আর্কাইভ কনভাটার ঢাকা, সোমবার, মে ২০, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
Logo

Selling cigarettes at high prices

মজুদ বৃদ্ধি আর অতিরিক্ত দামে সিগারেট বিক্রিতে ব্যয় বাড়ছে ভোক্তাদের

Bijoy Bangla

শাহানুর রহমান রানা, রাজশাহী

প্রকাশিত: ০৯ মে, ২০২৪, ০৪:০৪ এএম

মজুদ বৃদ্ধি আর অতিরিক্ত দামে সিগারেট বিক্রিতে ব্যয় বাড়ছে ভোক্তাদের
মজুদ বৃদ্ধি আর অতিরিক্ত দামে সিগারেট বিক্রিতে ব্যয় বাড়ছে ভোক্তাদের, রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার । প্রতীকী ছবি

অন্যান্য বছরের ন্যায় আবারো রাজশাহীতে শুরু হয়েছে সিগারেট বা তামাকজাত পণ্যের মজুদ বৃদ্ধির পায়তারা। একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ি পরবর্তী বাজেটকে ঢাল করে নিজেদের পকেট ভারি করার অপচেষ্টায় রত রয়েছে চলতি মাসের শুরু থেকেই। বেশিমূল্যে বিক্রি করার এই অলিখিত প্রতিযোগিতা বিরাজ করছে অসাধু মজুদদারদের মাঝে। অতিরিক্ত পণ্য মজুদ করে খোলাবাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরির মাধ্যমে যে যার মতো বেশি মূল্যে পণ্য বিক্রির বিষয়গুলো অনৈতিক ও অপরাধ বলে মন্তব্য সচেতন ভোক্তাদের। অতিরিক্ত মজুদ ও প্যাকেটের গায়ে লেখা দামের চাইতে বেশিমূল্যে বিক্রি করার বিষয়টিকে দন্ডনীয় অপরাধ বলছেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর রাজশাহী জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মাসুম আলী।

অনৈতিক পন্থায় পকেটভারির এই প্রবণতার কারণে প্রত্যক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে ক্রেতা ও ভোক্তারা। আর অন্যদিকে, পরোক্ষাভাবে সরকার হারাচ্ছে হাজার হাজার কোটি টাকার সম্ভাব্য রাজস্ব বলে মন্তব্য সংশ্লিষ্টদের। 

নগরীর বিভিন্ন এলাকার খুচরা বিক্রেতা ও ভোক্তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে সরেজমিনে গিয়ে মেলে সত্যতাও। বিভিন্ন মোড়ের খুচরা বিক্রেতা ও ক্রেতার সাথে কথা বলে জানা গেছে, সিগারেট কোম্পানীর গাড়ি (ভ্যান) থেকে চাহিদার বিপরীতে সর্বোচ্চ এক-চতুর্থাংশ পণ্য পাচ্ছে খুচরা বিক্রেতারা। তাই ক্রেতা ও ব্যবসা ধরে রাখার জন্য বাধ্য হয়েই মুদিখানার বড়বড় দোকান থেকে বেশি দামে কিনতে হচ্ছে বিভিন্ন ব্রান্ডের সিগারেট। যার কারণে, ক্রেতারাও বাধ্য হচ্ছেন প্যাকেটমূলের চাইতে অতিরিক্ত দামে কিনতে। কোম্পানীর মার্কেটিং পলিসি অনুযায়ী সর্বপ্রথমে খুচরা বিক্রেতাদের চাহিদা পূরণ করার কথা থাকলেও সেটির ব্যত্যয় ঘটিয়ে মজুদ বাড়ানো হচ্ছে পাইকারদের দোকানে। আর সেটিকে ঢাল করে তারা খুচরা বাজারে সৃষ্টি করছেন কৃত্রিম সংকট।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে নগরীর দোশরমন্ডল মোড়, শিরোইল মটপুকুর, টিকাপাড়া, সাগড়পাড়া, দড়িখরবনা, রেলগেট, শালবাগান, নওদাপাড়া এলাকার ছোট ও মাঝারি ধরনের খুচরা ব্যবসায়িরা অভিযোগ করে বলেন, কোম্পানীর প্রতিনিধির কাছে ২০ প্যাকেট চাইলে তারা দিচ্ছে ৪-৫ প্যাকেট। খুচরা বিক্রেতাদের দেয়া তথ্য মতে, সিগারেটের প্যাকেটের গায়ে লিখা থাকা মূল্যের চাইতে গড়ে ৫ থেকে ৬ টাকা করে বেশি রাখছে প্রাইকারী ব্যবসায়িরা। এপ্রিল মাসের শেষদিন পর্যন্ত খুচরামূল্য ঠিক থাকলেও মে মাস শুরু হতেই উর্দ্ধগতির ছোঁয়া লাগে প্রতিটি ব্রান্ডের পণ্যের সাথে। 

সপ্তাহখানেক আগে বেনসন ও মার্লবোরোর মতো প্রিমিয়াম সেগমেন্টের বিশ শলাকা বিশিষ্ট সিগারেটের প্যাকেটের খুচরা মূল্য ছিল ৩০৯ টাকা ৯৮ পয়সা। খুচরা বিক্রেতারা এখন ওই একই প্যাকেট প্রাইকারদের কাছ থেকে কিনছেন ৩১৬ টাকায়। অর্থ্যাৎ খুচরা বিক্রেতারা প্রতি শলাকা সিগারেট ১৫ টাকা ৫০ পয়সার পরিবর্তে কিনছেন ১৫ টাকা ৮০ পয়সা দিয়ে। সেহিসেবে প্রতি শলাকা সিগারেটে খুচরা বিক্রেতাদের অতিরিক্ত ব্যয় ত্রিশ পয়সা হলেও ক্রেতাদের পকেট থেকে যাচ্ছে এক টাকা (একশ পয়সা) করে। অর্থ্যাৎ প্যাকেটের গায়ে লিখা থাকা খুচরা মূল্যের চাইতে একজন ক্রেতাকে ব্রান্ড ভেদে অতিরিক্ত গুণতে হচ্ছে দশ থেকে বিশ টাকা করে। প্রিমিয়াম, উচ্চ ও মাঝারি সেগমেন্টের দাম বেড়েছে পাইকারি ব্যবসায়িদের কারণে বলে মন্তব্য ক্রেতাদের। একইভাবে গোল্ডলীফ সিগারেটের বিশ শলাকার প্যাকেটমূল্য ২৩৫ টাকা ৯৮ পয়সা লিখা থাকলেও বর্তমানে সেটির পাইকারি বিক্রিদর ২৪০-২৪২ টাকা। ক্যামেল ব্রান্ডের প্যাকেটমূল্য ১৩৪ টাকা ৯৮ পয়সা হালেও সেটি বিক্রি হচ্ছে ১৩৯ টাকায়। স্টার ব্রান্ডের প্যাকেট মূল্য ১৩৯ টাকা ৯৮ পয়সা লিখা থাকলেও ৪-৫ টাকা বেশিতে সেটি বিক্রি হচ্ছে ১৪৭ টাকায়। লাকি স্ট্রাইক ব্রান্ডের বিশ শলাকার প্যাকেটমূল্য ১৬৮ লিখা থাকলেও সেটি বিক্রি হচ্ছে ১৭৪ টাকায়। রয়েল ব্রান্ডের প্যাকেটে খুচরামূল্য ১০৭ টাকা ৯৮ পয়সা লিখা থাকলেও সেটি বিক্রি হচ্ছে ১১৫ টাকায়। ডারবি ব্রান্ডের বড় প্যাকেটে খুচরা মূল্য ৮৯ টাকা ৯০ পয়সা রিখা থাকলেও পাইকারি ব্যবসায়িরা সেটির দাম নিচ্ছে ৯৭-৯৮ টাকা বলে জানান নগরীর বিভিন্ন এলাকার খুচরা বিক্রেতারা। 

প্যাকেটে উল্লেখিত দরেই কর হিসাব করা হয় বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। খুচরামূল্যের এই তারতম্য আর অলিখিত বৃদ্ধির কারণে বড় অংকের রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার বলে মন্তব্য সংশ্লিষ্টদের। বিগত সময়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এর দেয়া একটি হিসাবকে কোড করে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, অলিখিত ও অতিরিক্ত মূল্যে খুচরা সিগারেট বিক্রির ভিত্তিতে সরকার রাজস্ব আদায় করলে পুরো অর্থবছরের হিসাবে এই অঙ্ক দাঁড়ায় প্রায় ৫,০০০ কোটি টাকা। এই অলিখিত ও নিয়মবহির্ভূত দাম বৃদ্ধির কারণে ক্রেতাদের অনুমোদিত দামের চেয়ে বেশি টাকা দিয়ে পণ্য কিনতে হচ্ছে। যার কারণে ক্রেতাদের ওপর ক্রমান্বয়ে বাড়চ্ছে মূল্যস্ফীতির চাপ বলে মন্তব্য ভোক্তাদের। 

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর রাজশাহী জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মাসুম আলীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্যাকেটের গায়ে যে দাম লিখা থাকবে তার চাইতে বেশি নিলে এটি দন্ডনীয় অপরাধ। অভিযোগ পেলে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেবো। মাঠ পর্যায়ে অভিযান পরিচালনা করার জন্য উপর মহল থেকে এখনো কোন প্রকার নির্দেশনা আসেনি। তবে, কেউ অভিযোগ করলে আমরা অবশ্যই আইনত ব্যবস্থা নেবো। 

এদিকে, ব্রিটিশ আমেরিকান ট্যোবাকো কোম্পানীর রাজশাহীর পরিবেশক মেসার্স আবুল হোসেন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত বিজনেস ম্যানেজার আব্দুস সালাম জানান, কোম্পানী কিংবা পরিবেশকের পক্ষ থেকে কোন ব্রান্ডের প্যাকেট মূল্য কিংবা খুচরা মূল্যে কোন পরিবর্তন আনা হয়নি। যারা বেশি দামে বিক্রি করছে তারা কেনো করছে সেবিষয়ে আমরা অবগত না।  পাইকারি বিক্রেতাদেরকে বেশি করে পণ্য দেবার কারণেই বাজারে নষ্ট হচ্ছে ভারসাম্য বলে মন্তব্য করলে বিজনেস ম্যানেজার বিষয়টি পাশ কাঁটিয়ে যান। 


google.com, pub-6631631227104834, DIRECT, f08c47fec0942fa0