আমেরিকায় পাচার হচ্ছিল রপ্তানি নিষিদ্ধ সুগন্ধী চাল। কৌশল হিসেবে রাখা ছিল বিভিন্ন খাবারের আড়ালে। সেগুলো আবার পরিমাণে কম দেয়া হয় ওজনে ভারসাম্য রক্ষায়। এরপরও চোখ এড়াতে পারেনি কাস্টমস গোয়েন্দাদের। ধরা পড়ে ঢাকার রাজ-কামাল এভারবেস্ট নামের ১টি প্রতিষ্ঠানের এমন কারসাজি।
স্থানীয় চাহিদা ও জোগানে ভারসাম্য রক্ষায় ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে সুগন্ধী চাল রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করে সরকার। তবে অভিযোগ আছে, গোপনে খাদ্যপণ্যটি পাচারের। যার প্রমাণও মেলে কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের নজরদারিতে।
ঢাকার কমলাপুর আইসিডি দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে ১৫ ধরনের খাবার পাঠাচ্ছিল রাজ-কামাল এভারবেস্ট করপোরেশন নামের ১টি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু চালানটি চট্টগ্রামে পৌঁছার পর পরীক্ষায় সব অপতৎপরতা ভেস্তে যায়। চালানটিতে নানা খাবারের আড়ালে মেলে প্রায় সাড়ে ৭ টন সুগন্ধী কাটারিভোগ। যার ঘোষণাই ছিল না। আবার ঘোষিত পণ্য কম পাওয়া যায় প্রায় ৬ টন ৭০০ কেজি। অর্থাৎ অধিক মূল্যের নিষিদ্ধ পণ্য পাঠাতে কম দামের পণ্য ওজনে কমানো হয়।
কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মো. মিনহাজ উদ্দিন বলেন, তাদের অপরাধ হলো রপ্তানি আদেশ ভঙ্গ করেছে। রপ্তানি নিষিদ্ধ পণ্য বিদেশে পাচারের অপচেষ্টা চালিয়েছে। মানিলন্ডারিংয়ের চেষ্টা করেছে। কাস্টমস কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে ভুয়া দলিলাদি তৈরি করে রপ্তানির চেষ্টা করেছে তারা।
জালিয়াতি ধরা পড়লে রাজ-কামাল এভারবেস্ট কাস্টমস গোয়েন্দাদের বোঝাতে চেষ্টা করে ভুলবশত সহযোগী প্রতিষ্ঠান রাজ কামাল খামারবাড়ির পণ্য বোঝাই হয়ে যায়। প্রমাণস্বরূপ ইসলামী ব্যাংকের নাম বিক্রি করলেও ব্যাংকটি তা নাকচ করে দেয়। এ বিষয়ে যোগাযোগের চেষ্টা করেও রাজ কামালের কাউকে পাওয়া যায়নি। তাদের সিঅ্যান্ডএফ লিটন ট্রেড ইন্টারন্যাশনালও বিষয়টি এড়িয়ে যায়।
কৃষি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এভাবে চাল পাচার হতে থাকলে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে। চট্টগ্রাম উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের উপপরিচালক ড. মোহাম্মদ শাহ আলম বলেন, তারা পারমিট না নিয়ে থাকলে এখানে একটা ব্যাড ইফেক্ট পড়বে। এরকম হলে অন্য দেশের সঙ্গে আমাদের বাণিজ্যিক লেনদেন কমে আসবে। কারণ, বিদেশিরা আমাদের ট্রাস্ট করবে না। এছাড়া সুগন্ধী চাল রপ্তানি হলে দেশের বাজারে দর বেড়ে যাবে।
১৯৯৫ সাল থেকে ব্যবসা করছে রাজ-কামাল। এখন তাদের রপ্তানির ইতিহাস ঘেঁটে দেখছে গোয়েন্দারা। তবে কমলাপুর আইসিডিতে কায়িক পরীক্ষায় কেন প্রতিষ্ঠানটির জালিয়াতি ধরা পড়েনি, সেই বিষয়ে তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।