আর্কাইভ কনভাটার ঢাকা, সোমবার, মে ২০, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
Logo

Junta forces are moving

বিদ্রোহীদের আক্রমণে ক্রমাগত চাপের মুখে মিয়ানমার সরকার

Bijoy Bangla

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ০৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪, ১১:১৯ পিএম

বিদ্রোহীদের আক্রমণে ক্রমাগত চাপের মুখে মিয়ানমার সরকার
তুমব্রু সীমান্ত দিয়ে প্রবেশ করে বিজিপি সদস্যরা। সংগৃহীত ছবি

মিয়ানমারে চলমান যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশ লাগোয়া সীমান্ত পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটেছে। মঙ্গলবার তুমব্রু সীমান্তের বাংলাদেশ অভ্যন্তরে আরও একটি মর্টার শেল এসে পড়েছে। অনুরূপভাবে উখিয়ার ১৪ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পেও সীমান্তের ওপার থেকে বুলেট এসে পড়েছে। নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু ও ঘুমধুমের পর উখিয়ার ওপারে ঢেঁকিবুনিয়া পর্যন্ত ব্যাপক গোলাগুলি ছড়িয়ে পড়েছে। তবে মঙ্গলবার কোনো মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি।

উখিয়ায় দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে আশ্রয় কেন্দ্র ঘোষণা করা হয়েছে। নাইক্ষ্যংছড়িতে ৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। ঘুমধুম, তুমব্রু ও উখিয়ার সীমান্তবর্তী বিস্তীর্ণ এলাকার লোকজন ঘরবাড়ি ছাড়া হয়েছে। সীমান্তের বিস্তীর্ণ এলাকা অস্ত্রের ঝনঝনানিতে কাঁপছে। দিশেহারা হয়ে আছে এলাকার হাজার হাজার মানুষ। 

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে মিয়ানমারের বিদ্রোহী আরাকান আর্মির যোদ্ধাদের প্রতিরোধের মুখে টিকতে না পেরে মঙ্গলবার আরও বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি) সদস্য বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। তিনদিনে পালিয়ে আসার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৬৪ জনে। বেসরকারিভাবে এ সংখ্যা আরও বেশি বলে ধারণা করা হচ্ছে। এদের মধ্যে শুধু সে দেশের বিজিপি নয়, রয়েছেন সেনা সদস্য, পুলিশ, ইমিগ্রেশন পুলিশ ও অন্যান্য সংস্থার সদস্যরা।

এদের নিরস্ত্রীকরণ করে বিজিবি হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। সোমবারের গুলিবিদ্ধ ৪ বিজিপিকে রাতেই চমেক হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। ঘুমধুম ও তুমব্রু সীমান্ত এলাকায় চরম আতঙ্কজনক পরিস্থিতিতে সেখানকার ছোট বড় সবকটি বাজার ও দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। জোরদার করা হয়েছে সীমান্তে বিজিবি টহল।  

সীমান্তের সূত্রগুলো জানিয়েছে, মঙ্গলবার তুমব্রু সীমান্তে মিয়ানমার সেনাদের ছোড়া গুলিতে আরও ৪ বাংলাদেশী সাধারণ নাগরিকসহ ৮ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।  অপর চারজনের পরিচয় বিকেল পর্যন্ত জানা যায়নি। এদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। গত তিনদিন ধরে ঘুমধুম, তুমব্রু, ঢেঁকিবুনিয়ার  সীমান্ত অঞ্চলে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।

নবনিযুক্ত বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী আজ সীমান্ত এলাকা পরিদর্শনে আসছেন। মঙ্গলবার টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর তিনি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, মিয়ানমারে বিদ্রোহীদের চলমান সংঘর্ষের কারণে বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকার পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। 

এদিকে, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম সীমান্তের ওপারে তীব্র সংঘর্ষের জের হিসেবে সেখানকার চাকমা সম্প্রদায়ের কয়েকশ’ সদস্য ও রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সদস্যরা সোমবার এপারে চলে আসার জন্য জড়ো হয়। কিন্তু মঙ্গলবার তারা সেখান থেকে সরে যাওয়ার খবর রয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন কক্সবাজারের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মো. মিজানুর রহমান।  যে কোনো অবস্থায় এদের অনুপ্রবেশ ঠেকানোর সকল ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। 

সীমান্ত পরিস্থিতিতে গত সোমবার বাংলাদেশীসহ ২ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বাংলাদেশে নিযুক্ত মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে তলব করে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে। সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, মিয়ানমারের আভ্যন্তরীণ সংঘাত বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকা পর্যন্ত গড়াচ্ছে। সীমান্তে মর্টার শেল, গোলা আমাদের এলাকায় এসে পড়ছে। তবে আমরা কোনো যুদ্ধে জড়াতে চাই না। নৌ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, যে কোনো সংঘাত পরিস্থিতি ঝুঁকি তৈরি করে। সেখানকার সংঘাতের প্রভাব যদি আমাদের দেশে আসে তাহলে চুপ করে বসে থাকা যাবে না।  

এদিকে, মিয়ানমারের বিভিন্ন রাজ্যে বিদ্রোহীদের আক্রমণে ক্রমাগত চাপের মুখে মিয়ানমারের জান্তা সরকার। বিদ্রোহীদের কাছে উত্তর-পশ্চিমের বিস্তীর্ণ অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে মিন অং হ্লাইংয়ের জান্তা বাহিনী। সীমান্তে আরাকান আর্মির (এএ) হামলায় পিছু হটছে তারা। এরই মধ্যে একে একে সেখানকার সব সামরিক ঘাঁটি চলে যাচ্ছে আরাকান আর্মির দখলে।

গত রবিবার বাংলাদেশ সীমান্তের কাছাকাছি মিয়ানমার বর্ডার গার্ড ফোর্সের আরও একটি ঘাঁটিতে (তুমব্রু) আক্রমণ চালায় আরাকান আর্মি। সোমবার ঢেঁকিবুনিয়া ও সর্বশেষ মঙ্গলবার চাকমাকাটা ঘাঁটি দখলে নিয়েছে আরাকান আর্মি। তিনদিনে ওই তিনটি চৌকিতে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে নেন তারা। মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি) সদস্যরা মঙ্গলবার সকালে রহমতেরবিল ও আঞ্জুমানপাড়া পয়েন্ট দিয়ে বাংলাদেশে এসে বিজিবির আশ্রয় নিয়েছে।

আরাকান আর্মির হামলার পর পরিস্থিতি সামলাতে না পেরে বাংলাদেশ সীমান্তের রহমতেরবিল ও আঞ্জুমানপাড়া পয়েন্ট দিয়ে অনুপ্রবেশ করে বিজিপি সদস্যরা। এরই মধ্যে এভাবে পালিয়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছে মিয়ানমারের ১৪৮ জন বিজিপি সদস্য। এদের মধ্যে ১১১ জন রহমতেরবিল ও ৩৮ জন বিজিপি আঞ্জুমানপাড়া পয়েন্ট দিয়ে অনুপ্রবেশ করে বাংলাদেশে। এসব বিজিপিকে রহমতেরবিল সাইক্লোন শেল্টারে হেফাজতে রেখেছে বিজিবি।

এর আগে ১১৫ জন বিজিপি সদস্য পালিয়ে এসেছিল বাংলাদেশে। তবে বিজিবির অনুপ্রবেশ থামছেই না। স্থানীয় বাসিন্দারা ৪টি বন্দুকসহ ২৩ রোহিঙ্গা ক্যাডারকে আটক করে ইউপি চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরীর জিম্মায় দিয়েছে। ওই আরএসও ক্যাডাররা মিয়ানমার থেকে অনুপ্রবেশ করে গ্রামে ঢুকে পড়ছে দেখে গ্রামবাসী বাধা দেয়। সন্ত্রাসীরা গ্রামবাসীর ওপর হামলে পড়লে স্থানীয়রা তাদের ঘেরাও করে ইউপি চেয়ারম্যানকে খবর দেয়। 

সূত্র জানিয়েছে, ইতোমধ্যে তুমব্রু, সোমবার ঢেঁকিবুনিয়া ও মঙ্গলবার চাকমাকাটা বিজিপি চৌকি দখলে নিয়েছে আরাকান আর্মির সদস্যরা। তুমব্রু ঘুমধুমের পর এবার রহমতেরবিল ও আঞ্জুমানপাড়া সীমান্তে উত্তপ্ত অবস্থা বিরাজ করছে। বান্দরবানের জেলা প্রশাসক তুমব্রু-ঘুমধুম সীমান্ত থেকে স্থানীয় বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে সরে যেতে আহ্বান জানিয়েছেন। মঙ্গলবার সকাল থেকে দলে দলে লোকজন সীমান্ত এলাকার বসতি ত্যাগ করছে। আশ্রয় নিতে শুরু করেছে সীমান্ত থেকে দূরবর্তী এলাকায়।

সূত্র মতে, পিপলস ডিফেন্স ফোর্সেস (পিডিএফস) ও অন্যান্য সশস্ত্র  গোষ্ঠীর আক্রমণে দিশেহারা জান্তা সরকার। ক্রমেই জান্তা বাহিনীর ওপর চড়াও হচ্ছে মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠীরা। তিনদিনের মরণকামড়ে জান্তা বাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ অনেক চৌকি ও সামরিক ঘাঁটি দখলে নিয়েছে বিদ্রোহীরা। আর এ লড়াইয়ে নিহত হয়েছে ৬২ জান্তা সেনা।

অনুপ্রবেশকালে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর ২৩ সদস্য অস্ত্রসহ আটক ॥ উখিয়ার সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশকালে মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর ২৩ সদস্যকে অস্ত্রসহ আটক করেছে স্থানীয়রা। এসময় তাদের বাধা দিতে গিয়ে বোমা হামলায় আহত হয়েছেন কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা। মঙ্গলবার বেলা ১২টায় উখিয়ার পুঁটিবনিয়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। পরে তাদের পুলিশের হাতে তুলে দেয়।

পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম গফুর চৌধুরী বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, মিয়ানমারের সরকারি বাহিনী ও বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির (এএ) মধ্যে চলমান সংঘর্ষের কারণে তারা বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ক্যাম্পে আশ্রয় নিতে আসছিল। এসময় তাদের দেখতে পেয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তাদের লক্ষ্য করে বোমা হামলা করে। এ সময় কয়েকজন স্থানীয় আহত হয়েছেন। পরে স্থানীয়রা ধাওয়া করে তাদের আটক করে। তাদের পুলিশের হেফাজতে দেওয়া হয়েছে।

মিয়ানমারের সীমান্ত ঘেঁষে কয়েকজন যুবক একটি ডিঙি নৌকা করে বাংলাদেশের দিকে আসছিল। প্রথমে তাদের মিয়ানমারের পুলিশ মনে করা হলেও কিন্তু কাছে এলে দেখা যায় তারা মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সদস্য। 

আবারও মিয়ানমারের মর্টারশেল এসে পড়ল বাংলাদেশে ॥ আবারও মিয়ানমার থেকে ছোড়া মর্টারশেল এসে পড়েছে নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুমে। এ নিয়ে ঘুমধুম সীমান্তে আতঙ্ক বিরাজ করছে। মঙ্গলবার সকাল ৮টায় মিয়ানমার থেকে ছোড়া মর্টারশেল এসে পড়ে ঘুমধুম মধ্যমপাড়া বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলামের বাড়ির পাশে। এ সময় সৈয়দ নুর সিকদারের বাড়ির জানালার কিছু অংশ ফেটে গেছে।

তবে এতে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। মঙ্গলবার সকালে তুমব্রু ও ঘুমধুমের মধ্যমপাড়া ঘুরে দেখা গেছে, কয়েকজন পুরুষ ছাড়া কেউ নেই। নারী-শিশুরা গ্রাম ছেড়ে অন্যত্র অবস্থান নিয়েছে। সবার মধ্যে আতঙ্ক কাজ করছে। ঢেঁকিবুনিয়া সীমান্ত চৌকি দখলকে কেন্দ্র করে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরকান আর্মি (এএ) ও মিয়ানমার সেনাবাহিনীর মধ্যে ব্যাপক গোলাগুলি ও মর্টারশেল নিক্ষেপ হচ্ছে। এতে কেঁপে কেঁপে উঠছে বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকার ৬টি গ্রাম।  

সীমান্তে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সতর্ক বিজিবি ॥ মিয়ানমারে গোলাগুলির ঘটনায় প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের অপেক্ষায় আছেন দেশটির বিজিপি, চাকমা, রোহিঙ্গাসহ সহস্রাধিক লোক। তবে তাদের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সীমান্তে সতর্ক অবস্থায় আছে বিজিবি।

টানা কয়েকদিনের ব্যাপক গোলাগুলির ঘটনায় সীমান্ত এলাকায় লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। আতঙ্কে কোনার পাড়া, মাঝের পাড়া, বাজার পাড়া জন মানবশূন্য হয়ে পড়েছে। গ্রামে কয়েকজন পুরুষ ছাড়া নারী ও শিশুরা নিজেদের মতো করে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে গেছে।

বান্দরবানে নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুমে মিয়ানমার জান্তা বাহিনীর ছোড়া মর্টার শেল এসে পড়ল ঘুমধুম উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশে একটি বাড়ির আঙ্গিনায়। মঙ্গলবার ভোরে ঘুমধুম ইউপির ৪ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যমপাড়ায় সৈয়দ নূরের বাড়ির সামনে এসে মর্টারশেলটি পড়ে। এতে কোনো হতাহত হয়নি। এ ছাড়া প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঘুমধুম তুমব্রু সীমান্তের পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে আশঙ্কায় সীমান্ত এলাকার লোকজনকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি ঘুমধুম ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ১ নম্বর উত্তর ঘুমধুম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে আশ্রয় শিবির ঘোষণা করা হয়েছে।

সূত্রে জানা যায়, ঘুমধুম তুমব্রু সীমান্ত, থাইংখালি সীমান্ত ও টেকনাফের হোয়াইক্যং দিয়ে মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির লাগাতার হামলায় টিকতে না পেরে এ পর্যন্ত পালিয়ে এসেছে ২৩১ জান্তা সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্য। এসব সদস্যরা দফায় দফায় বাংলাদেশে ঢুকে পড়ে। পরে তাদের বিজিবির হেফাজতে নেওয়া হয়। এর মধ্যে বিজিপিসহ মিয়ানমার সরকারের অন্যান্য বাহিনীর সদস্যও রয়েছে এবং তাদের মধ্যে কয়েকজন রক্তাক্ত ছিল বলে জানা গেছে। এদের নিরস্ত্র করে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়েছে বিজিবি।

বিজিবি সূত্রে জানা গেছ, মিয়ানমারে সংঘাতের জেরে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার সীমান্ত এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এখন পর্যন্ত মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপির ১১৪ জন সদস্য অস্ত্রসহ বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) তাদের নিরস্ত্রীকরণ করে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়েছে। বিজিবির পক্ষ থেকে আহত ১৫ জন বিজিপি সদস্যের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে ৯ জনকে। এদের মধ্যে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ৪ জনকে রেফার করা হয়েছে। তাদের বিজিবি নিরাপত্তার মাধ্যমে চট্টগ্রামের উদ্দেশে নিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

অন্যদিকে, গত সোমবার বিকেলে টেকনাফের হোয়াইক্যং উলুবনিয়া পয়েন্টে রোহিঙ্গারা অনুপ্রবেশের চেষ্টা করেন। পরে তাদের পুশব্যাক করে (বিজিবি)। অনুপ্রবেশের চেষ্টাকারী মিয়ানমারের নাগরিকরা হলেন, মংডু জেলার ভৌগনী গ্রামের হোসেন আলীর ছেলে মো. রহমত উল্লাহ (৩০), তার স্ত্রী সাজেদা বেগম (২৫), ছেলে হায়াতুন নূর (৫), জোনাইদ (৩) ও মেয়ে আমাতনুর (দেড় বছর)।

ঘুমধুম ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. আনোয়ার হোসেন জানান, ঘুমধুম ইউনিয়নের বাইশপারি তঞ্চঙ্গ্যা পাড়া থেকে ২০ পরিবার, ভাজাবুনিয়া তঞ্চঙ্গ্যা পাড়া থেকে ৩০ পরিবার, তুমব্রু কোনার পাড়া থেকে ৩০ পরিবার, ঘুমধুম পূর্ব পাড়া থেকে ২০ পরিবার, তুমব্রু হিন্দু পাড়া থেকে ১০ পরিবার নিরাপদ আশ্রয়ে পাশবর্তী কক্সবাজার উখিয়ার বিভিন্ন এলাকার আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে গত সোমবার বিকেল থেকেই আশ্রয় নিয়েছেন।

ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এ.কে.এম জাহাঙ্গীর আজিজ জানান, আজকে টানা ৬ দিন ধরে সীমান্তে মিয়ানমারের ওপারে গোলাগুলির কারণে আতঙ্কে আছে এলাকাবাসী। গত রাতব্যাপী সীমান্তের ওপারে গোলাগুলির আওয়াজ শোনা গেছে। সীমান্ত পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে এ আশঙ্কায় ঘুমধুম ইউনিয়নের ৭ নাম্বার ওয়ার্ডের ১ নম্বর উত্তর ঘুমধুম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে জনগণের জন্য আশ্রয় শিবির হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে, সীমান্ত ঘেঁষা লোকজনকে সেখানে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি। 

বান্দরবানের পুলিশ সুপার সৈকত শাহীন জানান, গত সোমবার ঘুমধুম এলাকায় মর্টরশেল বিস্ফেরণে নিহতের ঘটনায় নিয়মিত মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং এ বিষয়ে তদন্ত চলমান রয়েছে। এ ছাড়া সর্বশেষ তথ্য পাওয়া পর্যন্ত মিয়ানমার থেকে আশ্রয়ের জন্য ১১৩ জন বিজিপি সদস্য ও একজন মিয়ানমারের নাগরিকসহ মোট ১১৪ জন বাংলাদেশে বিজিবির কাছে আশ্রয় নিয়েছে। 

কক্সবাজার বিজিবির রিজিয়ন কমান্ডার বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মোরশেদ আলম জানান, মিয়ানমার জান্তা বাহিনীর মর্টারশেল বাংলাদেশের ভুখন্ডের বসতবাড়িতে বিস্ফোরণে দুইজন নিহতের ঘটনায় বডারগার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এর পক্ষ থেকে মিয়ানমারকে কড়া প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া জান্তা সরকারের সীমান্তরক্ষীদের ফেরত পাঠানোর বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পর্যায়ে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানান তিনি।

আহত ৪ বিজিপি সদস্য চমেক হাসপাতালে ॥ মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) আহত ৪ সদস্যকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। গত সোমবার রাতে তাদের বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যরা হাসপাতালে নিয়ে আসেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেন চমেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তারা হলো কিয়া থান সিন (২৯), কিন মং (২০), ইউ পিও (৪৮) এবং  লা নি মং (৩০)। এ চারজন অপারেশন পরবর্তী হাসপাতালের ক্যাজুয়ালিটি ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছে। 

এদিকে বিজিবি দক্ষিণ পূর্ব রিজিয়ন সদর দপ্তর জানায়, মিয়ানমার থেকে আসা বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) আহত ৪ সদস্য কক্সবাজার সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছিল তাদের চমেক হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। 

বিষয়টি নিশ্চিত করে বিজিবি ৮ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাহেদ মিনহাজ সিদ্দিকী জানান, মিয়ানমারের বর্তমান সীমান্তবর্তী পরিস্থিতির কারণে তাদের বিজিপি সদস্যও আমাদের বিজিবির কাছে আশ্রয় নিয়েছে। স্থানীয়ভাবে তাদের চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। তবে আহতদের মধ্যে চারজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক ছিল। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ এবং মানবিক কারণে ওই ৪ বিজিপি সদস্যকে উন্নত চিকিৎসার জন্য কক্সবাজার হাসপাতাল থেকে চমেক হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। তাদের নিরাপত্তার স্বার্থে হাসপাতালে বিজিবি সদস্যরা প্রহরায় আছে।

google.com, pub-6631631227104834, DIRECT, f08c47fec0942fa0