আর্কাইভ কনভাটার ঢাকা, সোমবার, মে ২০, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
Logo

logo
ফিরে দেখা ৭১

সরদহ পুলিশ একাডেমিতে বিদ্রোহ॥ জেলা প্রশাসকের আত্মসমর্পণ


ওয়ালিউর রহমান বাবু প্রকাশিত:  ১৯ মে, ২০২৪, ০৬:৪৩ পিএম

সরদহ পুলিশ একাডেমিতে বিদ্রোহ॥ জেলা প্রশাসকের আত্মসমর্পণ
___সংগৃহীত প্রতীকী ছবি

রাজশাহী জেলার চারঘাট থানার মীরগঞ্জ ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস বিওপিতে তৎকালীন সময় কর্মরত নায়েক সুবেদার সিরাজউদ্দীন লস্করের তথ্যে জানা যায়, তার নেতৃত্বে ২৯ মার্চ সরদহ পুলিশ একাডেমিতে বাঙালি আউটসাইড ক্যাডেট ও ডিপার্টমেন্টাল ক্যাডেটরা জয় বাংলা স্লোগন দিয়ে বিদ্রোহ ঘোষণা করলে ভাইস প্রিন্সিপাল মি. বড়ুয়া সি.এল.আই পঙ্কজ, সি.এল.আই গাজী আব্দুর রহমান একাত্বতা ঘোষণা করলেন। ইউসুফপুর বিওপির বাঙালিরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে গেলেন। ডিআইজি খালেক একাডেমিক ছেড়ে চলে গেলেন। সরদহ আইয়ুব ক্যাডেট কলেজের অ্যাডজুটেন্ট ক্যাপ্টেন আব্দুর রশীদ ও অধ্যাপক আবু বক্কর সিদ্দিক স্বাধীনতার পক্ষে একাত্বতা ঘোষণা করার পর সংগ্রাম কমিটি গঠন করে ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস (ই.পি.আর), পুলিশ, আনসার, মুজাহিদ, ছাত্র, সেচ্ছাসেবকদের নিয়ে বাহিনী গঠন করা হল। এই বাহিনী নাটোর ও রাজশাহীর পূর্বঅঞ্চলে বিভিন্ন স্থানে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। পাবনা থেকে পালিয়ে আসা পাকিস্তানি সৈন্যরা আড়ানি ব্রিজে নিহত হয়। সরদহ পুলিশ একাডেমির বিদ্রোহ স্বাধীনতাকামীদের সাহসী করে তোলে। তৎকালীন চাঁপাইনবাবগঞ্জ মহকুমা থেকে রাজশাহী সদরের পরিস্থিতি দেখতে আসা ছাত্রনেতা মোহাম্মদ আলী কামাল (বীর মুক্তিযোদ্ধা) ও তার সঙ্গী আলাউদ্দীন রাজশাহী জেলা সদরের সোনাদীঘির পাশে হোটেল কাশীনায় থাকা এক পুলিশ অফিসারের সাথে আলোচনার সময় জানালেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে স্বাধীনতাকামী পুলিশ বাহিনী দুই এক দিনের মধ্যে রাজশাহী জেলা সদরে এডভ্যান্স করবে, কেউ যেন বিচ্ছিন্ন না থাকে। কিছু কাজ সেরে তিনি ফিরে গেলেন।

মোহম্মদ আলী কামাল (বীর মুক্তিযোদ্ধ) এর তথ্যে জানা যায়, তিনি তার সঙ্গী হাবিলদার চৌধুরীকে নিয়ে রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ীর খরচাক্কায় এসে কাজ সেরে ফিরে যাওয়ার সময় মোটরসাইকেল লিক হয়ে গেলে সেটি একটি বাড়িতে রেখে হাঁটতে থাকলে দেখলেন রাজশাহী সদরের দিক থেকে দুটো গাড়ি দ্রুতবেগে চাঁপাইনবাবগঞ্জের দিকে যাচ্ছে। গাড়ি দুটি কাছে এলে দেখতে পেলেন, গাড়ির মধ্যে রাজশাহী জেলা প্রশাসক রশীদুল হাসান তার নাজির রহিম ও আরেক অফিসারকে পিছনের গাড়িতে ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলসের মর্টার প্ল্যাটুন। তিনি গাড়ি দুটিকে থামিয়ে তাদের কিছুটা পথ পৌছে দিতে বললেন। জেলা প্রশাসক রাজী হলেন। তিনি মোহাম্মদ আলী কামালকে চিনে ফেলে বললেন, যা করা হচ্ছে তাতে পাকিস্তানি সৈন্যরা ক্ষিপ্ত হয়ে মানুষ হত্যা করবে। তিনি ভারতীয় বাহিনীর আক্রমণের খবর পেয়ে সীমান্ত অঞ্চল পরিদর্শনে যাচ্ছেন। স্বাধীনতাকামীদের নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে পৌছানো মাত্রই মোহাম্মদ আলী কামাল জেলা প্রশাসক রশীদুল হাসান ও অন্যান্যদের আত্মসমর্পন করালেন । ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলসের মর্টার প্ল্যাটুন স্বাধীনতাকামীদের সাথে যোগ দিলে প্রতিরোধ শক্তি বেড়ে গেল। আত্মসমর্পন কারীদের সন্ধায় চাঁপাইনবাবগঞ্জে নিয়ে গিয়ে ঘটনাটি নওগাঁ মহকুমার ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস ৭নং উইংয়ের ক্যাপ্টেন গিয়াসউদ্দীন আহমেদ চৌধুরীকে অবগত করলে তিনি আত্মসমর্পনকারীদের উপর নজর রেখে চাঁপাইনবাবগঞ্জেরে  যোদ্ধাদের রাজশাহী জেলা সদরের পশ্চিমে কাশিয়াডাঙ্গা ১এপ্রিল অ্যাডভান্স করতে নির্দেশ দিলেন।


লেখক মুক্তিযুদ্ধের তথ্য সংগ্রাহক

google.com, pub-6631631227104834, DIRECT, f08c47fec0942fa0