত্যপণ্যের দাম কমাতে বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করা, টিসিবির মাধ্যমে পণ্যবিক্রি এবং গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানোর মতো সাতটি পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সরকার। চাহিদা মতো পণ্যের সরবরাহ নিশ্চিত করতে মার্চ মাসের শুরু থেকে সারাদেশে স্মার্ট বাজার ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার ওপর জোর দিয়েছেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু।

রমজান সামনে রেখে সম্প্রতি ভোজ্যতেল, চিনি ও খেজুরের ওপর শুল্ক ও করে ছাড় দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। শুল্ক কমানোর এই সুবিধা দ্রুত বাজারে কার্যকর করতে শীঘ্রই ভোজ্যতেল ও চিনির মূল্য কমিয়ে নতুন দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক বাজার মূল্য বিবেচনা এবং শুল্ক কমানোর ফলে দেশে কতটুকু দাম কমানো যৌক্তিক হবে সেই বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন (বিটিটিসি)। ট্যারিফ কমিশনের রিপোর্ট পাওয়ার পর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে এ দুটি ভোগ্যপণ্যের নতুন দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হবে। অভিযোগ রয়েছে, সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময়ে আমদানি শুল্ক ও কর ছাড় দেওয়া হলেও তার প্রতিফলন ভোক্তা পর্যন্ত পৌঁছায় না। ব্যবসায়ীরা নানা অজুহাতে পণ্যের দাম না কমিয়ে শুল্ক কমানোর পুরো সুবিধা নিজেরা ভোগ করেন। এ কারণে এবার পাকাপোক্ত হিসেব করে ভোজ্যতেল ও চিনির দাম কমানোর বিষয়ে জোর দেওয়া হবে। এছাড়া চাল ও খেজুরের দামও যাতে যৌক্তিক পর্যায়ে থাকে সেই বিষয়টির দিকে নজর দেওয়া হবে।

এবার চার পণ্যে শুল্ক ও কর ৫ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ৪৭ শতাংশ পর্যন্ত কমানো হয়েছে। এতে চাল আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক ও কর মিলিয়ে ৪৭ দশমিক ২৫ শতাংশ কমানো হয়েছে। বিদ্যমান শুল্ক ও কর ৬২ দশমিক ৫০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ দশমিক ২৫ শতাংশ করা হয়েছে। এর মধ্যে সম্পূরক শুল্ক কমানো হয়েছে ২০ শতাংশ। যা বয়েল ও নন-বয়েল চাল আমদানির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। এছাড়া পরিশোধিত ও অপরিশোধিত সয়াবিন তেল ও পাম অয়েলের ওপর প্রযোজ্য কর (ভ্যাট) ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছে। যা আগামী ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। চিনির ক্ষেত্রে প্রতি মেট্রিক টনে শুল্ক ১ হাজার ৫০০ টাকা থেকে কমিয়ে ১ হাজার টাকা নির্দিষ্ট করা হয়েছে।

এই সুবিধা ৩১ মার্চ পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। খেজুর আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক ও কর ৫৮ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৪৩ শতাংশ করা হয়েছে। যার মধ্যে আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশ কমানো হয়েছে। এটি আগামী ৩০ মার্চ পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। জানা গেছে, চাল, চিনি, ভোজ্যতেল, আটাসহ অত্যাবশ্যকীয় ১৭টি পণ্যের পাশাপাশি যাবতীয় ভোগ্যপণ্যের স্থানীয় বাজার দর এবং আন্তর্জাতিক বাজার মূল্য সরকারি ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে। একইসঙ্গে ঢাকার কোন বাজারে কোন পণ্য কী দামে বিক্রি করা হচ্ছে সেটিও ওয়েবসাইটে দেওয়া থাকবে। অর্থাৎ পাবনা কিংবা ফরিদপুরে উৎপাদন ও পাইকারি পর্যায়ে কি দামে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে সেটি ঢাকা কিংবা রাজশাহীর একজন ভোক্তা কিংবা ব্যবসায়ী মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ওয়েবসাইট থেকে জেনে নিতে পারবেন। একইভাবে প্রতিবেশী ভারত কিংবা চীন ও ব্রাজিলে চিনির দাম কত এবং দেশে কত টাকায় বিক্রি হচ্ছে সেটিও যাচাই করার সুযোগ থাকবে। এতে ভুলতথ্য উপস্থাপন করে বাজার থেকে ব্যবসায়ীদের বেশি মুনাফা করার প্রবণতা বন্ধ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এছাড়া ওয়েবসাইট থেকে তথ্য নিয়ে প্রয়োজনে সেই অনুযায়ী দাম নির্ধারণ করতে পারবে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, স্মার্ট বাজার ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে নিত্য ও ভোগ্যপণ্যের দাম সংক্রান্ত পূর্ণাঙ্গ ওয়েবসাইট প্রকাশ করা হবে। এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু বলেন, চাহিদা অনুযায়ী পণ্য সরবরাহ নিশ্চিত করতে সরকার এই উদ্যোগ নিয়েছে। মার্চ মাসের শুরু থেকে একটি স্মার্ট বাজার ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা হবে। তিনি বলেন, দেশে উৎপাদন হয় এমন সব পণ্য স্থানীয় পর্যায়ে কত টাকায় বিক্রি হচ্ছে এবং ঢাকায় সেটি কত টাকায় বিক্রি হতে পারে সে বিষয়টির দিকে নজর রাখবে সরকার। এছাড়া আমদানি মূল্য বিবেচনা করে ভোগ্যপণ্যের দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হবে। এজন্য একটি পূর্ণাঙ্গ ওয়েবসাইট প্রকাশ করা হবে। তিনি বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা নিয়ে ওয়েবসাইটটি তৈরি করা হচ্ছে। এছাড়া শুল্ক কমানোর সুবিধা কার্যকর করতে চলতি সপ্তাহের মধ্যে ভোজ্যতেল ও চিনির দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হবে বলে তিনি জানান।

দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে আরও যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হবে ॥ রমজান মাস সামনে রেখে অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের তৎপরতা বন্ধে এবার শুরু থেকে কঠোর অবস্থানে থাকবে প্রশাসন। এ লক্ষ্যে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশনা দেওয়া হবে। বিশেষ করে পণ্যবাহী ট্রাকের চাঁদাবাজি বন্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়ার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। নিত্যপণ্যের দাম কমাতে বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করা, টিসিবির মাধ্যমে পণ্য বিক্রি এবং পণ্যের কৃত্রিম সংকট প্রতিরোধে সারাদেশে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানোর মতো সাতটি পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সরকার। এর পাশাপাশি আমদানি পণ্য দ্রুত ছাড় করতে বন্দর ও কাস্টমসকে নির্দেশনা, পণ্য সরবরাহ নিশ্চিত করতে পণ্যবাহী ট্রাক চাঁদাবাজমুক্ত রাখতে সক্রিয় থাকবে হাইওয়ে পুলিশ, ফেরিঘাটে পণ্য পারাপারে অগ্রাধিকার দেবে বিআইডব্লিউটিএ, আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এবং অভ্যন্তরীণ বাজারে পণ্যের দাম নির্ধারণের মতো পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এছাড়া পণ্যের দাম বেশি রাখা হলে একজন ভোক্তা ৩৩৩ নম্বরে ফোন করে অভিযোগ জানাতে পারবেন।

জানা গেছে, নিত্যপণ্যের দাম সহনীয় রাখার কৌশল নিয়ে এরইমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সভা হয়েছে। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর নেতৃত্বে অন্তঃমন্ত্রণালয় সভাও হয়েছে। সেখানে বাণিজ্য, খাদ্য, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী এবং সরকারের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সেই বৈঠকে সর্বোচ্চ জোর দেওয়া হয়। এদিকে, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার হাবিবুর রহমান সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, রমজানে দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয়সীমার মধ্যে রাখতে ডিএমপির ভ্রাম্যমাণ আদালত কাজ শুরু করবে। এজন্য তারা যথাযথ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। রমজান শুরুর আগেই কার্যক্রম শুরু করা হবে। এছাড়া শীঘ্রই বাজার মনিটরিং জোরদার, গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো এবং পণ্য সরবরাহ নিশ্চিত করতে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

অচ / বি

google.com, pub-6631631227104834, DIRECT, f08c47fec0942fa0