আর্কাইভ কনভাটার ঢাকা, সোমবার, মে ২০, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
Logo

Fuel oil prices may fall

এ মাসেই দেশে জ্বালানি তেলের দাম কমতে পারে

Bijoy Bangla

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ০৩ মার্চ, ২০২৪, ১২:০১ পিএম

এ মাসেই দেশে জ্বালানি তেলের দাম কমতে পারে
___প্রতীকী ছবি

এ মাসেই দেশে জ্বালানি তেলের দাম কমতে পারে। বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত ও পরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম কম। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমলে সংগত কারণেই দেশে কমবে। বাড়লে দেশে বাড়বে। এজন্য বিশ্ববাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে দেশে জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয় করতে প্রথমবারের মতো গত বৃহস্পতিবার সরকার স্বয়ংক্রিয় মূল্য নির্ধারণ নির্দেশিকার প্রজ্ঞাপন জারি করে। 

চলতি মাস থেকে এ সমন্বয় শুরু হবে। এ সপ্তাহেই নতুন পদ্ধতিতে দাম নির্ধারণ করে মূল্য তালিকা প্রকাশ করবে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)।

খাত-সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্ববাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে দেশে জ্বালানি তেলের দাম নির্ধারণের উদ্যোগ এটাই প্রথম। এটা সবার জন্য ভালো হয়েছে। ফলে এ খাতের ভর্তুকি থেকে বেরিয়ে আসা যাবে। তারা বলেন, দাম ঘোষণার পর বোঝা যাবে প্রকৃত অবস্থা। তবে ফর্মুলাতে যেসব ব্যয়ের কথা বলা হচ্ছে, সেটা ট্রান্সপারেন্ট থাকতে হবে।

বিপিসির পরিচালক (অর্থ) ও যুগ্ম সচিব কাজী মুহাম্মদ মোজাম্মেল হক সংবাদমাধ্যমকে জানান, স্বয়ংক্রিয় মূল্য নির্ধারণ নির্দেশিকার প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। এতে কীভাবে আমরা মূল্য নির্ধারণ করব, সেই ফর্মুলা প্রকাশ করা হয়েছে। বাস্তবায়ন নিয়ে কাজ হচ্ছে। তবে বিষয়টি একেবারেই নতুন হওয়ায় মূল্য ঘোষণার আগে কিছুই বলা যাবে না। বিষয়টি নিয়ে জ্বালানি বিভাগ কাজ করছে।

জ্বালানি বিভাগ ও বিপিসির একাধিক কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে জানিয়েছে, এ সপ্তাহেই বিশ্ববাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে প্রথমবারের মতো মূল্য নির্ধারণ করা হবে। যেহেতু আন্তর্জাতিক বাজারে বর্তমানে জ্বালানি তেলের দাম কম, সে কারণে দেশের বাজারে কমবে। কিন্তু কত কমবে, তা এখনো ঠিক হয়নি। এ নিয়ে কাজ চলছে।

রয়টার্সের তথ্যানুযায়ী, বর্তমানে বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল ব্যারেলপ্রতি ৮০ মার্কিন ডলার। আর পরিশোধিত ডিজেলের দাম ১০৬ মার্কিন ডলার। গত সপ্তাহে আন্তর্জাতিক বাজারে ৩ শতাংশ কমেছে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম। পরিশোধিত তেলের দামও কমেছে। 

এ সপ্তাহের শুরুতে গতকাল আইসিই ফিউচারস ইউরোপে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের আন্তর্জাতিক বাজার আদর্শ ব্রেন্টের দাম ২ ডলার ৫ সেন্ট কমেছে। প্রতি ব্যারেলের মূল্য স্থির হয়েছে ৮১ ডলার ৬২ সেন্টে। অন্যদিকে নিউইয়র্ক মার্কেন্টাইল এক্সচেঞ্জে (নিমেক্স) মার্কিন বাজার আদর্শ ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েটের (ডব্লিউটিআই) দাম ২ ডলার ১২ সেন্ট বা ২ দশমিক ৭ শতাংশ কমেছে। প্রতি ব্যারেলের মূল্য স্থির হয়েছে ৭৬ ডলার ৪৯ সেন্টে। পূর্বাভাস অনুযায়ী, বিশ্ববাজারে পরিশোধিত ও অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম সামনে আরও কমবে।

জ্বালানি ও টেকসই উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ইজাজ হোসেন এ বিষয়ে জানান, জ্বালানি তেলের মূল্য নির্ধারণের যে ফর্মুলা দেওয়া হয়েছে, সেখানে বিপিসির নিজস্ব অপারেশনাল ব্যয়, আর্থিক, প্রশাসনিক ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয়সহ আরও কিছু খরচের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এসব ব্যয়ে স্বচ্ছ থাকতে হবে। তাহলে এ উদ্যোগটি সবার জন্য মঙ্গলজনক হবে। তিনি বলেন, এখন ডিজেল প্রতি লিটার ১০৯ টাকা। বিশ্ববাজারের সঙ্গে সমন্বয় করলে ডিজেলের দাম কমার কথা। যদি না কমে, তাহলে আমি মনে করি ফর্মুলা ঠিক নয়।

জানা গেছে, গত অর্থবছরে (২০২২-২৩) জ্বালানি তেল বিক্রি বাবদ আয় বেড়েছে বিপিসির। যাবতীয় পরিচালন ও আর্থিক ব্যয় বাদ দিয়ে কর-পূর্ববর্তী মোট মুনাফা হয় ৬ হাজার ২৯৬ কোটি টাকা। আর কর-পরবর্তী নিট মুনাফা হয়েছে ৪ হাজার ৫৮৬ কোটি টাকা। এ সময় সরকারি কোষাগারে আমদানি শুল্ক, ভ্যাট, লভ্যাংশ, আয়করসহ বিভিন্ন খাতে মোট ১৫ হাজার ৪৯২ কোটি ৬৫ লাখ টাকা জমা দিয়েছে বিপিসি।

বিপিসির সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, গত অর্থবছরে সংস্থাটি জ্বালানি তেল বিক্রি করেছে ৭৩ লাখ ৪৬ হাজার টন। মোট আয় হয়েছে ৭৯ হাজার ১৮৭ কোটি ৫১ লাখ টাকা। এ সময় জ্বালানি তেল আমদানি, প্রক্রিয়াজাতসহ সংস্থাটির বিক্রীত পণ্যের ব্যয় (কস্ট অব গুড সোল্ড) ছিল ৭৩ হাজার ১৮৮ কোটি টাকা। সে অনুযায়ী গত অর্থবছরে সংস্থাটির মোট লাভ হয়েছে ৬ হাজার ৪৩ কোটি টাকা। এর সঙ্গে অন্যান্য আয় যোগ করে এবং তা থেকে পরিচালন ও আর্থিক অন্যান্য ব্যয় বাদ দিয়ে বিপিসির কর-পূর্ববর্তী মুনাফা দাঁড়ায় ৬ হাজার ২৯৬ কোটি টাকায়।

বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় গত বছরের ৫ আগস্ট বিশেষ আইনের আওতায় জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। সেই সময় ডিজেল ও কেরোসিনের দাম ৮০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১১৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়। আর অকটেনের দাম ৮৯ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৩৫ টাকা আর পেট্রোলের দাম ৮৬ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৩০ টাকা করা হয়। যদিও পরে কিছুটা কমিয়ে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম ১০৯ টাকা, অকটেনের দাম ১৩০ এবং পেট্রোলের দাম ১২৫ টাকা নির্ধারণ করে জ্বালানি বিভাগ, যা এখনো কার্যকর রয়েছে। বর্তমানে ডিজেলে বিপিসি লিটারপ্রতি এক টাকার বেশি লাভ করছে। অন্যগুলোতে আরও বেশি। এখানে উল্লেখ্য, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের শর্তানুযায়ী, আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তেলের দাম নির্ধারণের পদ্ধতি চালু করার উদ্যোগ নেয় সরকার। গত বছর এ উদ্যোগ নিলেও বাস্তবায়ন করা হচ্ছে এ মাস থেকে। সরকারের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী দেশে বর্তমানে অকটেন-ডিজেলের খুচরা দামের ব্যবধান লিটারপ্রতি ২১ টাকা থেকে কমে ১০ টাকা করা হয়েছে।

বিপিসি সূত্র থেকে জানা গেছে, বর্তমানে দেশে ব্যবহৃত মোট জ্বালানি তেলের ৭৩ দশমিক ১১ শতাংশ ডিজেল, পেট্রোল ৫ দশমিক ৮৬ এবং অকটেন ৪ দশমিক ৭৮ শতাংশ। বর্তমানে দেশে বছরে জ্বালানি তেলের চাহিদা রয়েছে ৭০ থেকে ৭২ লাখ টন। এর মধ্যে ডিজেলের চাহিদা ৪৮ থেকে ৪৯ লাখ টন, যার ৮০ শতাংশ সরকার আমদানি করে। বর্তমানে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি হচ্ছে। আর পরিশোধিত তেল আমদানি হয় সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, আরব আমিরাত, কুয়েত, থাইল্যান্ড ও ভারত থেকে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর সাশ্রয়ী দামে ভারত থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে ডিজেল আমদানি হচ্ছে। এ ছাড়া আরও কয়েকটি দেশের সঙ্গে ডিজেল আমদানি নিয়ে আলোচনা চলছে। বেসরকারি খাতের বিভিন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্রের জ্বালানি তেল ডিজেল ও ফার্নেস অয়েল আমদানি করা হয়। এ তেল নিজ বিদ্যুৎকেন্দ্র ছাড়া অন্য কোথাও ব্যবহারের অনুমোদন নেই।

google.com, pub-6631631227104834, DIRECT, f08c47fec0942fa0