দেশের ২১ জন বিশিষ্ট নাগরিককে ‘‘একুশে পদক-২০২৪”-এ ভূষিত করেছে সরকার।
মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার “একুশে পদক” তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ভাষা আন্দোলন, শিল্পকলা, ভাষা ও সাহিত্যসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য এ পদক দেওয়া হয়েছে। এর আগে, গত ১৩ ফেব্রুয়ারি এক বিজ্ঞপ্তিতে পুরষ্কার প্রাপ্তদের তালিকা জানায় সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়।
সংগীতে অবদান রাখার জন্য এ বছর একুশে পদকপ্রাপ্তদের তালিকায় রয়েছেন কণ্ঠশিল্পী শুভ্র দেব। এরপর এক ফেসবুক পোস্টে বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা করে শুভ্র দেবকে একুশে পদক ফিরিয়ে দেওয়ার পরামর্শ দেন সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক প্রিন্স মাহমুদ।
ফেসবুক পোস্টে তিনি লিখেছেন, “দেশের সংগীতে শুভ্র দেবের অবদান আছে কিন্তু তার চেয়ে অনেক বেশি অবদান লাকী আখন্দ, আইয়ুব বাচ্চু, ফুয়াদ নাসের বাবু, নকিব খান, কুমার বিশ্বজিৎ, তপন চৌধুরী, হামিন আহমেদ, মাকসুদুল হক, মাহফুজ আনাম জেমস এবং প্রিয় গীতিকবি কাওসার আহমেদ চৌধুরী ও শহীদ মাহমুদ জঙ্গির। প্রিয় শুভ্র দেবের উচিত এই প্রসঙ্গে কথা বলা। নিজে পদক না গ্রহণ করে সত্যকার মেধাবীকে পদক দিতে বলার এই সংস্কৃতি এখনই শুরু হোক ...।”
যদিও শুভ্র দেব মনে করেন, এই পুরস্কার তার অনেক আগেই পাওয়া উচিত ছিল। প্রিন্স মাহমুদের পরামর্শের জবাবে সম্প্রতি একটি বেসরকারি টেলিভিশনের সাক্ষাৎকারে শুভ্র দেব বলেন, “প্রিন্স মাহমুদ কাজের ক্ষেত্রে আমার অনেক ছোট। একটা সময় গান নেওয়ার জন্য সে আমার পল্লবীর বাসায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকত। সেগুলো বলতে চাই না। সে তো আমাদের লেভেলের কেউ না। আমি তাদেরই গণ্য করবো যাদের বিশ্বসংগীতে অনেক বেশি কন্ট্রিবিউশন রয়েছে। যারা সমালোচনা করছে তারা জেলাসের জায়গা থেকে সমালোচনা করছে। এগুলো বিষয় নিয়ে আমি মাথা ঘামাই না।”
কেন তাকে এ পুরস্কার দেওয়া হলো সেই ব্যাখ্যা দিয়ে শুভ্র দেব বলেন, “সংগীত হলো গুরুমুখী বিদ্যা। এটা নিয়ে বড়াই করার কিছু নেই। কিন্তু আমি ইন্ডাস্ট্রিতে যা দিয়েছি এমনটা খুব কম শিল্পীর কন্ট্রিবিউশন আছে। শুধু গান গাইলেই হয় না। আমি যদি বলি, বাংলাদেশের কোন সংগীতশিল্পী আন্তর্জাতিকভাবে ব্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হয়েছে, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কোন শিল্পী থিম সং করেছে তাহলে আপনি কিন্তু কারো নাম বলতে পারবেন না। দেশের প্রথম শিল্পী হিসেবে বলিউডের মিউজিক অ্যাওয়ার্ডে আমন্ত্রণ পেয়েছি। এগুলো হয়েছে ১০-১৫ বছর আগে। এছাড়া মাত্র ১২ বছর বয়সে আমি জাতীয় পুরস্কার পেয়েছি। মাদার তেরেসাসহ আরও অনেক পুরস্কার পেয়েছি। এজন্য যারা আমার কাজ সম্পর্কে জানে, তারা বেশিরভাগই বলেছেন, এই পদক অনেক আগে পাওয়া উচিত ছিল।”
এ বছর পদকের জন্য মনোনীত বিশিষ্টজনেরা হলেন- ভাষা আন্দোলনে মৌ. আশরাফুদ্দীন আহমদ (মরণোত্তর) ও বীর মুক্তিযোদ্ধা হাতেম আলী মিয়া (মরণোত্তর)। সঙ্গীতে জালাল উদ্দীন খাঁ (মরণোত্তর), বীর মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণী ঘোষ, বিদিত লাল দাস (মরণোত্তর), এন্ড্রু কিশোর (মরণোত্তর) ও শুভ্র দেব।
এছাড়া নৃত্যকলায় শিবলী মহম্মদ, অভিনয়ে ডলি জহুর ও এম এ আলমগীর, আবৃত্তিতে খান মো. মুস্তফা ওয়ালীদ (শিমুল মুস্তফা) ও রূপা চক্রবর্তী, চিত্রকলায় শাহজাহান আহমেদ বিকাশ, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ ও আর্কাইভিংয়ে কাওসার চৌধুরী, সমাজসেবায় মো. জিয়াউল হক ও আলহাজ রফিক আহামদ, ভাষা ও সাহিত্যে মুহাম্মদ সামাদ, লুৎফর রহমান রিটন, মিনার মনসুর ও রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ (মরণোত্তর) এবং শিক্ষায় অধ্যাপক জিনবোধি ভিক্ষু একুশে পদক পাচ্ছেন।
একুশে পদক দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা। পুরস্কার হিসেবে প্রত্যেককে একটি স্বর্ণপদক, এককালীন অর্থ (চেক) ও একটি সম্মাননাপত্র দেওয়া হয়।
অচ /বি