আর্কাইভ কনভাটার ঢাকা, সোমবার, মে ২০, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
Logo

logo

বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা সাংবাদিকদের

Journalists are banned from entering Bangladesh Bank


অনলাইন ডেস্ক: প্রকাশিত:  ১৯ মে, ২০২৪, ১১:১৫ পিএম

বাংলাদেশ ব্যাংকে  প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা সাংবাদিকদের
বাংলাদেশ ব্যাংক।.....সংগৃহীত ছবি

‘নানা অনিয়ম ও বড় বড় ঋণ কেলেঙ্কারির মাধ্যমে ব্যাংকগুলো থেকে লাখ লাখ কোটি টাকা লুটপাট হয়েছে। নির্দিষ্ট কিছু ব্যক্তি-গ্রুপ, স্বার্থান্বেষী মহল ও ব্যাংক পরিচালকরা এক হয়ে সাধারণ মানুষের আমানতের অর্থ লুটেপুটে খাচ্ছেন। এতে করে সংকটে পড়েছে দেশের আর্থিক খাত। দুর্বল হয়ে পড়েছে অনেক ব্যাংক। এসব অনিয়মের বিচার না করে জনগণের অর্থ দিয়ে তাদেরই সহযোগিতা করে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এসব তথ্য যেন গণমাধ্যমে না আসে তাই প্রভাবশালীদের চাপে বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞাসহ নিয়মের নানা কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে।’

বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) সকালে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে এ মন্তব্য করেন ব্যাংক বিটে কর্মরত সংবাদকর্মীরা। 

ব্যাংক বিটের সাংবাদিকরা জানান, এতদিন বাংলাদেশ ব্যাংকের রিসিপশন ডেস্কের রেজিস্ট্রার খাতায় একজন সংবাদকর্মী তার নাম, প্রতিষ্ঠানের নাম ও মোবাইল নম্বর লিখে স্বাক্ষর করে পাস ইস্যুর মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে প্রবেশ করতে পারতেন। গত ৫৩ বছর ধরে সংবাদকর্মীরা এ নিয়মেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকে প্রবেশ করছেন। 

কিন্তু গত এক মাস ধরে তা নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রথমে বিভিন্ন সংস্থার পর্যবেক্ষণের কথা বলে কালক্ষেপণ করেছিল। এখন বিষয়টি প্রকাশ্যে আসায় সাংবাদিকদের প্রবেশে নানা কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। এ বিষয়ে প্রতিবাদ জানিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন অর্থনীতি বিটের সংবাদকর্মীরা।


সকাল ১০টা থেকে দুপুর পর্যন্ত তারা অবস্থান নেন। বিষয়টি সমাধান করতে সকাল ১১টার দিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের সঙ্গে বৈঠক করেন ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) সভাপতি মোহাম্মদ রেফায়েত উল্লাহ মীরধা ও সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম। তবে, এ বিষয়ে কোনো সমাধান দেননি গভর্নর।

বৈঠকে শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক সাংবাদিকদের বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ব্যাংক সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, এখন থেকে সাংবাদিকরা ব্যাংকের নির্দিষ্ট অনুমতিপত্র (প্রবেশ পাস) নিয়ে শুধু মুখপাত্রের কাছে যেতে পারবেন। তবে কোনো কর্মকর্তা যদি সাংবাদিকদের পাস দেন, সেক্ষেত্রে তারা শুধু সেই কর্মকর্তার কাছে যেতে পারবেন। তবে, আগের মতো তারা অবাধে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কোনো বিভাগে প্রবেশ করতে পারবেন না।

অর্থাৎ সরাসরি না বলে সাংবাদিকদের প্রবেশে এক ধরনের নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।


অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি-গ্রুপ, স্বার্থান্বেষী মহল ও ব্যাংক পরিচালকদের চাপে পড়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে মন্তব্য করেন এ বিটে কর্মরত সংবাদকর্মীরা। তারা দ্রুত এ ধরনের কালো সিদ্ধন্ত প্রত্যাহার করে আগের মত সাংবাদিক প্রবেশের অনুমতি দিয়ে আর্থিক খাতের অনিয়ম অব্যবস্থাপনা ও ঋণ কেলেঙ্কারির সংবাদ প্রকাশের সহযোগিতা করার দাবি জানান। 

তারা বলেন, ‘হলমার্ক, বেসিকের বাচ্চুর ঋণ জালিয়াতি, বিসমিল্লাহ গ্রুপ, অ্যাননটেক্সের ও ক্রিসেন্ট কেলেঙ্কারির মত ব্যাংক খাতের বড় বড় অনিয়মের মাধ্যমে লাখ লাখ কোটি টাকা লুটপাট করা হয়েছে। এসব তথ্য সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশের পর কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যবস্থা নিয়েছে। জনগণও এসব লুটপাতের তথ্য জানতে পেরেছে। তাই অনিয়ম-দুর্নীতির তথ্য প্রকাশে করার জন্য দেশ জনগণ ও অর্থনীতির স্বার্থে সাংবাদিকদের প্রবেশের সুযোগ দেওয়া জরুরি।’

কেন্দ্রীয় ব্যাংকে বাধাহীন প্রবেশাধিকার নিশ্চিতে দাবি ইআরএফের  

বাংলাদেশ ব্যাংকে রিপোর্টারদের নির্বিঘ্ন প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে ইআরএফ। সংগঠনটির এর পক্ষ থেকে জানানো হয়, তথ্য সংগ্রহের স্বার্থে রিপোর্টারদের আগের মতো বাধাহীনভাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের সব কর্মকর্তার কাছে যাতায়াতের অধিকার বৃহস্পতিবার থেকেই নিশ্চিত করতে গভর্নরকে জোরালোভাবে অনুরোধ করা হয়েছে।

ইআরএফের একমাত্র দাবি অনুযায়ী বরাবরের মতো রিপোর্টারদের বাংলাদেশ ব্যাংকে অবাধ যাতায়াতের ওপর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিষেধাজ্ঞা তাৎক্ষণিকভাবে প্রত্যাহার করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন গভর্নর। ‘তিনি বলেন, সাংবাদিকরা যে কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করতে চান, ওই কর্মকর্তার কাছ থেকে পাস নিয়ে ঢুকতে হবে।

ইআরএফের পক্ষ থেকে বলা হয়, গত ৫৩ বছর ধরে রিপোর্টাররা অবাধে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে তথ্য সংগ্রহ করছে। এতে কখনো তাদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়নি। হঠাৎ করে রিপোর্টারদের প্রবেশে বাধা সৃষ্টি করায় ব্যাংকিং খাত নিয়ে ভুল রিপোর্টিং হওয়ার আশঙ্কা বাড়ছে, যা কোনো পক্ষেরই কাম্য নয়।

সার্বিক পরিস্থিতিতে রিপোর্টারদের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে বাধাহীন প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে ইআরএফের প্রেসিডেন্টের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী ইআরএফ পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে।


google.com, pub-6631631227104834, DIRECT, f08c47fec0942fa0