আর্কাইভ কনভাটার ঢাকা, সোমবার, মে ২০, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
Logo

logo

হাতপাখায় ঘুরছে জীবন-চাকা

The wheel of life turns in the hand


অনলাইন ডেস্ক: প্রকাশিত:  ১৯ মে, ২০২৪, ১১:১৮ পিএম

হাতপাখায় ঘুরছে জীবন-চাকা
হাতপাখায় ঘুরছে জীবন-চাকা।.....সংগৃহীত ছবি

চলছে বৈশাখ, তীব্র তাপদাহে পুড়ছে সারাদেশ। দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে সাধারণ মানুষের জীবন। এমন সময়ে সাধারণ মানুষ স্বস্তি পেতে হাত বাড়ায় হাতপাখার দিকে। হাতপাখার শীতল বাতাস ক্লান্ত শরীরে এনে দেয় প্রশান্তি। একদিন-দুদিন নয়, বাঙালির জীবনের সঙ্গে হাতপাখার এই সম্পর্ক শত-সহস্র বছরের। এখনো গ্রাম থেকে শুরু করে শহরতলীর প্রতিটি বাড়িতেই দেখা মেলে নানা কারুকাজ আর রঙ-বেরঙের পাখার। 

এই বাংলায় হাতপাখা তৈরি ও ব্যবহারের ইতিহাস বহু প্রাচীন। একটা সময় ছিল যখন বেত, বাঁশ, তালগাছের ডাল-পাতা, কিংবা কাপড় দিয়ে পাখা তৈরি হতো। এখন সেই তালিকায় যোগ হয়েছে প্লাস্টিকসহ অন্য নানা উপাদান। তবে উপকরণ বদলালেও পাখার গায়ে বিভিন্ন কারুকাজের সেই পুরনো রীতি পাল্টায়নি এখনো। হাতের নিপুণতায় সুতা দিয়ে পাখার গায়ে পাখি, ফুল, লতাপাতা, মানুষের নাম অথবা নানা নকশা ফুটিয়ে তোলেন কারিগররা।


বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিশেষ করে ময়মনসিংহ, নরসিংদী, রংপুর, দিনাজপুরসহ দেশের উত্তরাঞ্চলের বেশ কিছু জেলায় হাতপাখা বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদিত হয়। এ কাজের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন ময়মনসিংহের ভালুকা ও পার্শ্ববর্তী গফরগাঁওয়ের বেশ কয়েকটি গ্রামের কয়েক হাজার পরিবার। হাতপাখা তৈরি এবং তা বিক্রি করে সংসারে সচ্ছলতা ফিরিয়ে এনেছেন তারা। ফলে এ এলাকার প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই তৈরি হচ্ছে নানা ধরনের হাতপাখা। জানা গেছে, শুধু এ দুই উপজেলায় তৈরি হাতপাখার বাৎসরিক বাজার মূল্য দুই থেকে আড়াই কোটি টাকা।

এখন থেকে প্রায় ৯ বছর আগেও গার্মেন্টসে শ্রমিকের কাজ করতেন মুখী ব্রিজ ঘাট এলাকার হাতপাখা ব্যবসায়ী মাহাবুল আলম। এক সময় সে চাকরি ছেড়ে ১ লাখ টাকা পুঁজি নিয়ে হাতপাখা বিক্রির ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন। সেই পুঁজি এখন বেড়ে ১০ লাখ টাকা হয়েছে। তিনি জানান, ভালুকার বিরুনিয়া, ধীতপুর, কাইচান, চান্দরাটি, মাহমুদপুর ও গফরগাঁওয়ের মুখী, দীঘা, বেলাবহ, বলদী, প্রসাদপুর, টংবিরই, কান্দি গ্রামের লোকেরা তার কাছ থেকে হাতপাখা তৈরির উপকরণ (বাঁশ, টপেটার কাপড়, রঙিন সুতা, প্লাস্টিক পাইপসহ অন্যান্য মালামাল) কিনে নিয়ে যায়। পরে হাতপাখা তৈরি করে আবার তার কাছেই বিক্রি করতে আসেন। আবার ঢাকা, টঙ্গী, কুমিল্লা, বরিশাল, উত্তরবঙ্গসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকাররা তার কাছ থেকে ওই সমস্ত পাখা কিনে নিয়ে যায়। 


এই ব্যবসায়ী জানান, প্রতিটি পাখা তৈরিতে ৫ জন শ্রমিক কাজ করেন। প্রথম জন বাঁশের চাক তৈরি, দ্বিতীয় জন ফুল তোলা বা প্রিন্ট করা, তৃতীয় জন মুড়ি লাগানো, চতুর্থ জন ঝালট লাগানো এবং পঞ্চম জন হাতল লাগান। এখানকার বেশিরভাগ পাখা কাপড় ও বাঁশ দিয়ে তৈরি হয়। পরিবেশ বান্ধব ও দামে সস্তা হওয়ায় বাজারে এর চাহিদাও অনেক বেশি। আশ্বিন, কার্তিক, অগ্রহায়ণ ও পৌষ মাসে হাতপাখা মজুদ শুরু করি। পরে গরমের শুরুতে (ফাগুন, চৈত্র) দেশের বিভিন্ন স্থানের বেপারীদের কাছে তা বিক্রি করি।

ভালুকার বিরুনিয়া গ্রামের এক নারী কারিগর আকলিমা খাতুন জানান, প্রতিদিন তিনি ১০০ থেকে ১৩০টি পাখা তৈরি করতে পারেন। পরিবারে একাধিক কর্মক্ষম সদস্য থাকলেও অর্থের অভাবে তারা উপকরণ কিনতে না পেরে হাতপাখার উৎপাদন বাড়াতে পারছেন না। অনেকেই এনজিও থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। এতে তাদের লাভের পরিমাণ কম হচ্ছে। 


গফরগাঁওয়ের বলদীগ্রামের হাতপাখা ব্যবসায়ী আকবর আলী খান জানান, প্রায় ৩০/৩৫ বছর আগে জামু নামে এক মহিলা তাদেরকে এ হাতপাখা তৈরির কাজ শেখায়। সেই থেকে এ গ্রামের মানুষ পাখা তৈরি শুরু করে। একে অন্যের দেখা দেখি গ্রামের সব বাড়িতেই এখন হাতপাখা তৈরি করছে। সচ্ছল ও অসচ্ছল সব পরিবারেই এ পাখা তৈরি হয়। তবে বর্তমানে পাখা তৈরির উপকরণের দাম বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন খরচও বেশি হচ্ছে তাদের। 

ঢাকা থেকে হাতপাখা কিনতে আসা বেপারী সলিম উদ্দিন জানান, তিনি এই এলাকা থেকে হাতপাখা কিনে মিরপুরে নিয়ে পাইকারি বিক্রি করেন। তাছাড়া মেলা, বিভিন্ন হাটবাজার ও হাসপাতালগুলোতে এখানকার পাখার প্রচুর চাহিদা রয়েছে। 


google.com, pub-6631631227104834, DIRECT, f08c47fec0942fa0